ফিরে আসার স্বপ্ন দেখা আর ফিরে আসার মধ্যে আশমান-জমিন ফারাক। অসাধ্য সাধনের আশ্চর্য কাহিনি। কতখানি যন্ত্রণা পেলে তবে সুখী হওয়া যায়? উত্তর দিতে পারবেন একমাত্র মহম্মদ সামি।


নিজামের শহরে সূর্যোদয়? প্যাট কামিন্সের বাজি মহম্মদ সামি!
নিজামের শহরে সূর্যোদয়? প্যাট কামিন্সের বাজি মহম্মদ সামি!





হালফিলে ক্রিকেট বিনোদনের স্ক্রিপ্ট হয়ে উঠেছে ধারাভাষ্য। টানটান। রোমাঞ্চকর। ভরপুর মজাদার। বাছাই শব্দের প্রাচুর্য চমকে দেবে। যে বান্দাকে নিয়ে ধারাভাষ্যকারদের বন্দনা ইদানীং থামছেই না, তাঁর প্রত্যাবর্তন চমকে দেওয়ার মতো। ফিরে আসার স্বপ্ন দেখা আর ফিরে আসার মধ্যে আশমান-জমিন ফারাক। অসাধ্য সাধনের আশ্চর্য কাহিনি। কতখানি যন্ত্রণা পেলে তবে সুখী হওয়া যায়? উত্তর দিতে পারবেন একমাত্র মহম্মদ সামি (Mohammed Shami)। বছর দুয়েক আগের বিশ্বকাপ ফাইনালই কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ হয়ে যাচ্ছিল। বিশ্বকাপ আসেনি। তার থেকেও অনেক বেশি যন্ত্রণায় ডুবে গিয়েছিল বাংলার পেসার। এক বছরেরও বেশি সময় বাইশ গজ থেকে দূরে। যে রানআপে দৌড়েছেন চিরকাল, সেখানেই আবার পা রাখবেন, বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল অনেকেই। তিনি? একমাত্র তিনিই ভেবেছিলেন, ফিরবেন।

ফেরা-টেরা অনেক দূরের গ্রহ তখনও। চোটে আকন্ঠ ডুবে। তখনই আইপিএলের মেগা নিলাম। আশঙ্কা কি কম ছিল তাঁর? গুজরাট টাইটান্সকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন একবছর আগেই। পরের বছর রানার্স। কিন্তু সেই টিমই তাঁকে ছেঁটে ফেলেছে। নতুন টিম কি পাবেন? পেলেও দর উঠবে? কোনও টিম নিলেও ভরসা রাখবে? অবাক করে দিয়ে নিজামের শহর হয়েছিল নতুন ঠিকানা। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ১০ কোটিতে কিনেছিল তাঁকে। টাকার দর যতই চড়ুক না কেন, ভরসা তখনও আকাশ ছুঁতে পারেনি। সামি জানতেন, ক্র্যাচ বগলে হাঁটা পেসার বোলারের উপর আস্থা রাখবে না কোনও টিমই। তিনি ফিরলে হবে, জ্বললে হবে, বিপক্ষকে ভাঙলে হবেই হবে! হলও তো তাই!


চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তখনও বাস্তব হয়নি। ইংল্যান্ড সিরিজে ফিরেছেন ভারতীয় টিমে। টি-টোয়েন্টি দিয়েই প্রত্যাবর্তন হবে? কলকাতা তাঁর ঘরের মাঠ। তৈরি ছিল মঞ্চ। ম্যাচের আগের রাতে সামি শুনেছিলেন তাঁর ফিরে আসার গল্প। অপারেশনের পর দীর্ঘদিন রিহ্য়াব। বারবার ফিটনেস টেস্ট উতড়োতে না পারা। তবু নাছোড় বান্দা তিনি। না হলে কেনই বা বলা হবে, বন্দে মে দম হ্যায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নামা যেন হারানো মসনদের খোঁজে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট নিয়ে প্রমাণ করলেন নিজেকে। সামি দেখালেন, তিনি আজও প্রাসঙ্গিক। ভরসার মুখ। অভাব ঢেকে দিতে পারেন অনেকের। এমনকি, বুমরারও।

কেরিয়ারে ছানবিন চালালে ১২৭টা আইপিএল উইকেট দেখা যাবে। কেকেআর, দিল্লির হয়ে তেমন সাফল্য না পেলেও পঞ্জাব আর গুজরাটের ম্যাচ ছিলেন তিনি। ২০১৯ সাল থেকে কখনও নিরাশ করেননি। ২০২২ সালে গুজরাটকে চ্যাম্পিয়ন করার পিছনে ছিল তাঁর সুইং, গতি, স্লোয়ার, ইয়র্কার। পরের বছর ২৮ উইকেট ঝুলিতে। সোজা কথায়, সামি মানেই সাফল্য। সামি থাকা মানে প্রতিপক্ষের বাড়তি সতর্কতা, পরিকল্পনা, দুশ্চিন্তা। এই সামির কাছে এবারের আইপিএল কিন্তু অন্যরকম। দেশের জার্সিতে দেখিয়েছেন। বিশ্বের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দেখাবেন না, হয় নাকি!

হায়দরাবাদ প্যাট কামিন্সের। হর্ষল প্যাটেল গিয়েছেন। নীতীশকুমার রেড্ডি রয়েছেন। ধার বাড়াবেন মহম্মদ সামি। ক্যাপ্টেন কামিন্সের সেরা অস্ত্রও যে হবেন, তাতে আর সন্দেহ কি। কামিন্স বিদেশি হলেও জানেন তো, বন্দে মে দম হ্যায়!
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours