ছোটবেলা কেটেছে হাজারো বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়েই। ইয়াসিনের ৩ বছর বয়সেই গোটা পরিবারকে ফেলে রেখে দিয়েই চলে যান তাঁর বাবা। মায়ের হাতে পরে ভাঙা সংসারের দায়িত্ব।



 মাথার উপর ছিল না ছাদ, হারিয়েছিলেন বাবাকেও, অদম্য জেদ থেকে ডেলিভারি বয় হয়ে উঠল বিচারক


তিন বছর বয়সে হারিয়েছিলেন বাবাকে। কাজ করেছেন ডেলিভারি বয়েরও। তবে দিন শেষে পেয়েছেন মুক্তির নিঃশ্বাস। কঠিন পরিশ্রমে ডেলিভারি বয় থেকে হয়ে উঠেছেন বিচারক। ঘটনা কেরলের। গত বছরের বিচার বিভাগীয় পরিষেবা পরীক্ষায় ফলাফল এনে উত্তীর্ণ হয়েছেন ইয়াসিন শাহ মহম্মদ। গল্পটা তারই।

ছোটবেলা কেটেছে হাজারো বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়েই। ইয়াসিনের ৩ বছর বয়সেই গোটা পরিবারকে ফেলে রেখে দিয়েই চলে যান তাঁর বাবা। মায়ের হাতে পরে ভাঙা সংসারের দায়িত্ব। তাদের জীবনের মতো জ্বীর্ণ একটি বাড়িতে চলে জীবনযাপন। দুধ বিক্রি করে গোটা সংসার চালাতেন ইয়াসিনের মা।

অবশ্য পরবর্তী সেই জ্বীর্ণ বাড়ি ছেড়ে মাথার উপর পোক্ত ছাদ পান তারা। সরকারি আবাস প্রকল্পের আওতায় মেলে ঘর। তবে মাথার ছাদটা পোক্ত হলেও, পায়ের তলার মাটি তখনও শক্ত হয়নি ইয়াসিনের। তবে মায়ের সংসার চালাতে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সেই দিকটি সব সময়ই খেয়াল রাখত ইয়াসিন। নিজের জীবনে প্রায় এক দশক কাটিয়েছেন একই রুটিনে। প্রতিদিন ভোর ৪ টেয় ওঠা, তারপর খবরের কাগজ দিতে যাওয়া। সাতটার মধ্যে বাড়ি ফিরে অন্যের বাড়ি বাড়ি দুধ দিতে যাওয়া। তারপর তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেই সোজা স্কুল। এই ছিল ইয়াসিনের জীবন।

দু’পয়সা রোজগার করতে কোনও কাজকেই ছোট করে দেখেননি ইয়াসিন। দুধ দেওয়া থেকে বাড়ি বাড়ি খাবার ডেলিভারি করা, সবই করেছেন তিনি। পড়াশোনা চালানোর জন্য ব্যবহার করতেন পুরনো বইও। দ্বাদশ শ্রেণী অবধি পড়াশোনা করার পর ঝাঁপিয়ে পড়েন ইলেকট্রনিকসে ডিপ্লোমা করতে। সেই ফাঁকেই গুজরাটে গিয়ে কাজও করেন তিনি।

এরপর ফের নিজের রাজ্যে ফিরে শুরু করেন পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিয়ে পড়াশোনা। এবং নিজের পড়াশোনার ঠিক শেষ বছরে গিয়ে জানতে পারেন রাজ্যজুড়ে চলা আইনি পড়াশোনার প্রবেশিকা পরীক্ষার কথা। আর সেই সূত্র ধরেই সিদ্ধান্ত নেন আইনের পথে ঝাঁপানোর। সেই প্রবেশিকা পরীক্ষার হাত ধরেই সুযোগ পান রাজ্যের সবচেয়ে নামী সরকারি আইন কলেজে পড়ার। পড়াশোনার ফাঁকেই আবার কিছুটা রোজগারের জন্য খাবার ডেলিভারিও করতেন ইয়াসিন।

এরপর আইন নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে আদালতের সিনিয়র আইনজীবীর অধীনে কাজ করা শুরু করেন ইয়াসিন। সেই থেকেই শুরু হয় বিচারক বা সিভিল জজ হওয়ার পরীক্ষা দেওয়া। প্রথমবারে সফল না হলেও, দ্বিতীয় পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন ইয়াসিন।


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours