২০২০ সালে স্কুলের একমাত্র অঙ্ক শিক্ষক অবসর নিতেই পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষককে অতিথি শিক্ষক হিসাবে স্কুলে নিয়োগ করা হলেও বার্ধক্য জনিত কারনে তিনি শারিরীক ভাবে অসুস্থ। যে ক'দিন তিনি স্কুলে যেতে পারেন, সেই ক'দিনই অঙ্কের ক্লাস হয়।


 অঙ্ক, ভুগোল না শিখেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে এরা! নেই টিউশন পড়ার সামর্থ্যও


ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠানো। অথচ জীবনের বড় পরীক্ষায় তারা বসবে অঙ্ক না শিখেই! শুধু অঙ্ক কেন, ভূগোল, ভৌত বিজ্ঞানেরও শিক্ষক নেই স্কুলে। দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ধরে একই অবস্থা। অন্যান্য শিক্ষককে দিয়ে কোনও রকমে সামাল দেওয়া হচ্ছে বটে। তবে অঙ্ক শেখানো হয় মাসে ১ বা ২ বার। এই পাঠ পড়ে কীভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে পড়ুয়ারা?


বাঁকুড়ার পুনিশোল উপরডাঙ্গা হাইস্কুলের এই দশা দেখে চিন্তায় অভিভাবকরা। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির জন্য স্কুলে বরাদ্দ মাত্র ৪ জন শিক্ষক। অথচ প্রতিটি ক্লাসে উপচে পড়ছে পড়ুয়াদের ভিড়। ইতিহাসের শিক্ষক কোনওমতে সামাল দেন ভূগোল ক্লাস। জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক জোড়াতালি দিয়ে চালান পদার্থ বিজ্ঞানের পাঠ। কিন্তু অঙ্কের শিক্ষক না থাকায় সেই ক্লাস নেবেন কে?

জানা গিয়েছে, বার্ধক্যজনিত শারিরীক অসুস্থতায় জর্জরিত একজন অতিথি শিক্ষক মাসে দু-একদিন স্কুলে গিয়ে অঙ্ক শেখান, তবে তা দিয়ে আর যাই হোক জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক পাস করা যায় কি? উদ্বেগে স্কুলের পড়ুয়ারা।

বাঁকুড়া জেলার সবথেকে বড় গ্রাম পুনিশোল। সম্পূর্ণ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই গ্রামের আর্থ সামাজিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে নতুন প্রজন্মের কাছে লেখাপড়া শেখার একমাত্র ভরসা সরকারি স্কুল। গ্রামে থাকা পুনিশোল বোর্ড হাইস্কুলের উপর পড়ুয়াদের অত্যধিক চাপ কমাতে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে গ্রামের একপ্রান্তে শুরু হয় পুনিশোল উপরডাঙ্গা হাইস্কুল। নিজস্ব স্কুলবিল্ডিং তৈরির পাশাপাশি স্থানীয় চাহিদা মেনে ২০১৭ সালে সেই স্কুল হাইস্কুলে উন্নীত হয়। কিন্তু শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়নি। স্কুলে ৬ টি ক্লাসে সব মিলিয়ে এখন পড়ুয়ার সংখ্যা ৬০০-র বেশি। অথচ স্কুলে নিযুক্ত রয়েছেন মাত্র ৪ জন শিক্ষক।

২০২০ সালে স্কুলের একমাত্র অঙ্ক শিক্ষক অবসর নিতেই পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। অবসরপ্রাপ্ত ওই শিক্ষককে অতিথি শিক্ষক হিসাবে স্কুলে নিয়োগ করা হলেও বার্ধক্য জনিত কারনে তিনি শারিরীক ভাবে অসুস্থ। যে ক’দিন তিনি স্কুলে যেতে পারেন, সেই ক’দিনই অঙ্কের ক্লাস হয়। ফলে অঙ্ক যেন অধরাই থেকে যাচ্ছে স্কুলের পড়ুয়াদের কাছে। টিউশন পড়ার সামর্থ্যও নেই পড়ুয়াদের। অগত্যা একপ্রকার অঙ্ক না শিখেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিকে বসতে হয় পড়ুয়াদের।

পড়ুয়াদের প্রতি এই বঞ্চনার কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি অঙ্কের শিক্ষকের শূণ্যপদ পূরণের জন্য স্কুল শিক্ষা দফতরে বারবার আবেদন জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। শিক্ষক না থাকায় বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যাও। বাঁকুড়া জেলার স্কুল পরিদর্শকও কার্যত স্কুলের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর দাবি যত দ্রুত সম্ভব ওই স্কুলে অঙ্কের একজন নিয়মিত অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হবে।


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours