স্বর্ণখালি গ্রামে দুই শতক জমির ওপরে টিনের ঘরে বসবাস করতেন এই পরিবার । বাংলা আবাস যোজনায় তিনি ঘর পান। ঘর পাওয়ার পর নিজেরা যেখানে বসবাস করতেন সেই টিনের চালাটা বিক্রি করে দেন ৪০০০ টাকায়।



৩১ ডিসেম্বর রাতেই এল বিডিও-র 'অভিশপ্ত' চিঠি! আবাসের টাকায় বাড়ি বানিয়েও আতঙ্কে জঙ্গলে দিন কাটাচ্ছেন বিড়ি শ্রমিক দম্পতি, কী লেখা সেই চিঠিতে?
অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি


 আবাস যোজনার টাকা পেয়ে বাড়ির প্রথম ধাপ তৈরি করার পর টাকা ফেরতের চিঠি প্রশাসনের। তথ্য গোপন রেখে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করার কারণে টাকা ফেরতের নির্দেশ প্রশাসনের। ৭ দিনের মধ্যে টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক। সরকারি টাকা পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী ঘরের জন্য খরচ করে ফেলেছিল ওই পরিবার। এখন কীভাবে ওই টাকা ফেরত দেবেন তাঁরা, এই আতঙ্কে ওই বৃদ্ধ পরিবার ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন বাগানে। কেন সঠিক তদন্ত না করে এবং তথ্য যাচাই না করেই তাঁদের দেওয়া হয়েছিল আবাস যোজনার টাকা? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।


স্বর্ণখালি বিড়ি শ্রমিক বৃদ্ধার পরিবারের এখন ভয়ানক অবস্থা । নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের স্বর্ণখালি গ্রামের হত দরিদ্র পরিবারের কর্তা রঞ্জিত বিশ্বাস। স্বামী স্ত্রী দুজনেই বিড়ি শ্রমিক। ছেলে পাকা বাড়ি থাকলেও সেই বাড়িতে থাকেন না তাঁরা। রঞ্জিত বিশ্বাস ও সুচিত্রা বিশ্বাস দুজনে আলাদা সংসারে থাকেন। আর দুজনে মিলে বিড়ি বেঁধে কোনওরকমে সংসার চালান।

স্বর্ণখালি গ্রামে দুই শতক জমির ওপরে টিনের ঘরে বসবাস করতেন এই পরিবার । বাংলা আবাস যোজনায় তিনি ঘর পান। ঘর পাওয়ার পর নিজেরা যেখানে বসবাস করতেন সেই টিনের চালাটা বিক্রি করে দেন ৪০০০ টাকায়। যেহেতু বাড়িতে আর কোন জায়গা নেই ওই ঘরটা সরিয়েই ওখানে তৈরি করবেন ঘর। প্রথম কিস্তি ৬০ হাজার টাকা পাওয়ার পর বালি, পাথর, রড কিনে বাড়ির তৈরির কাজ শুরু করেন ।

কিন্তু বাজ ভেঙে পড়ে গত বছর ৩১ ডিসেম্বর। কৃষ্ণগঞ্জ বিডিও অফিস থেকে নোটিস পাঠানো হয় ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে। বলা হয়, “আপনি বাংলার বাড়ি গ্রামীণ প্রকল্পে গৃহনির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে ষাট হাজার টাকা পেয়েছেন কিন্তু তদন্ত করে দেখা গিয়েছে, আপনার বাড়ি পাকা থাকা সত্ত্বেও আপনি সেই তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের আবেদন করেছেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে সরকার থেকে প্রাপ্ত ষাট হাজার টাকা বিডিও অফিসের অ্যাকাউন্টে অথবা নগদ অর্থে জমা করতে হবে। অন্যথায় সরকারি দফতরকে মিথ্যা তথ্য দেওয়া এবং সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগে আপনার নামে এফআইআর দায়ের করতে বাধ্য থাকব।”

বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সমস্ত টাকা খরচ করে ফেলায় তিনি টাকা ফেরত দিতে পারেননি। ফলে পরিবারের অভিযোগ বিডিও অফিস থেকে বারবার টাকা ফেরত এর জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। ভয়ে পরিবারের লোকজন পুলিশি গ্রেফতারি এড়াতে বাগানে আশ্রয় নিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারাও বিষয়টিতে বিস্মিত। তাঁদের বক্তব্য, প্রথমে পঞ্চায়েত, পরে বিডিও এবং শেষে থানা এনকোয়ারি করে, তবেই এই পরিবারকে বাংলার বাড়ি দিয়েছেন। বাড়ি নির্মাণের যে টাকা দেওয়া হয়েছে সেই টাকা খরচ করে ফেলেছেন বাড়ির জিনিসপত্র কিনে। তাহলে কেন এই ধরনের নির্দেশ?

যদিও বৃদ্ধ দম্পতির দাবি, তাঁরা বিজেপি সমর্থক হওয়ায় তাঁদের প্রতি এ ধরনের আচরণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কাকলি দাসকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি । পাশাপাশি কৃষ্ণ গঞ্জের বিডিও সৌগত সাহাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনিও সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেননি।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours