মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও বিজয় সিংহল তখন বলেন, "২০১৫ সালের জুন মাসে আলিপুরদুয়ারের চিকিৎসক এই বিষয়ে অভিযোগ করেন। যেহেতু তিনি মুখ খোলেন তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় রাজ্য। কর্নাটকে এই কোম্পানিকে তিন বছর ব্যান করে দেওয়া হয়। তারপরে এই রাজ্য ওই কোম্পানিকে কাজের সুযোগ দেয়।"


'যদি দেখেন মাংস নষ্ট হয়ে গিয়েছে, কী করবেন?', স্যালাইন বিতর্ক মামলায় বড় পর্যবেক্ষণ প্রধান বিচারপতির, রাজ্যকে দিতে হবে ক্ষতিপূরণও
হাইকোর্টে স্যালাইন-মামলা

গরিব বলে কি গিনিপিগের মতো ব্যবহার করবেন?’ স্যালাইন বিতর্ক মামলায় প্রশ্ন তুললেন মামলাকারী। স্যালাইন বিতর্ক মামলায় প্রধান বিচারপতির চরম ভর্ৎসনার মুখে রাজ্য। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হীরন্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চে। বিচারপতি এদিন নির্দেশ দিয়েছেন, সব হাসপাতালে রিঙ্গার্স ল্যাক্টেক স্যালাইন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। দুটি জনস্বার্থ মামলায় রাজ্যের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে এদিনের শুনানিতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। যারা এই ড্রাগ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রাজ্য হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার দফতরকে রিপোর্ট দিতে হবে, কোন রোগী ইতিমধ্যেই ওটি ব্যবহার করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল নামে ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সেটা কেন্দ্র জানাবে।


এদিনের শুনানিতে রাজ্য জানায় আগেই তাঁরা এই ড্রাগ ব্যবহার বন্ধ করেছেন। তখন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ” আমরা পড়লাম সিআইডি তদন্তে আগ্রহী রাজ্য?” আজাদতে এজি জানান, “হ্যাঁ। প্রাথমিক তদন্ত করছে পুলিশ। ১৩ মেম্বর কমিটি গঠন করা হয়েছে।” প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “কী পদক্ষেপ করে ফার্মা কোম্পানির বিরুদ্ধে?”

রাজ্যের তরফ থেকে তখন যুক্তি দেওয়া হয়, “মামলাকারী মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনটে ব্যাচের স্যালাইন ওই কোম্পানির তৈরি ছিল। ত্রিশ হাজার স্যালাইন ওই একটি ব্যাচের ব্যবহার হয়েছে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। সরকারি ল্যাবে পরীক্ষা হয়েছে। মুম্বই ল্যাবেও হয়েছে। এই কোম্পানি দেশের সব রাজ্যেই সরবরাহ করে।”


প্রধান বিচারপতি তখন জানতে চান, “আপনারা কি ফার্মা কোম্পানিকে নোটিস দিয়েছেন?” এজির তরফ থেকে বলা হয়, “না এই মর্মে দেওয়া হয়নি।”

মামলাকারীর আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও বিজয় সিংহল তখন বলেন, “২০১৫ সালের জুন মাসে আলিপুরদুয়ারের চিকিৎসক এই বিষয়ে অভিযোগ করেন। যেহেতু তিনি মুখ খোলেন তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয় রাজ্য। কর্নাটকে এই কোম্পানিকে তিন বছর ব্যান করে দেওয়া হয়। তারপরে এই রাজ্য ওই কোম্পানিকে কাজের সুযোগ দেয়।”

তিনি অভিযোগ করেন, “স্বাস্থ্য সচিব সব জেনেও কিছু করেননি। ১০ ডিসেম্বর রাজ্য তাদের এই ওষুধ বানাতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তারপরেও কেন হাসপাতালে ব্যবহার হল? যদি কিছু না হয়ে থাকে তাহলে ২০২৪ ডিসেম্বরে কেন বন্ধ করল রাজ্য? গরিব বলেই কি গিনিপিগের মতো তাদের ব্যবহার করতে হবে?”

আদালতে রাজ্য জানায়, “কেন্দ্রীয় ল্যাব থেকে আমরা সার্টিফিকেট পেয়েছি।” প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “রাজ্য বেনিফিট অফ ডাউট দিচ্ছে কি করে এটা তো ওয়েল ফেয়ার স্টেট, তাই না?”

প্রধান বিচারপতির আরও মন্তব্য, “কোনও রেস্তোরাঁয় ফুড সেফটি অথরিটি অফিসার যদি গিয়ে দেখেন মাংস নষ্ট হয়ে গেছে কী করবেন? সঙ্গে সঙ্গে সেটা বন্ধ করা উচিৎ। যাতে কেউ সেই খাবার না খেয়ে অসুস্থ হন।” বিচারপতি আবারও বলেন, “যে মুহূর্তে রোগী মারা গেলেন আপনাদের উচিত ছিল নোটিস জারি করা। এত দেরি হল কেন? ড্রাগ কন্ট্রোলার যখন বন্ধ করছেন, তার মানেই কিছু সমস্যা নিশ্চিত ছিল।”

এজি তখন বলেন, “রাজ্য এক রাতে ত্রিশ হাজার বন্ধ করতে পারে না।” রাজ্যকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিতে হবে ক্ষতিপূরণ। ৩০ জানুয়ারি পরের শুনানি।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours