প্রশ্ন হল, কেন হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধেই নির্বাচনী ছক সাজাতে শুরু করেছেন অরূপ? এই গল্পের পিছনে অন্য গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা জমা করার আগেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বাবুন।
বিওএ-র নির্বাচনে মমতার ভাই বনাম ক্রীড়ামন্ত্রী? নজিরবিহীন লড়াইয়ে উত্তপ্ত ময়দান
বিওএ-র নির্বাচনে মমতার ভাই বনাম ক্রীড়ামন্ত্রী? নজিরবিহীন লড়াইয়ে উত্তপ্ত ময়দান
ময়দানে হঠাৎই নজিরবিহীন নির্বাচনী হাওয়া। বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার (Bengal Olympic Association) নির্বাচনে জড়িয়ে গেল শাসক গোষ্ঠী। এটা বললে হয়তো পুরো ছবিটা তুলে ধরা যাবে না। এই নির্বাচনের মুখ্য চরিত্র স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি বিওএ-র প্রেসিডেন্ট। ময়দান যাঁকে চেনে বাবুন নামে। তার থেকেও বড় পরিচয়, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ভাই। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই ময়দানে বাবুনের দাপট বাড়তে থাকে। মোহনবাগান সহ একাধিক ক্লাবের প্রশাসনে ঢুকে পড়েন। বক্সিং থেকে রাজ্য অলিম্পিক সংস্থা— সর্বত্রই নানা শীর্ষ পদে দেখা যায় তাঁকে। সেই বাবুনের বিরুদ্ধে নাকি ‘ঘুঁটি’ সাজাচ্ছেন খোদ ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার নির্বাচনে বাবুন বনাম অরূপের এই লড়াই ঘিরেই সরগরম ময়দান।
প্রশ্ন হল, কেন হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধেই নির্বাচনী ছক সাজাতে শুরু করেছেন অরূপ? এই গল্পের পিছনে অন্য গন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন অনেকেই। লোকসভা ভোটের ঠিক আগে, তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা জমা করার আগেই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বাবুন। দিদি মমতার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মমতা পর্যন্ত ভাইকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘ও আমার কেউ নয়।’ পরে অবশ্য সব মিটমাট হয়ে যায়। মমতা ভাইফোঁটাও দিয়েছেন বাবুনকে। তাতে কি ক্ষোভ কমেছে বাবুনের? এই প্রশ্ন কিন্তু থেকে যাচ্ছে। তারই মধ্যে বাবুন বনাম অরূপ।
খোঁজ নিয়ে যাচ্ছে, বাবুনের বিরুদ্ধে প্যানেল সাজাচ্ছে অরূপের অনুগতরা। সেই প্যানেলে থাকছেন কমলেশ চট্টোপাধ্যায়, কমল মৈত্র, চন্দন রায়চৌধুরীদের মতো হেভিওয়েটরা। এমনকি, বিরোধী গোষ্ঠী তাদের ম্যানিফেস্টো পর্যন্ত তৈরি করে ফেলেছে। নির্বাচনের দায়িত্ব প্রাপ্ত কমিশনার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি আবার মমতার দাদা। বাবুনেরও দাদা। বিওএ-র এই নজিরবিহীন নির্বাচনে বাবুনের বিরুদ্ধে অরূপের মতোই নেমে পড়েছেন অজিতও। অর্থাৎ বাবুনকে ছেঁটে ফেলার পারিবারিক যোগও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অজিত, যাঁকে ময়দান ষষ্ঠী নামে চেনে, তিনি একসময় বিওএ-র প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ষষ্ঠীকে হারিয়েই প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। বাবুনের উপস্থিতিতেই বিওএ-র কার্যকরী সমিতির সভাতেই ঠিক হয়, অজিত নির্বাচন কমিশনার হবেন। সেই ষষ্ঠীই নাকি বিরোধীদের দিকে!
কেন হঠাৎ বাবুন চোখের বালি হলেন? প্যারিস অলিম্পিকে ভারতীয় টিমে বাংলার কোনও প্রতিনিধি ছিল না। নতুন মুখ তুলে আনার কোনও উদ্যোগই গত কয়েক বছরে নেওয়া হয়নি। এমন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, যিনি আগামী দিনে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। যে কারণে সরকারের চক্ষুশূল হয়েছেন বাবুন। বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার নির্বাচনে ২৩ নভেম্বর মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। তার ঠিক ৫ দিন পর, ২৯ তারিখ বিওএ-র নির্বাচন। গত বার বিওএ নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রীর দুই ভাইয়ের দ্বৈরথ দেখেছিল ময়দান। এ বার তা আরও জমজমাট হতে চলেছে। কারণ সেখানে লড়াইটা মমতার ছোটভাই বাবুন ও বাংলার ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের।
৩৬টি অ্যাসোসিয়েশন এই নির্বাচনে অংশ নেবে। মোট ভোট ৬৮। বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার এই নির্বাচনে আইএফএ-র প্রতিনিধি হয়ে ভোট দেবেন অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বরূপ বিশ্বাস। এখানে জুডো সংস্থার হয়ে ভোট দেবেন সুজিত বসু। ময়দানী রাজনীতিতে বাবুন নাকি অরূপ, কে দেবেন কাকে গোল, ময়দানের নজর সে দিকেই।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours