কপিল সিব্বলের কাছে একটি নথি চাইলে সিব্বল যখন দিতে আপত্তি করেন, ইন্দিরার গলা তখন এক লহমায় চড়ে যায়, 'আপনার কপি দিতে কী অসুবিধা?' নরম সুরে সিব্বল বলছেন, 'দিচ্ছি.. দিচ্ছি।' আবার গলা চড়িয়ে ইন্দিরা বলেন, 'এক্সট্রা কপি ছাড়া কোর্টে আসেন কেন?'
আজ সুপ্রিম কোর্টের লড়াই যেন বুনো ওল vs বাঘা তেঁতুল! শেষ চালে সিব্বলকে 'চেক মেট' ইন্দিরার
সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি
কলকাতার এক তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু তোলপাড় করেছে গোটা দেশ। কর্তব্যরত চিকিৎসককে যেভাবে খুন হতে হয়েছে, তা শুনে শিউরে উঠেছে সাধারণ মানুষ। এই একটি ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে, পুলিশ থেকে প্রশাসন। সেই ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গ্রহণ করার পর আজ মঙ্গলবার ছিল তৃতীয় দিনের শুনানি।
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মঙ্গলবার প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে শুনানি।
শুরু হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি যখন সবাইকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন,তখন হঠাৎ আপত্তি জানিয়ে সওয়াল করতে ওঠেন কপিল সিব্বল (রাজ্যের আইনজীবী)। পাকা মাথার আইনজীবী, হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট- মামলা লড়ার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। সেই সিব্বল বলে উঠলেন, সুপ্রিম কোর্টের লাইভ স্ট্রিমিং-এর জন্য নাকি তাঁর ‘রেপুটেশন’ খারাপ হচ্ছে। তবে প্রধান বিচারপতি বুঝিয়ে দেন, এটা ওপেন কোর্ট, তাই লাইভ স্ট্রিমিং হবেই।
প্রতিদিনের মতো এদিন ফের একটি স্টেটাস রিপোর্ট গেল CJI-এর হাতে। বেশ কিছুক্ষণ সব চুপচাপ। তবে এদিন প্রধান বিচারপতি রিপোর্ট দেখে বেশ সন্তুষ্ট। প্রয়োজন মতো নির্দেশও দিল শীর্ষ আদালত।
গত দুবারের শুনানিতে কপিল সিব্বলের সঙ্গে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার সওয়াল-জবাব ছিল চোখে পড়ার মতো। তথ্য প্রমাণের কী অবস্থা? আন্দোলন থামবে কবে? এ সব নিয়ে অনেক প্রশ্নোত্তর হয়েছে আগে। তবে এদিন সবার নজর ছিল ইন্দিরা জয়সিং-এর দিকে। এই মামলায় এই প্রথমবার সওয়াল করলেন তিনি।
বর্ষীয়ান আইনজীবী ইন্দিরা শুরু থেকে চুপ থাকেন এদিন। বেশিরভাগ সময় চেয়ারেই বসেছিলেন তুষার মেহতাও। রাজ্যের বিপক্ষে এদিন দুই মহিলার সওয়াল ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রথমে করুণা নন্দী (চিকিৎসকদের আইনজীবী) ওঠেন সওয়াল করতে। শান্ত গলাতেও উদ্বেগ করুণা নন্দীর। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা, সিসিটিভির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করার পর যখন করুণা বসে পড়েন, তখন শুরু করেন বছর ৮৪-র ইন্দিরা।
কপিল সিব্বলের কাছে একটি নথি চাইলে সিব্বল যখন দিতে আপত্তি করেন, ইন্দিরার গলা তখন এক লহমায় চড়ে যায়, ‘আপনার কপি দিতে কী অসুবিধা?’ নরম সুরে সিব্বল বলছেন, ‘দিচ্ছি.. দিচ্ছি।’ আবার গলা চড়িয়ে ইন্দিরা বলেন, ‘এক্সট্রা কপি ছাড়া কোর্টে আসেন কেন?’
শুনানির মাঝে সিব্বলকে কার্যত মাঝপথে থামিয়ে কথা বলতে শুরু করেন ইন্দিরা জয়সিং। সিব্বল নিজের কথা শেষ করতে যেতে আবারও থামিয়ে দেন। পরক্ষণেই বলে ওঠেন, ‘সরি সরি…’। হেসে ফেলেন সিব্বল। শুনানি যখন শেষের পথে, তখন এদিন সুর সপ্তমেই রাখেন ইন্দিরা জয়সিং।
যে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার পক্ষে গতবারের শুনানিতে সিব্বল জোর সওয়াল করেছিলেন, এবার সেই প্রশ্নেই সিব্বল কার্যত চুপ! কিছু বলে ওঠার আগেই ইন্দিরা তাঁর গলা ছাপিয়ে বলে ওঠেন, “না, এখন কাজে ফিরবে না। আগে গ্যারান্টি দিন, তারপর…।” মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস নিয়ে সিব্বল যখন কিছু বলার চেষ্টা করছেন, তখন ইন্দিরা সওয়ালে থেমে যান তিনি। শুনানির শেষ লগ্নে তাঁকে থামাতে পারেননি খোদ প্রধান বিচারপতিও।
ইন্দিরা জয়সিং এবং কপিল সিব্বলের মতো দুই প্রবীণ আইনজীবীর সওয়াল-জবাব দেখতে মুখিয়ে ছিলেন আইনজীবীরা। এদিন যেভাবে শেষ কয়েকটা ওভারে ৮৪ বছরের ইন্দিরা ব্যাট চালালেন, তা দেখে অভিভূত আইনজীবীদের একাংশ। ৯ সেপ্টেম্বর কপিল সিব্বলও শেষ মুহূর্তে ‘ব্যাট’ চালিয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ছিনিয়ে এনেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্দেশ। ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটার মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে জয়েন করতে হবে। এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়েছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি দাওয়া নিয়ে দড়ি টানাটানি চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে একাধিকবার আলোচনার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু জটিলতার জট কাটেনি। শেষমেশ আলোচনা হলেও কর্মবিরতি ওঠা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি জুনিয়র ডাক্তাররা। তাই সুপ্রিম কোর্ট এই অবস্থানকে কীভাবে দেখে আঙ্কায় ছিল ডাক্তাররা। বাধ্য হয়ে আইনজীবীও পরিবর্তন করেছেন তাঁরা। ৭৬ বছর বয়সী কপিল সিব্বলের বিরুদ্ধে ৮৪ বছরের ইন্দিরা জয়সিংকে নামিয়েছেন তাঁরা। এদিন হাজার চেষ্টা করেও জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরানোর জন্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে নির্দেশ নিয়ে আসতে পারেনি কপিল সিব্বল। মাটি কামড়ে উইকেট বাঁচিয়ে গেলেন ইন্দিরা জয়সিং। জুনিয়র ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত নিজেদের হাতে ন্যস্ত করেই ছাড়লেন ইন্দিরা জয়সিং। তাই, আইনজীবীদের কেউ কেউ বলছেন, কপিল সিব্বল যদি বুনো ওল হয়ে থাকেন, ইন্দিরা জয়সিংকে বাঘা তেঁতুল বললে ভুল হবে না।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours