বর্তমানে ভারতে, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দারুণ জনপ্রিয় 'বুলডোজার বিচার'। কোনও অভিযুক্তর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই তাঁর সম্পত্তির উপর চলে বুলডোজার। চলতি মাসের শুরুতেই একবার এই ধরনের বিচারের তীব্র সমালোচনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ কারও সম্পত্তি ধ্বংস করার ভিত্তি হতে পারে না। এই ধরনের পদক্ষেপ, আইনের উপর বুলডোজার চালানোর সামিল।

দেশের আইনের উপর বুলডোজার...', 'যোগীর দাওয়াই' নিয়ে সরব সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট।

‘বুলডোজার বিচার’। বর্তমানে ভারতে, বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে দারুণ জনপ্রিয় এই বিচার ব্যবস্থা। কোনও অভিযুক্তর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই তাঁর সম্পত্তির উপর চলে বুলডোজার। চলতি মাসের শুরুতেই একবার এই ধরনের বিচারের তীব্র সমালোচনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার ফের একবার এই ধরনের সরকারি পদক্ষেপের সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ কারও সম্পত্তি ধ্বংস করার ভিত্তি হতে পারে না। এই ধরনের পদক্ষেপ, আইনের উপর বুলডোজার চালানোর সামিল।

জাভেদ আলি মেহবুবামিয়া সইদ নামে গুজরাটের খেড়া জেলার এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে একটি জমি দখল করে সেখানে বাড়ি বানানোর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় পৌরসভার আধিকারিকরা এই বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন এবং বুলডোজার দিয়ে তাঁর পারিবারিক ভিটে ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে আবেদন করেছিলেন ওই ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি হয় বিচারপতি হৃষিকেশ রায়, বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া এবং বিচারপতি এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চে। সইদের আইনজীবী আদালতে জানান, বিতর্কিত বাড়িটি কাঠলাল গ্রামের। সেখানকার রাজস্ব রেকর্ড অনুযায়ী, তাঁর মক্কেল ওই জমির সহ-মালিক। ২০০৪ সালের অগস্টে গ্রাম পঞ্চায়েত ওই জমিতে একটি বাড়ি তৈরির অনুমতি দিয়েছিল। তাঁর মক্কেলের পরিবারের তিন প্রজন্ম গত দুই দশক ধরে সেখানেই থাকে।

গত ২ সেপ্টেম্বর, অন্য এক মামলার শুনানিতে 2শে সেপ্টেম্বর, বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের এক বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিল, কীভাবে শুধুমাত্র একজন অভিযুক্ত বা অপরাধী হলে কারও বাড়ি ভেঙে ফেলা যায়? সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এইভাবে বাড়ি ভাঙার আগে, কিছু নির্দেশিকাগুলির অনুসরণ করতে হবে। একটি নির্দেশাবলীর প্রস্তাবও দিয়েছিল আদালত। সুপ্রিম কোর্টের সেই আদেশও উদ্ধৃত করেন সইদের আইনজীবী।


দুই পক্ষের শুনানির পর, বেঞ্চ জানায়, যে দেশে আইনের শাসন রয়েছে, সেখানে কোনও পরিবারের একজন সদস্য আইন লঙ্ঘন করলে, পরিবারের অন্য সদস্যদের বা তাদের আইনত নির্মিত বাসস্থানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। বেঞ্চ জানিয়েছে, সইদের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র একটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা আদালতে প্রমাণ করতে হবে। বেঞ্চ বলেছে, “এই ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের হুমকির বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকতে পারে না আদালত। আইনের শাসন রয়েছে এমন কোনও দেশে এটা অকল্পনীয়।” এই বিষয়ে গুজরাট সরকারকে একটি নোটিশ পাঠিয়েছে আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে তার জবাব দিতে হবে। আদালত আরও জানিয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সইদের বাড়ি ভাঙা যাবে না।

প্রসঙ্গত, বুলডোজার চালানোর এই প্রথা চালু করেছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যার দৌলতে তাঁর নাম হয়ে গিয়েছে বুলডোজার বাবা। এরপর, বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্যগুলিও তাঁর দেখানো পথই অনুসরণ করেছে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours