ওই স্কুলের শিক্ষক স্বপন প্রধানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ ওই তৃণমূল নেতা নিজে কোনওদিনও ক্লাসে যেতেন না। তাঁর বদলে তাঁরই ভাইয়ের স্ত্রী অমিতা প্রধানকে শিক্ষক হিসাবে রেখে ক্লাস করাতেন। অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবক থেকে শুরু করে বিরোধীরাও।

ভাইয়ের বউ ক্লাস করান, বেতন তোলেন নিজে! শিক্ষক তৃণমূল নেতা বলেই এত স্পর্ধা?
তৃণমূল নেতা শিক্ষকের কীর্তি


পূর্ব মেদিনীপুর: বছরের পর বছর স্কুলে ক্লাস না করিয়েও শিক্ষক হিসাবে নিয়মিত বেতন তুলেছেন এক তৃণমূল নেতা। মাস শেষে স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতা ভর্তিও করেছেন। নিজে স্কুলে না গিয়ে একজন ডামি শিক্ষিকাও রেখেছিলেন। যিনি আদতে তাঁরই ভাইয়ের স্ত্রী, যিনি ‘প্রক্সি’ দিতেন। ভয়ঙ্কর অভিযোগে শোরগোল পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর ব্লকের ভগবানখালি নিউ প্রাইমারি স্কুলে।

ওই স্কুলের শিক্ষক স্বপন প্রধান চণ্ডীপুর এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা। তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ, বছরের পর বছর স্কুলে যান না তিনি। তাঁর বদলে তাঁরই ভাইয়ের স্ত্রী অমিতা প্রধানকে শিক্ষক হিসাবে রেখে ক্লাস করাতেন। এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা, সঙ্গে জেলা পরিষদের সদস্যও বটে, তাই ভয়ে এতদিন মুখ খোলেননি কেউই। এবার অভিযোগ তুলে সরব অভিভাবক থেকে শুরু করে বিরোধীরাও। এক অভিভাবকের বক্তব্য, “আমরা তো স্কুলে সেভাবে শিক্ষককে দেখেনই না। মাঝেমধ্যেই তিনি স্কুলে আসেন না। তার বদলে ক্লাস নেন এক মহিলা।” জেলা বিজেপি সহ সভাপতি পুলক গুড়িয়া অভিযোগ করেন, “বাংলায় এখন যা অবস্থা, তাতে এ ঘটনা স্বাভাবিক। শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ওঁ এখানকার তাবড় নেতা। তিনি ক্লাস নিতে যাবেন না এটাই স্বাভাবিক। বিগত কয়েক বছর স্কুলেই যান না। অ্যাটেনডেন্স দিতে দু-তিন মাসে একবার যান। ওঁ ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, তাই শিক্ষকতার পেশায় সময় দিতে পারেন না।”

যদিও স্বপনের বক্তব্য, অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “আমার খাতা কলমের রেকর্ড বলবে। আমি নিয়মিত ক্লাস করি। ২০২৩ সাল থেকে আমি জেলা পরিষদ সদস্য। তার আগে তো আমি জেলা পরিষদ সদস্য ছিলাম না । অসুস্থতার কারণে আমি মেডিক্যাল লিভ নিয়েছিলাম। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমি ছুটির লিখিত আবেদন করতে পারিনি।”

ফোনে প্রধান শিক্ষককে গোটা বিষয়টি জানিয়েছিলেন বলে দাবি তাঁর । কিন্তু তারপর থেকে নিয়মিত ক্লাস করছেন বলে দাবি তাঁর। তিনি বলেন, “চিকিৎসা করে ফিরে আসার পর আমি ছুটির আবেদন করেছি ও মেডিক্যাল সার্টিফিকেটও জমা দিয়েছি। আমি একটা শোকজ নোটিস পেয়েছি । তার উত্তরও দেব।”

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিতাইচরণ মাইতি বলেন, “কোন ডামি শিক্ষিকা এখানে আসতেন না। একজন শিক্ষানুরাগী মহিলা স্বইচ্ছায় মাঝে মধ্যে আসতেন। ওঁ ক্লাস নিতেন না। কমিটির অনুমতি নিয়ে তিনি মাঝে মধ্যে আসতেন। একজন শিক্ষানুরাগী হিসাবে মাঝে মধ্যে শিক্ষকদের সহযোগিতা ও ছাত্রদের পঠন পাঠনের সুবিধার জন্যে ক্লাস নেওয়ার ও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।”

ওই মহিলা বিনা পয়সায় বাচ্চাদের পড়াতেন বলে দাবি প্রধান শিক্ষকের। অভিযুক্ত শিক্ষকও টানা ছুটিতে ছিলেন না বলে দাবি প্রধান শিক্ষকের। স্বপন প্রধান চিকিৎসার জন্য জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত ছুটি নিয়েছিলেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক। যদিও ডিআই পঙ্কজ সর্দার বলেন, “এনকোয়ারি করে একটা রিপোর্ট এসেছিল। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে শোকজ নোটিস পাঠিয়েছি। এরপর আমরা আইননানুগ ব্যবস্থ নেব।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours