১০ জনের ভারতকে তৃতীয় কোয়ার্টারে চেপে ধরেছিল বিপক্ষ। বল পজেশন নিজেদের কাছে রাখা, ভারতের ডিফেন্সে হামলে পড়া, সোজা স্ট্র্যাটেজি দিয়েই কার্যত ম্যাচ পকেটে রাখতে চেয়েছিল। ওই পর্বে শ্রীজেশ বনাম গ্রেট ব্রিটেনের খেলা হল। তিনটে নিশ্চিত গোল বাঁচালেন ভারতীয় কিপার।
অলিম্পিকে কামাল শ্রীজেশের, ৪৩ মিনিট ১০ জনে পদকের কাছে ভারত!
অলিম্পিকে কামাল শ্রীজেশের, ৪৩ মিনিট ১০ জনে পদকের কাছে ভারত!
ভারত-১ : গ্রেট ব্রিটেন-১
(হরমনপ্রীত ২২) (মর্টন ২৭)
প্যারিস: গ্রেট ব্রিটেনকে হারিয়েই গত অলিম্পিকে সেমিফাইনালে উঠেছিল ভারত। টোকিও গেমসের ফলাফল আবার ফিরে আসবে, কেউ কি ভেবেছিল? হরমনপ্রীত সিং, অভিষেক, ললিত উপাধ্যায়রা ভেবেছিলেন। আর ভেবেছিলেন পিআর শ্রীজেশ। ৪০ বছর পর গত অলিম্পিক থেকে ব্রোঞ্জ নিয়ে ফিরেছিল ভারত। হকির প্রত্যাবর্তনের নতুন ছবি দেখেছিল সারা দেশ। আর এ বার? বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোর থেকে আর পিছিয়ে নেই ভারত। বরং হরমনপ্রীতরা সোনার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন। ৪৩ মিনিট ১০ জনে খেলেও হকির শেষ চারে ভারত। টাইব্রেকারে গ্রেট ব্রিটেনকে হারিয়ে সেমিতে ভারত। শ্রীজেশের দুরন্ত কিপিংয়ে ভারত আবার স্বপ্নের খুব, খুউব কাছে!
পিটি উষা, দিলীপ টিরকের মতো কিংবদন্তিরা গ্যালারিতে। টাইব্রেকারে গোল বাঁচিয়ে যেমন নাচছিলেন ম্যাচের নায়ক, তেমনই উষা-দিলীপের কাছে গিয়ে হাজির হলেন। নায়ককে জড়িয়ে ধরলেন কিংবদন্তিরা। ভারত নয়, শ্রীজেশের কাছে হারল গ্রেট ব্রিটেন। কোনরকে টাইব্রেকারে বাইরে মারতে বাধ্য করলেন। ফিলিপেরটা সেভ করলেন দায়িত্ব নিয়ে। নির্ধারিত সময়ে ফেরার ফল ১-১। ভারত টাইব্রেকারে জিতল ৪-২। শ্রীজেশই ভারতকে সেমিতে নিয়ে গেলেন। অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স ভারতীয় কিপারের। শুধু শ্রীজেশ নন, পুরো টিম অসাধারণ হকি খেলল। দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ১০ জন হওয়ার পর গোল তুলে নিয়েছিল ভারত। কিন্তু ১-১ হওয়ার পর স্ট্র্যাটেজি পাল্টাল ভারত। ডিফেন্স করে খেলা শেষ করে টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়া। ১০ জনেও স্বপ্নপূরণ সম্ভব করে দেখাল ভারতীয় হকি টিম।
গ্রেট ব্রিটেন এ বার ছন্দে নেই। দুটো ড্র, একটা হারের মধ্যে দিয়ে নক আউটে পা রেখেছেন ওয়ালেশ, ড্রাপাররা। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে তারাই নামল সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার জন্য। আগ্রাসী হয়ে শুরুতেই গোল তুলে নিতে চেয়েছিল গ্রেট ব্রিটেন। হরমনপ্রীত, শ্রীজেশরা তা খুব ভালো করেই জানতেন। তাই ডিফেন্স জমাট রাখে ভারত। প্রথম কোয়ার্টারের শুরুর ৬ মিনিটেই পর পর দুটো পি-সি পেয়ে যায় গ্রেট ব্রিটেন। ভারতীয় ডিফেন্ডার অমিত রোহিদাস বাঁচিয়ে দেন দুটোই। লং কর্নার থেকে নেওয়া বিপক্ষের শট সেভ করেন গোলকিপার শ্রীজেশ। অলিম্পিকের পর আর তুলে রাখবেন স্টিক। কিন্তু তাঁকে দেখলে বোঝাই যাচ্ছে না জীবনের শেষ টুর্নামেন্ট খেলছেন।
প্রথম কোয়ার্টারে গোল দিতে না পারলেও দুরন্ত গোললাইন সেভ করেন জার্মানপ্রীত সিং। ওই শট সেভ না হলে ভারত তখনই ০-১ হয়ে যেতে পারত। জার্মানের লড়াই ভারতকে উজ্জীবিত করে তোলে। পাল্টা আক্রমণে যায় ভারত। পর পর তিনটে পি-সি পেয়েও যায়। কিন্তু কাজে লাগল না। হরমনপ্রীত, হার্দিকরা কিন্তু মরিয়া হয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন। তারই প্রতিফল পরের তিনটে কোয়ার্টারেও দেখা গেল।
হকিতে স্টিক কখনও ওঠানো যায়। বিশেষ করে পাশে যদি বিপক্ষের প্লেয়ার থাকেন। অমিত রোহিদাসের স্টিক সরাসরি মাথায় লাগে এক প্লেয়ারের। কিন্তু অমিতের ওই ভুল ইচ্ছেকৃত ছিল না। তা সত্ত্বেও তাঁকে লাল কার্ড দেখানো হয়। যা একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না। হলুদ কার্ড দিতে পারতেন আম্পায়ার। তাতে ১০ মিনিট মাঠের বাইরে থাকতে হত অমিতকে। কিন্তু তাও মেনে নেওয়া যেত। ১৭ মিনিটে ১০ জন হয়ে যাওয়া ভারত চাপে পড়ে যায়।
ভারত কিন্তু একবারের জন্য জমি ছাড়েনি। অমিতের বদলে ১০ মিলেই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন হরমনপ্রীত, অভিষেকরা। চতুর্থ পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল পেয়ে গেল ভারত। হার্দিকের পুশ থেকে হরমনপ্রীতের গোল ২২ মিনিটে ১-০। এ বারের অলিম্পিকে দুরন্ত পারফর্ম করছেন হরমনপ্রীত। ভারতের ক্যাপ্টেন ডিফেন্স আর অ্যাটাকের চমৎকার ভারসাম্য তুলে ধরছেন প্রতি ম্যাচে। বিপক্ষকে হারানোর জন্যও দরকার সেই হরমনপ্রীতকে। তিনিও নিরাশ করছেন না। এ বারের অলিম্পিকে ৭ গোল করে ফেললেন হরমনপ্রীত। কিন্তু লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারল না ভারত। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের শেষের দিকে সেন্টার থেকে ২৭ মিনিটে লি মর্টন ১-১ করে যান।
১০ জনের ভারতকে তৃতীয় কোয়ার্টারে চেপে ধরেছিল বিপক্ষ। বল পজেশন নিজেদের কাছে রাখা, ভারতের ডিফেন্সে হামলে পড়া, সোজা স্ট্র্যাটেজি দিয়েই কার্যত ম্যাচ পকেটে রাখতে চেয়েছিল। ওই পর্বে শ্রীজেশ বনাম গ্রেট ব্রিটেনের খেলা হল। তিনটে নিশ্চিত গোল বাঁচালেন ভারতীয় কিপার। তিনকাঠির তলায় তিনি যেন অতন্দ্র প্রহরী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। চতুর্থ কোয়ার্টারেও ভারতকে একবার নিশ্চিত গোল খাওয়া থেকে বাঁচালেন শ্রীজেশ।
যে ভাবে হল টাইব্রেকার
জেমস অলড্রি ১-০
হরমনপ্রীত ১-১
ওয়ালেশ ২-১
সুখজিৎ ২-২
কোনর মিস ২-২
ললিত ৩-২
ফিলিপ মিস ২-৩
রাজকুমার ৪-২
Post A Comment:
0 comments so far,add yours