ভিড়ের মাঝে পড়ে গিয়েছেন কেউ। তাঁকে মাড়িয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যরা। আবার চোর সন্দেহে গাছে বেঁধে মারধর করা হচ্ছে কাউকে। বারবার ঘটছে এমন ঘটনা। গণপিটুনি ও পদপিষ্টের মতো ঘটনার সময় মানুষের মনে কী চলে? পদপিষ্টদের আর্তনাদ কি কারও কানে পৌঁছয়? পড়ুন টিভি৯ বাংলার বিশেষ প্রতিবেদন।
ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন?
পদপিষ্টদের আর্তনাদ কি পৌঁছয় কারও কানে?
কলকাতা: ভিড়টা ক্রমশ বাড়ছিল। একসময় শ্বাস নিতেও কষ্ট হতে থাকে। গরমে অস্বস্তি বাড়তে থাকে। তবুও সেই ভিড়ে মিশে থাকার আনন্দ। ‘বাবা’-র দর্শন লাভের আনন্দ। তাঁর পদধূলি মাথায় ঠেকানোর আনন্দ। সেখানে কীসের অস্বস্তি। অপরিচিতরাও যেন ভিড়ের মধ্যে আপনজন মনে হয়। সবাই তো এসেছেন ‘বাবা’-র দর্শনে। সবাই তো তাই আপনজন। কিন্তু, তাল কাটল কয়েক মুহূর্ত পর। হুড়োহুড়িতে যখন একের পর এক শিশু-নারী মাটিতে পড়ে গেলেন। আর নির্বিকারে তাঁদের মাড়িয়ে চলে যাচ্ছেন অন্যরা। মাটিতে ‘পিষে’ যাওয়ার আগে কেউ ভাবছেন, আপনজন হয়ে হাত বাড়িয়ে দেবেন কেউ। সেই হাত সত্যিই কি এগিয়ে আসে? পদপিষ্টের সময় কান্নার রোল, আর্তনাদ কি পৌঁছয় কারও কানে? কাউকে মাড়িয়ে যাওয়ার সময় পা কি দুরুদুরু করে কাঁপে? সেই ভিড়ের মাঝে কেমন অবস্থা হয় ‘আপনজনদের’? উত্তর প্রদেশের হাথরসে পদপিষ্ট হয়ে ১২১ জনের মৃত্যুর পর এমন নানা প্রশ্ন উঠছে। তবে শুধু হাথরস নয়। ভারতে পদপিষ্টের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটে? কী বলছেন মনস্তত্ত্ববিদরা?
ভারতে পদপিষ্টের ঘটনা নিয়ে যেমন শোরগোল পড়েছে, তেমনি গণপিটুনির ঘটনার বাড়বাড়ন্ত নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন। চোর সন্দেহে, ছেলেধরা সন্দেহে কাউকে ধরে মারধর করছে একদল লোক। পশ্চিমবঙ্গে বিগত কিছুদিনে একাধিক গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে। প্রশাসনের তরফে কড়া বার্তা দেওয়ার পরও গণপিটুনির খবর পাওয়া যাচ্ছে। কাউকে এভাবে দলবেঁধে মারার পিছনে কী মনস্তত্ত্ব কাজ করে? একজন অপরিচিতকে এভাবে নৃশংসভাবে মারতে কি কেঁপে ওঠে না হাত?
ভারতে পদপিষ্টের কয়েকটি ঘটনা-
১৯৫৪ সাল। স্বাধীনতার পর দেশে প্রথম কুম্ভমেলা। উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে সেই মহাকুম্ভ মেলায় জনসমুদ্র দেখা গিয়েছিল। ৪০ দিনের উৎসবে ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ ভিড় করেছিলেন। রাজনীতিকদেরও ঢল নেমেছিল মহাকুম্ভ মেলায়। ৩ ফেব্রুয়ারি মৌনী অমাবস্যার দিন ঘটেছিল দুর্ঘটনা। মৌনী অমাবস্যায় স্নানের জন্য মানুষের ঢল নেমেছিল। সাধু ও বিভিন্ন আখড়ার শোভাযাত্রার জন্য আলাদা ব্যারিকেড করা হয়েছিল। সাধারণ মানুষের ভিড়ের চাপে রাস্তার সেই ব্যারিকেড ভেঙে পড়ে। হুড়োহুড়ি শুরু হয়। সেই পদপিষ্টের ঘটনায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়। কারও মতে, সেই সংখ্যা ৮০০-র বেশি। আবার কোনও তথ্য বলছে, সেই সংখ্যা ৫০০-র বেশি।
১৯৯৪ সালের ২৩ নভেম্বর। মহারাষ্ট্রের নাগপুরে গোওয়াড়ি সম্প্রদায়ের একটি বিক্ষোভে ৫০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। তাতেই পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় ১১৪ জনের।
২০০৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার ওয়াই টাউনে মন্ধের দেবীর মন্দিরে সংকীর্ণ পথে ওঠার সময় হুড়োহুড়ি শুরু হয়েছিল। আর তারই মাঝে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ২৬৫ জন পুণ্যার্থীর।
২০০৮ সালের ৩ অগস্ট। হিমাচল প্রদেশের বিলাসপুরে নয়না দেবী মন্দিরের পাহাড়ি পথে উঠছিলেন পুণ্যার্থীরা। সেইসময় ধস নেমেছে বলে গুজব ছড়ায়। তার জেরেই হুড়োহুড়ি শুরু হয়। পদপিষ্ট হয়ে ১৪৫ জন মারা যান।
২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর। মধ্য প্রদেশের রত্নাগড় মন্দিরে নবরাত্রি উদযাপনের জন্য দেড় লাখের বেশি মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। ব্রিজে দাঁড়িয়েছিলেন অনেকে। আচমকা রটে যায়, ব্রিজ ভেঙে পড়তে পারে। হুড়োহুড়ি শুরু হয়। আর তাতেই পদপিষ্ট হয়ে ১১৫ জনের মৃত্যু হয়।
২০২৪ সালের ২ জুলাই। উত্তর প্রদেশের হাথরসের রতিভানপুর। ভোলে বাবার সৎসঙ্গে উপস্থিত হয়েছিলেন প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পর হুড়োহুড়ি শুরু হয়। তাতেই পদপিষ্ট হয়ে ১২১ জনের মৃত্যু হয়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours