পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৩৭.৯ শতাংশ ভোট। ২০২৪ পেল ৩৮.৭৩ শতাংশ ভোট। বিজেপি-র ১০ হাজারের কম ব্যবধান রয়েছে, এমন ৪৯ টা আসনে ত়ণমূল জিতেছে। ২১ টা বিধানসভা আসনে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ব্যবধান ১০-১৫ হাজারের। ৯ টা বিধানসভা রয়েছে, যেখানে অতীতে কখনও বিজেপে জেতেনি।
অভিষেক বলে দিয়েছেন, রাতারাতি চরম অস্বস্তিতে কলকাতার যে কাউন্সিলররা...
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা: উত্তর বাদ দিলে, দক্ষিণে কার্যত সর্বত্র লোকসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় তৃণমূলের। তবুও তৃণমূলের কপালে চিন্তার ভাঁজ। কারণ শহরাঞ্চলের ভোটের হার কমেছে। কেন কমেছে? তা নিয়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উঠে এসেছে একাধিক তথ্য। তার মধ্যে পৌরসভাগুলির বেহাল পরিষেবা ও জনপ্রতিনিধিদের ‘ইমেজ’ একটা বড় কারণ হয়ে উঠেছে। নবান্নের সভাঘর থেকে পৌরসভাগুলিকে কড়া বার্তা দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর একুশের মঞ্চ থেকে জয়ের ধারা বজায় রাখতে দলের ‘শুদ্ধকরণে’র বার্তা দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায়, সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ফল তৃণমূলকে শহরাঞ্চল নিয়ে ভাবাতে বাধ্য করেছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ৬৯টি পুরসভায়, ৬টি পুরনিগমের মধ্যে ৫টি এবং ৯০টি বিধানসভা আসনে বিজেপির তুলনায় পিছিয়ে তৃণমূল। স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তি এবং উদ্বেগ বেড়েছে রাজ্যের শাসকদলের মধ্যে। কোথায় খামতি, কোথায় ত্রুটি রয়ে যাচ্ছে, পরিষেবা আদৌ মিলছে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তার গ্রাফচিত্র রীতিমতো ঊর্ধ্বগামী।
এই অবস্থায় একুশের মঞ্চ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জনপ্রতিনিদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সাফ বলে দিয়েছেন, কোথাও কোনও অভিযোগ পেলে, মন্ত্রী-এমএলএ-এমপি-দের নামে কোনও অভিযোগ হলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। তাঁর কথায়, “সব পৌরসভা, পঞ্চায়েত, এমএলএ, এমপি, প্রধান সবাইকে বলব, কারোর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ যেন কেউ না পায়। যদি কোনও অভিযোগ ওঠে, আমরা কিন্তু উপযুক্ত অ্যাকশন নেব। গরিব থাকুন, যা আছে ঘরে, তাই খেয়ে বেঁচে থাকুন। তাহলেই আপনাদের কেউ সরাতে পারবে না।” আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তো তিন মাস সময় সীমাও বেঁধে দেন। তিনি বলেন, “পুরসভা এবং পঞ্চায়েতে যারা আছেন তাদের মানুষের কথা ভাবতে হবে। নিজের কথা ভাবলে চলবে না। আমি কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্য হব । বাকিটা পার্টি বুঝে নেবে। এটা হবে না। তিন মাসের মধ্যে ফল পাবেন।”
আর তাতেই মূলত চিন্তিত বিজেপির তুলনায় পিছিয়ে পড়া কলকাতা জনপ্রতিনিধিরা। কলকাতায় প্রায় ৪৮টি আসনে তৃণমূল পিছিয়ে বিজেপির তুলনায়। জোড়াসাঁকো এবং শ্যামপুকুর বিধানসভাতেও পিছিয়ে। ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়ে অস্বস্তি তো ছিলই, কিন্তু দলের সেকেন্ড হাই কমান্ডের হুঁশিয়ারির পর কীভাবে পরিস্থিতি সামলানো যায় সেটাই এখন তাঁদের পাখির চোখ।
আদৌ কি আগামী পুরসভা নির্বাচনে বা বিধানসভা নির্বাচনে সেই সব ওয়ার্ডে পিছিয়ে থাকা বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা টিকিট পাবেন না? চরম রাজনৈতিক জল্পনা। সরাসরি এব্যাপারে উত্তর না দিলেও কোথাও একটা চিন্তা বা উদ্বেগ যে থাকছে, সেটা ওই কাউন্সিলরদের বক্তব্যেই পরিষ্কার। তাঁদের সাধারণ একটা বক্তব্য, কাজ করেছি, পাশে থেকেছি। তারপরেও কেন এই হাল কোন বোধগম্য হচ্ছে না।
তবে দলীয় নেতৃত্ব সূত্রে খবর, নীচু তলায় কোথাও একটা পচন ধরেছে। যে কারণে শহরাঞ্চলে মানুষ শাসক দলের থেকে দূরে সরেছে। সেই আবর্জনা পরিষ্কার করতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এত বড় হুঁশিয়ারি বলে মনে করছে দলীয় নেতৃত্ব।
অভিষেকের বক্তব্য প্রস্ত ফিরহাদ হাকিম বলেন, “যেখানে আমাদের মেজরিটি আছে, যেখানে আমাদের চেয়ারম্যান রয়েছেন, দল সিদ্ধান্ত নিলে নিশ্চিতভাবে সেই চেয়ারম্যানকে ড্রপ করে দিতে পারে। এর আগেও হয়েছে। কাউন্সিলরদের যে কাজগুলো দেওয়া রয়েছে, তা থেকে তাঁদের অব্যহতি দেওয়া হতে পারে। দল চাইলে সব করতে পারে।”
প্রসঙ্গত, নিজেদের ওয়ার্ডে বিজেপির থেকে পিছিয়ে পড়েছেন ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের ফল পর্যালোচনা করে দেখেছেন, গ্রাম বাংলায়, প্রত্যন্ত গ্রামে আমাদের যে ফল হয়েছে, তার তুলনায় আধা শহুরে কিংবা আর্বান এলাকায় আমাদের ফল ভাল হয়নি। ধরুন আপনি একটা সংস্থায় কাজ করেন, তাহলে তো আপনাকে পারফর্ম করতেই হবে। পারফর্ম করতে না পারলে পার্টি উপযুক্ত পদক্ষেপ নিশ্চয়ই করবে। কাজ না করলে পদ হারানো উচিত।” পিছিয়ে রয়েছেন ১১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর স্বরাজ মণ্ডল, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অসীম বসু, ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর দেবলীনা বিশ্বাস।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ৩৭.৯ শতাংশ ভোট। ২০২৪ পেল ৩৮.৭৩ শতাংশ ভোট। বিজেপি-র ১০ হাজারের কম ব্যবধান রয়েছে, এমন ৪৯ টা আসনে ত়ণমূল জিতেছে। ২১ টা বিধানসভা আসনে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির ব্যবধান ১০-১৫ হাজারের। ৯ টা বিধানসভা রয়েছে, যেখানে অতীতে কখনও বিজেপে জেতেনি। লোকসভায় লিড পেয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বড়ঞা, জঙ্গিপুর, সন্দেশখালি, রামনগর। এবারের লোকসভা নির্বাচনে ১৯২টা আসনে তৃণমূল এগিয়ে, ৯০ টিতে বিজেপি এগিয়ে, ১১ টায় কংগ্রেস আর ১ টায় বাম। সুতরাং তৃণমূল নেতৃত্বের কাছেও এটা স্পষ্ট কোথায় ঠিক কোন কারণে ব্যবধান কম।
বিজেপি নেতা তাপস রায় বলেন, “মানুষের ভোটের প্রতিফলনে এটা হয়নি, সেটা ওরাও জানে। তবে সব কেন্দ্রের কথা বলছি না। যেখানে যেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে, তাহলে মানুষের ভোটের প্রতিই কি শ্রদ্ধাশীল নয়? এই নজরদারি, খবরদারি, অনেক বছর আগে করার দরকার ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। সেটা করলে ১৩ বছর পর এসে শহিদ তর্পণ করতে গিয়ে আর বলতে হত না।”
Post A Comment:
0 comments so far,add yours