কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র কের উত্তাল বাংলাদেশ। এই অবস্থায় বুধবার (১৭ জুলাই), সেই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল। একইসঙ্গে আবাসিক হলগুলি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। তবে আন্দোলনকারীদের দাবি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের দখলে চলে যাওয়াতেই তাড়াহুড়ো করে এই সিদ্ধান্ত নিল হাসিনা সরকার।

শিক্ষাকেন্দ্রে পড়ল তালা! 'কফিন মিছিল'-এ প্রতিবাদ বাংলাদেশে
পিছু হটছেন না কোটা আন্দোলনকারীরা


আজ থেকে পাঠশালা বন্ধ’, ‘হীরক রাজার দেশে’ ফিল্মের সেই সংলাপই যেন শোনা গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যর মুখে। কোটা আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। ছাত্রছাত্রীদের এই আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এদিন, সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হল। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বুধবার (১৭ জুলাই) থেকে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হল। মঙ্গলবার রাতেই, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাক্রম বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। একইসঙ্গে আবাসিক হলগুলি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। মঙ্গলবার, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুর মিলিয়ে কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তারপরই, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউজিসি।

মঙ্গলবার রাতে ইউজিসি বলেছিল, বাংলাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অধিনস্থ মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ সব কলেজই বুধবার থেকে বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে, তাদের আবাসিক হলগুলি ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। মঞ্জুরি কমিশনের এই নির্দেশের বিষয়ে কী করণীয়, তা নির্ধারণ করতে এদিন সকালে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট। সেই সভাতেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচর্য (শিক্ষা) তথা সিন্ডিকেট সদস্য সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেছেন, ‘প্রথমে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীদের প্রতি আমরা শোক ও সমবেদনা জানাই। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আজ সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের এর আগেই হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

তবে, আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের দাবি, তাঁদের আন্দোলনকে দমন করতেই সরকার তাড়াহুড়ো করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ করে দিল। আবাসিক হলগুলি ফাঁকা করে দিল। বস্তুত, মঙ্গলবারই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, আওয়ামি লিগের ছাত্র সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের আবাসিক হলগুলি থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই সব ঘটনার ছবি ও ভিডিয়োও ছড়িয়ে পড়েছিল। ইউজিসি-র নির্দেশ আসার আগে, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি চলে গিয়েছিল আন্দোলনকারীদের দখলে। সেই কারণেই ইউজিসির এই তড়িঘড়ি নির্দেশ বলে অভিযোগ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের।

এদিকে, সারা দেশে কোটা আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলিগের ‘ন্যক্কারজনক’ হামলার প্রতিবাদে, বুধবার দুপুর ২টোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে, ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল’ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাতেই এই কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়েছিল। গত দুই সপ্তাহ ধরেই ঢাকায় এই আন্দোলন চলছিল। আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনর এক মন্তব্যকে কেন্দ্র করে, সোমবার রাত থেকে আন্দোলন অন্য মাত্রা নেয়। মঙ্গলবার ৬ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পাশআপাশি আহত হন চার শতাধিক। তর মধ্যে অনেকে গুলিবিদ্ধও হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মঙ্গলবার বিকেল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুর ও রাজশাহীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি মোতায়েন করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে কি পরিস্থিতির মোকাবিলা করা সম্ভব, সেটাই এখন দেখার।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours