গরু পাচার মামলায় তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করার শর্তে জামিন পেলেন অনুব্রত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি তিহাড়ে জেলবন্দি। নির্দিষ্ট একটি মামলায় তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।

জামিন পেলেন অনুব্রত মণ্ডল, গরু পাচার মামলায় বড় রায় শীর্ষ আদালতের
জামিন পেলেন অনুব্রত


নয়া দিল্লি: অবশেষে জামিন পেলেন অনুব্রত মণ্ডল। জামিন মঞ্জুর করল সুপ্রিম কোর্ট। গরু পাচারের অভিযোগে CBI-এর করা মামলায় তদন্তে সব রকম সহযোগিতা করার শর্তে জামিন মঞ্জুর করেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদীর ডিভিশন বেঞ্চ। তবে ইডি-র দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে এখনও পর্যন্ত তিহাড় জেলেই থাকতে বলে হবে জানা গিয়েছে। এদিন সুপ্রিম কোর্ট এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে, তদন্তে সহযোগিতা না করলে আবারও গ্রেফতার করা হবে অনুব্রতকে।


মঙ্গলবারের শুনানিতেও অনুব্রতর জামিনের ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাবশালী তকমাই বারবার কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। সিবিআই-এর তরফে আইনজীবী এসভি রাজু, অ্যাডিশনাল সলিসেটর জেনারেল এই বিষয়টিকেই হাতিয়ার করেন। কতটা প্রভাবশালী সেটা বোঝানোর জন্য সিবিআই সওয়াল করে, অনুব্রত জেলে থাকাকালীনই ফোন করেছিলেন মনীশ কোঠারিকে। তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, মণীশ কোঠারি যেন কারোর কাছে মুখ না খোলেন, তাহলে পরিণতি ভয়ঙ্কর হবে। পরবর্তীতে এক বিচারককেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।

CBI-এর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিচারপতি এটাই জানতে চান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ করেছে পুলিশ? অনুব্রতর প্রভাব কতটা, সেটা বোঝানোর জন্য আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে সিবিআই। সিবিআই-এর আইনজীবী সওয়াল করেন, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে আমলাকে বদলি করিয়েছিলেন অনুব্রত।

পাল্টা অনুব্রতর আইনজীবী বারবার শীর্ষ আদালতে এটাই সওয়াল করেন, অনুব্রতর সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া এনামুল হক ও আরও এক ব্যক্তি, তাঁরা প্রত্যেকেই একই মামলায় জামিন পেয়েছেন। কিন্তু অনুব্রত কেন পাচ্ছেন না? কেষ্টর আইনজীবীর বক্তব্য, গরু পাচারচক্রে অনুব্রত সরাসরি কীভাবে জড়িত কিংবা কত টাকার লেনদেন হয়েছে, তার এখনও শক্তপোক্ত তথ্য সিবিআই আদালতে পেশ করতে পারেনি। জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে, অনুব্রত একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁর দ্বারা যেন কোনও ভাবে মামলা প্রভাবিত না হয়। কোনও সাক্ষীকেও প্রভাবিত না করতে পারেন, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। কোনও পরিস্থিতিতে অনুব্রত মণ্ডল যদি শর্তভঙ্গ করেন, তাহলে সিবিআই স্পেশ্যাল কোর্টে আবেদন জানাতে পারবে।

তবে জামিন পেলেও এখনই জেলমুক্তি নয় অনুব্রতর। ইডির মামলায় তিনি এখনও তিহাড় জেলেই থাকবেন। এদিনের শুনানির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক, এই গোটা মামলায় এখনও পর্যন্ত সিবিআই ট্রায়াল বা বিচারপ্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি। সেই বিষয়টা আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে মামলা করে ইডি-সিবিআই। প্রসঙ্গত, গত ১১ অগস্ট সকালে বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকায় অনুব্রতের বাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হানা দিয়েছিল সিবিআই। সেদিনটা ছিল রাখি। গরু পাচার মামলায় তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে আটক করে সিবিআই। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে আসানসোল আদালতে পেশ করা হয়। তারপর জেল হেফাজতে ছিলেন। এরই মধ্যে তদন্ত যত এগোতে থাকে, তৃণমূলের ‘কেষ্ট’-র একাধিক সম্পত্তির হদিশ পেতে থাকেন তদন্তকারীরা।

অনুব্রত ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৬.৯৭ কোটি টাকার হদিশ পাওয়া যায়। এছাড়ও প্রচুর নামে বেনামে জমি জায়গা সম্পত্তি, পরিচারক, রাঁধুনীর নামেও সম্পত্তির হদিশ মেলে। এরপরই এই মামলায় যুক্ত হয় ইডি। এত বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির উৎস জানতে আসানসোল জেল হেফাজতে গিয়ে অনুব্রতকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডি আধিকারিকরা। তারপর তাঁকে শোন অ্যারেস্ট করা হয়। এরপর ইডি অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে চান। কিন্তু দিল্লি না যেতে চেয়ে পাল্টা আইনি লড়াইয়ে নামেন অনুব্রত। কিন্তু শেষমেশ অনুব্রতকে দিল্লি যেতেই হয়।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours