রথযাত্রায় পাঁপড় - জিলিপি কেন খাওয়া হয় জানেন?
রথযাত্রা মেলার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর মেলার হরেক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অতি পরিচিত বা প্রায় মাস্ট আইটেম হল পাঁপড় আর জিলিপি। যাঁরা রথযাত্রার দিনে রথ টানেন না, বা কোনও রথের মেলায় যেতে পারেন না, তাঁরাও আর কিছু না হোক, একটু জিলিপি ও পাঁপড়ের আস্বাদ নেনই এদিন। কিন্তু, রথযাত্রার সঙ্গে পাঁপড় ভাজা, জিলিপি খাওয়ার চল কীভাবে শুরু হল জানেন?
রথযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে জিলিপি-পাঁপড় ভাজা। এগুলি ছাড়া যেন রথযাত্রা উৎসব অসম্পূর্ণ। কিন্তু, রথযাত্রার সঙ্গে পাঁপড় ভাজা, জিলিপি খাওয়ার চল কীভাবে শুরু হল জানেন?
জিলিপি মূলত আফগানিস্তানের খাবার। পুরাণ বা প্রাচীন পুঁথিতে জিলিপির উল্লেখ নেই। মুঘল সম্রাটদের হাত ধরেই বাংলায় জিলিপি খাওয়ার চল শুরু হয়। পরবর্তীতে বর্ধমানের রাজা মহতাবচন্দ্র বাহাদুর ইফতারের সময় তাঁর পাচকদের দিয়ে মানকচুর জিলিপি তৈরি করে বিলি করতেন। সেটা দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল এবং বিভিন্ন মেলায় ঠাঁই পেয়েছিল।
আর পাঁপড় মূলত উত্তর ভারতের খাবার, আরও ভালভাবে বললে পঞ্জাব থেকে এসেছে পাঁপড়। তবে রামায়ণেও পাঁপড়ের উল্লেখ রয়েছে। রামচন্দ্র ও তাঁর সেনাবাহিনীর জন্য ভরদ্বাজ মুনি যে বাঙালি খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছিলেন, সেই মেনুতে ছিল পাঁপড়।
কিংবদন্তি রয়েছে, রথযাত্রার আগে স্নানযাত্রায় ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করেন জগন্নাথদেব। তারপর জগন্নাথদেবের জ্বর আসে। সেই সময় তিনি টানা ৭ দিন নিভৃতবাসে ছিলেন। পাচন খাইয়ে সুস্থ করা হয় জগন্নাথদেবকে। তারপর বলরামদেব এবং সুভদ্রাদেবীর সঙ্গে রথে করে গুন্ডিচায় মাসির বাড়ি যান জগন্নাথদেব। তখন মুখের স্বাদ বদল করতে তাঁর নোনতা খাওয়ার ইচ্ছা হয়। তখনই নাকি পাঁপড় ভাজা খান জগন্নাথদেব। আর মিষ্টি হিসাবে জিলিপি খান। যদিও জগন্নাথদেবের ৫৬ ভোগে জিলিপি বা পাঁপড় ভাজার ঠাঁই হয়নি। তবে আগে বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে রথের মেলা বসত। সেখানে চাষাভূষা মানুষদের পক্ষে দামি মিষ্টি কেনার সামর্থ্য ছিল না। তাই অল্প পয়সার জিলিপি মেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায়। আর এভাবেই রথযাত্রা থেকে বিভিন্ন মেলায় জায়গা করে নেয় জিলিপি। আর নোনতা খাবার হিসাবে জিলিপির দোসর হয়ে ওঠে পাঁপড় ভাজা। গ্রামাঞ্চলের মেলায় সেঁকা পাঁপড়ও দেদার বিক্রি হয়। আর এভাবেই রথযাত্রার ঐতিহ্য হয়ে উঠেছে পাঁপড়-জিলিপি।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours