২০১৯-এ উত্তর প্রদেশের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে এনডিএ জিতেছিল ৬৪টিতে। আর এবার আসন সংখ্যা নেমে এসেছে ৩৬-এ। পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে, দলের শীর্ষনেতাদের একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন জমা দিল বিজেপির উত্তর প্রদেশ শাখা। ১৫ পৃষ্ঠার সেই বিশ্লেষণে, বিজেপির খারাপ ফলের পিছনে ছয়টি প্রাথমিক কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।


 BJP-র রিপোর্টে উঠে এল ৬ কারণ, উত্তর প্রদেশে খারাপ ফলের জন্য দায়ী যোগী?
ষোগী আদিত্যনাথ এবং নরেন্দ্র মোদী (ফাইল ছবি)



চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সবথেকে বড় ধাক্কা খেয়েছে উত্তর প্রদেশে। ২০১৯-এ রাজ্যের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে এনডিএ জিতেছিল ৬৪টিতে। আর এবার আসন সংখ্যা নেমে এসেছে ৩৬-এ। তারপর থেকে বিভিন্ন মহলে চর্চা চলছে, য়োগী রাজ্যে দলের অন্দরেই চলছে বিরোধ। এরই মধ্যে, লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে, দলের শীর্ষনেতাদের একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিজেপির উত্তর প্রদেশ শাখা। ১৫ পৃষ্ঠার সেই বিশ্লেষণে, বিজেপির খারাপ ফলের পিছনে ছয়টি প্রাথমিক কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসনিক উচ্ছৃঙ্খলতা, দলীয় কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ, ঘন ঘন প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং সরকারি পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগের মতো উদ্বেগগুলি তুলে ধরা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিধায়কদের হাতে কোনও ক্ষমতাই নেই। জেলাশাসক এবং অন্যান্য আধিকারিকরাই শাসন করছেন। এতে বিজেপি কর্মীরা অপমানিত বোধ করেছেন। দলীয় কর্মীদের জায়গা সরকারি কর্তারা কখনও নিতে পারেন না। দলীয় কর্মীদের উপযুক্ত সম্মান দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

রাজ্যে শুধুমাত্র গত তিন বছরেই অন্তত ১৫টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। বিজেপি সংরক্ষণ বাতিল করতে চায় বলে বিরোধীরা যে আখ্যান তৈরি করেছিল, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সেটাই মানুষের মনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দিয়ে সরকারি চাকরির শূন্যপদ পূরণ করায়, সেই ধারণাই আরও পুষ্ট হয়েছে। আর তাতে সার-জল দিয়েছে সংরক্ষণ নীতির বিরুদ্ধে দলীয় নেতাদের বিভিন্ন বিবৃতি।

এই প্রতিবেদনে কুর্মি এবং মৌর্য সম্প্রদায়ের সমর্থন কমেছে এবং দলিত ভোটও কমেছে বলে উল্লেখ করে হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুর্মি এবং মৌর্য জাতির ভোট এবার পায়নি বিজেপি। আর দলিত সমাজের মাত্র এক তৃতীয়াংশ ভোট এসেছে গেরুয়া শিবিরে।

মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির ভোট কমা এবং নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে কংগ্রেসের কর্মক্ষমতার উন্নতিও বিজেপির খারাপ ফলের অন্যতম কারণ বলে স্বীকার করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএসপি-র ভোট ১০ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি, উত্তর প্রদেশের অন্তত তিনটি অঞ্চলে কংগ্রেসের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এতে সামগ্রিক ফলাফল প্রভাবিত হয়েছে।

দলের রাজ্য শাখার আরও এক বড় পর্যবেক্ষণ হল, এবার টিকিট সম্ভবত একটু বেশিই দ্রুত বন্টন করা হয়েছিল। যার ফলে, প্রচার পর্বের শুরুতেই কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ভোট ষষ্ঠ এবং সপ্তম ধাপে আসতে আসতে, কর্মীদের মধ্যে ক্লান্তি তৈরি হয়েছিল।

বিজেপির রাজ্য শাখা আরও বলেছে, বিরোধীরা কার্যকরভাবে এমন সমস্যাগুলি তুলেছিল, যা মনে ধরেছিল জনগণের। ওল্ড পেনশন স্কিমের মতো সমস্যাগুলি প্রবীণদের মনে নাড়া দিয়েছে। আবার, অগ্নিবীর এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো উদ্বেগগুলি তরুণ সামজকে টেনেছিল।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লখনউয়ে রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটি এক সভায়, এই সমস্যাগুলি নিয়মতান্ত্রিকভাবে সমাধান করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, ভূপেন্দ্র চৌধুরী এবং উত্তর প্রদেশের অন্যান্য প্রধান নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছেন বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা। এই বিষয়গুলি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করতে হবে বলে মনে করছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই রাজ্য নেতাদের সঙ্গে ভাগে ভাগে কথা বলা হচ্ছে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours