সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মলিন হয়েছে দেওয়ালের রঙ। আবাসনের হতশ্রী অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন খোদ মমতা বন্দোপাধ্যায়ও। কিন্তু সেই ফ্ল্যাট ছেড়ে কোনওদিন এক পা-ও নড়েননি বুদ্ধবাবু। প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ১১ বছর মুখ্যমন্ত্রী থেকেছেন, একটানা ২৪ বছর ছিলেন বিধায়ক।
পাম অ্যাভিনিউয়ের দু'কামরায় কী 'মধু' আছে? এক দশক মুখ্যমন্ত্রী থেকেও কেন ছাড়লেন না বুদ্ধবাবু?
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
বয়সের ভারে চলাফেরা প্রায় বন্ধ। মাঝে মাঝেই ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। এই বছর খানেক আগেও অসুস্থ হয়ে একটানা বেশ কিছুদিন ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। কিন্তু যেই বাড়ি যাওয়ার খবর পান, তাঁর চোখ যেন মুখ খুশিতে ভরে ওঠে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। থাকুক না রাইস টিউব বা বাইপ্যাপের ব্যবস্থা, তবু বাড়িতেই স্বছন্দ তিনি। বাড়ি মানে তাঁর সেই দু কামরার ফ্ল্যাট।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মলিন হয়েছে দেওয়ালের রঙ। আবাসনের হতশ্রী অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন খোদ মমতা বন্দোপাধ্যায়ও। কিন্তু সেই ফ্ল্যাট ছেড়ে কোনওদিন এক পা-ও নড়েননি বুদ্ধবাবু। প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে ১১ বছর মুখ্যমন্ত্রী থেকেছেন, একটানা ২৪ বছর ছিলেন বিধায়ক। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পেরিয়ে রাইটার্স বিল্ডিং-এ পৌঁছে গেলেও ঠিকানা বদলাননি কখনও। কেন এত টান ওই বাড়ির প্রতি, কী আছে পাম অ্যাভিনিউ-এর ওই ফ্ল্যাটে? এক সাক্ষাৎকারে নিজেই জানিয়েছিলেন সে কথা।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর চাইলেই সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকতে পারতেন তিনি। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, ‘পুরনো অভ্যাস’ ছাড়তে পারেন না। কোনও অভ্যাসই না। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমার বই, আমার টেবিল.. ছেড়ে আসতে পারবো না। অসুবিধা হবে আমার।” তিনি তখন মুখ্যমন্ত্রী। দেশি, বিদেশি অতিথি, শিল্পপতিদের সঙ্গে তাঁর নিত্য ওঠাবসা। সেই প্রয়োজনে রাইটার্সেই বেশি সময় কাটাতেন তিনি। দরকার হলে দিন রাত পড়ে থাকতেন অফিসে, কিন্তু নিজের বাড়ি নিয়ে কোনও আপোষ নয়।
বাড়ির প্রতি কেন এত টান? বোঝাতে গিয়ে বুদ্ধবাবু ওই সাক্ষাৎকারে বলছেন, “সেই কলেজে লাইফ থেকে যে ধরণের পোশাক পরতাম, এখনও তেমন পরি। যা খেতে পছন্দ করতাম, এখনও তাই খাই। যে ভাবে আড্ডা মারতাম, সেভাবেই আড্ডা মারি। ওটাই আমার সামাজিক স্তর। খুব বড়, একটা সাজানো গোছানো ঘরে গেলে আমার অস্বস্তি হবে, মনে হবে ফিশ আউট অব ওয়াটার।” শুধু তাই নয়, বুদ্ধবাবু বক্তব্য ছিল, তিনি খুব স্বাধীনতাপ্রেমী। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি গোঁড়া নই, খুব স্বাধীনতা প্রেমী। ওই ঘরে থাকাটাও আমার একটা স্বাধীনতা।’
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাড়ি যে টালির চালের, এ কথা সবারই জানা। অনেকেই মনে করেন, ‘আমি তোমাদেরই লোক’ এটা বোঝাতেই অনেক নেতা নেত্রী বিলাস ব্যাসনের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখেন। কিন্তু সেই তুলনা মানতে রাজি ছিলেন না বুদ্ধদেব ভট্টাচাৰ্য। তিনি জানিয়েছিলেন, অতিথিদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর আলাদা ব্যবস্থা আছে তাঁর। ফলে বাড়ি ছোট হলেও কাজের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা ছিল না।
বুদ্ধবাবুর পরিবারও সবসময় তাঁর এই সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য বা সন্তান সুচেতনা ওই ঘরেই কাটিয়েছেন বরাবর। সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব ভট্টাচাৰ্য বলেছিলেন, ‘ওরা খুব খুশি। মেয়ে আমাকে তিন বার বলেছে, বাবা একদম বাড়ি ছেড়ে যাবে না।’ আজও বাড়ি ছেড়ে যাননি বুদ্ধদেব। চিকিৎসার বন্দোবস্তও আছে সেখানেই।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours