ওই শিশুর জন্মানোর হাসপাতালের যে ডিসচার্জ সার্টিফিকেট সেই নথি পুলিশকে জমা দেন রামেশ্বর পাণ্ডে। রামেশ্বর পাণ্ডে পুলিশকে জানান, তাঁর স্ত্রী বাসন্তী আদতে ওড়িশার বাসিন্দা। তাঁর কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে।

দত্তপুকুর লোকালে ছেলেধরা গুজবের বড় আপডেট: গভীর রাতে রেল পুলিশের কাছে ফোন এল সেই শিশুর বাবার, জানা গেল পরিচয়
দত্তপুকুর লোকালে ছেলেধরা গুজব


উত্তর ২৪ পরগনা: বিরাটিতে ট্রেনে ছেলে ধরা গুজবে অবশেষে সমাপ্তি। তদন্তের পর জিআরপি আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, শিশু ওই মহিলারই সন্তান। শিশু মোটেও ব্যাগে ছিল না। মহিলার কোলেই ছিল। মহিলার কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে, পুলিশের তরফ থেকে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বাচ্চাটিকে CwC এর হাতে তুলে দেওয়া হয়। বুধবার রাতে তাদের কাছেই ছিল শিশু। কিন্তু তখনও পর্যন্ত মহিলার পরিচয় জানতে সমস্যা হচ্ছিল পুলিশের। মহিলার বলা ঠিকানা গিয়েও বাড়ির খোঁজ করা হয়, কিন্তু তাঁর মানসিক সমস্যা থাকায় সঠিকভাবে রাস্তা বলে উঠতে পারেননি। এরই মধ্যে বুধবার গভীর রাতে গুজবের সমাপতন। জিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার গভীর রাতে রামেশ্বর পাণ্ডে নামে এক ব্যক্তি ফোন করেন। তিনি বিহারের সিবানের বাসিন্দা। তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেন, ওই মহিলা তাঁরই স্ত্রী ও শিশু তাঁদের সন্তান।


রেল পুলিশের কাছে রামেশ্বর জানান, তাঁর স্ত্রীর নাম বাসন্তী দেবী। তাঁরা আদতে বিহারের বাসিন্দা হলেও, গত কয়েক মাসে তাঁরা উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছিতে এসে থাকছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোররাতে রামেশ্বর পাণ্ডের সঙ্গে বামনগাছিতে তাঁর ভাড়া বাড়িতে পৌঁছয় রেল পুলিশ। পাণ্ডের প্রতিবেশী থেকে শুরু করে যথাযথ নথিপত্র খতিয়ে দেখার পর প্রমাণিত হয়, পাণ্ডে দম্পতিই ওই শিশুর বাবা-মা।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই শিশুর জন্মানোর হাসপাতালের যে ডিসচার্জ সার্টিফিকেট, তা পুলিশকে জমা দেন রামেশ্বর পাণ্ডে। রামেশ্বর পাণ্ডে পুলিশকে জানান, তাঁর স্ত্রী বাসন্তী আদতে ওড়িশার বাসিন্দা। তাঁর কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে। আর ভাষাগত তো বটেই। ট্রেনের বাকি যাত্রীরা তাঁকে যা প্রশ্ন করছিলেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। আর তাঁর কথাও বুঝতে পারেননি বাকি যাত্রীরা। সমস্ত নথি খতিয়ে দেখে শেষ পর্যন্ত পাণ্ডে দম্পতির হাতেই ওই শিশুকে তুলে দেয় রেল পুলিশ।


প্রসঙ্গত, বুধবার সকাল ৮.৪০ মিনিটের শিয়ালদহগামী দত্তপুকুর লোকালে একটি ভয়ঙ্কর অভিযোগ ওঠে। যা ঘিরে সকাল থেকে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল বিরাটি স্টেশন। অভিযোগ ওঠে, মহিলা কামরায় এক মহিলা একটি শিশু ব্যাগে পুরে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বিক্ষোভকারীরা প্রথম দাবি করতে থাকেন, ব্যাগের ভিতর বাচ্চাটা ছিল। ব্যাগটা হঠাৎই নাড়াচাড়া করতে দেখে সন্দেহ হয়। প্রথমে মহিলাকে প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু সঠিকভাবে তিনি উত্তর দিতে পারেননি। এরপরই মহিলা কামরায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মহিলাকে যথেচ্ছ নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোদ। রেল অবরোধ করে দীর্ঘক্ষণ চলতে থাকে বিক্ষোভ। সামাজিক মাধ্যমে ছেয়ে যায় এই গুজব। পুলিশের তরফ থেকে গুজব না ছড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর আগেও বারাসতের কাজীপাড়ায় বাচ্চা চুরির গুজব ছড়ায়। পরে দেখা যায় , যিনি গুজব ছড়িয়েছিলেন, তিনিই আদতে বাচ্চাটির জ্যেঠা। তিনি এগারো বছরের ভাইপোকে খুন করে কবর দিয়ে দিয়েছিলেন। তারপর থেকে উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক জায়গায়, বামনগাছি, দত্তপুকুর, বারাসত, গাইঘাটায় বাচ্চা চোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours