গবেষকরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে দেহের ওজন কমানোর চিকিৎসায় এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে জীবনযাপনের ধরন। যার মধ্যে অন্যতম শরীরচর্চা থেকে ডায়েট, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। কিন্তু, ঠিক কত ঘণ্টা উপবাস করা উচিত, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ৮ ঘণ্টা অন্তর খাওয়ার সঙ্গে হার্টের সমস্যার কারণে মৃত্যুর একটি যোগ পাওয়া গিয়েছে।


 ওজন কমাতে দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকছেন? অজান্তেই হার্টের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন না তো?
প্রতীকী ছবি।


আজকাল প্রায় সকলেই ওজন নিয়ে উদ্বিগ্ন। ওবেসিটি (obesity)-র সমস্যাও অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েটের উপর জোর দিতে বলছেন চিকিৎসক থেকে নিউট্রিশনিস্ট (পুষ্টিবিদ), ডায়াবেটোলজিস্ট সকলেই। তবে ডায়েট মেনে চলার ইচ্ছে আর রোজ সেই ডায়েট নিয়ম করে অক্ষরে-অক্ষরে মেনে চলা, এই দুইয়ের মধ্যে ফারাক দেখা যায় অনেকক্ষেত্রেই। আর এর অন্যতম কারণ হল ডাক্তার-ডায়াটিশিয়ানরা ঠিক যেটা করতে বারণ করেন, সেটাই করা: নিজের ইচ্ছেয় ডায়েট করা। যার পরিণাম হতে পারে ভয়ঙ্কর। বিশেষত না-জেনে, না-বুঝে ‘সবিরাম উপবাস’ বা ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ (Intermittent Fasting) করছেন যাঁরা, বিপদ আরও বেশি তাঁদের। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে সে কথাই।



কী এই ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’?

নির্দিষ্ট সময় মেনে, অনেকটা সময় বিরতি দিয়ে ডায়েট করেন, যাকে বলে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং বা সবিরাম উপবাস। এই রীতি অনুযায়ী, সাধারণত, দুপুরে লাঞ্চের পর রাত ৮টার মধ্যে ডিনার করে ফেলা হয়। পরদিন ব্রেকফাস্টও করাও হয় না। এই রীতিতে ডায়েট করলে দেহের ওজন অবশ্যই কমে। দীর্ঘদিন ধরেই জনপ্রিয় এই ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’। কিন্তু, দেহের ওজন কমাতে গিয়ে অজান্তেই হার্টের ক্ষতি করে ফেলছেন না তো?

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করলে দেহের ওজন কমে ঠিকই। কিন্তু, এই অভ্যাস হার্টের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ২০ হাজারেরও বেশি প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের উপর সমীক্ষা চালিয়ে এমনই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন মার্কিন সেন্টারের গবেষকরা। সাংহাই জিয়াও তোং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন-এর গবেষকদের নেতৃত্বে এই সমীক্ষাটি চালানো হয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সেই সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নিয়ে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের তরফে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দেখা যাচ্ছে, যাঁরা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করেন না, তাঁদের তুলনায় যাঁরা সারাদিনে ৮ ঘণ্টা খাবার না খেয়ে থাকেন, তাঁদের হার্ট-সংক্রান্ত কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি ৯১ শতাংশ। আবার যাঁরা ১২-১৬ ঘণ্টা অন্তর খাবার খান, তাঁদেরও স্ট্রোক থেকে হার্টের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে দেহের ওজন কমানোর চিকিৎসায় এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে জীবনযাপনের ধরন। যার মধ্যে অন্যতম শরীরচর্চা থেকে ডায়েট, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। কিন্তু, ঠিক কত ঘণ্টা উপবাস করা উচিত, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ৮ ঘণ্টা অন্তর খাওয়ার সঙ্গে হার্টের সমস্যার কারণে মৃত্যুর একটি যোগ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন সাংহাই জিয়াও তোং ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন-এর গবেষক তথা এই গবেষণার সিনিয়ার লেখক ভিক্টর উইঞ্জ ঝোং।

কাদের ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা একেবারে উচিত নয়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং সকলের জন্য নয়। বিশেষত, ২৫ বছরের কম বয়সি তরুণ এবং গর্ভবতী মহিলা, যাঁদের ক্যালোরির চাহিদা বেশি, তাদের দীর্ঘক্ষণ উপবাসের ডায়েট অনুসরণ করা উচিত নয়। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, হাই ডোজের ওষুধ এবং ইনসুলিনের নেন, তাঁদেরও ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা উচিত নয়। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদেরও এই রীতি অনুসরণ করা উচিত নয় বলে জানাচ্ছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কেবল ঘড়ি ধরে খাওয়ার সময় ঠিক করা, দেরি করে খাওয়া উচিত নয়। যাঁরা অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন, তাঁরা রাতেও খেতে পারেন।

তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিশিষ্ট অধ্যাপক কিইথ ফ্রাইন। ব্রিটিশ সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারে এক বিবৃতিতে তিনি জানান, ক্যালোরি কমানোর কমন স্ট্র্যাটেজি হল, বিরতি দিয়ে খাওয়া অর্থাৎ ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। এই অভ্যাস দীর্ঘস্থায়ী ক্ষেত্রে শরীরের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটার জন্য আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours