মার্চেই পশ্চিমাঞ্চলে থাবা বসাতে পারে তাপপ্রবাহ। রাজ্যের বাকি তল্লাট চলতি মাসে কিছুটা ছাড় পেলেও, এপ্রিল-মে মাসে বিন্দুমাত্র নিস্তার পাবে না। বস্তুত, এই ৩ মাস জুড়েই নির্বাচন, নির্বাচনী প্রচার হওয়ার সম্ভাবনা রাজ্যে। আশঙ্কার কথা, শুধু দিনে নয়, গরম ভোগাবে রাতেও।
শুধু দিনেই নয়, ভোটের ৩ মাসে বাংলাকে ভোগাবে রাতের গরমও
ভোটের সময় কেমন থাকবে বাংলার আকাশ?
লোকসভা ভোট আসছে। শুধু রাজনৈতিক উত্তাপ নয়, উষ্ণ হতে চলেছে প্রকৃতিও। আশঙ্কাবাণী শুনিয়ে মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, এ বারও গ্রীষ্মে লাগামছাড়া গরম পড়তে চলেছে দেশে। মার্চ থেকে মে, সেদ্ধ হওয়াই নিয়তি। রেহাই পাবে না বাংলাও। মার্চেই পশ্চিমাঞ্চলে থাবা বসাতে পারে তাপপ্রবাহ। রাজ্যের বাকি তল্লাট চলতি মাসে কিছুটা ছাড় পেলেও, এপ্রিল-মে মাসে বিন্দুমাত্র নিস্তার পাবে না। বস্তুত, এই ৩ মাস জুড়েই নির্বাচন, নির্বাচনী প্রচার হওয়ার সম্ভাবনা রাজ্যে। আশঙ্কার কথা, শুধু দিনে নয়, গরম ভোগাবে রাতেও।
গত বছর এপ্রিল মাসে ভয়াবহ তাপপ্রবাহের মুখে পড়তে হয়েছিল বাংলাকে। রাজস্থানের আগেই তাপপ্রবাহের দাপট শুরু হয়ে যায় জেলায় জেলায়। সাত বছর পর গ্রীষ্মে কলকাতার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে ঢুকে পড়ে। তাও একদিন নয়, এপ্রিলে পাঁচ-পাঁচটা দিন আলিপুরের পারদ ছিল চল্লিশের উপরে। মে, এমনকী জুনেও কলকাতাকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে ভ্যাপসা গরম। এ বার কী হবে?
মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, মার্চেই ওড়িশা আর ওড়িশা লাগোয়া পশ্চিমের কিছু জেলা তাপপ্রবাহের কবলে পড়ে যেতে পারে। যদিও চলতি মাসে বাকি রাজ্যে গরমের বাড়াবাড়ি কিছুটা কম থাকতে পারে। সার্বিক ভাবে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকার সম্ভাবনা। তবে এপ্রিল, মে মাসে গোটা রাজ্যেই দহন-দাপট চলবে। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূমের মতো পশ্চিমের জেলাগুলিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপপ্রবাহের আশঙ্কা। কলকাতা-সহ উপকূলের জেলাগুলিতে নাজেহাল করবে প্যাচপ্যাচে গরম। আর তার মধ্যেই চলবে ভোট! রাজস্থানে নিমলিতে আয়োজিত ‘অনিল আগরওয়াল ডায়লগে’ জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কোলে-র পরামর্শ, ”আগামী ২-৩ মাসে লোকসভা নির্বাচন ঘিরে প্রচার, ভোটদানকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ ভরদুপুরেই রাস্তায় বেরোবেন। গত বছর মহারাষ্ট্রে এমনই একটি জনসভায় হিট স্ট্রোক হয়ে ১২-১৩ জনের মৃত্যু হয়। সেরকম ঘটনা এড়াতে নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন থেকেই বিশেষ পরিকল্পনা করতে হবে। প্রয়োজনের ভোটগ্রহণের সময়সীমা বাড়াতে হবে।”
ইদানীং দেখা যাচ্ছে, শুধু দিনে নয়, রাতেও অস্বস্তি বাড়াচ্ছে গরম। গত বছর জুন, জুলাই, অগাস্ট… পর পর তিন মাসেই উষ্ণতম রাতের সর্বকালীন রেকর্ড গড়েছে কলকাতা। একাধিক রাতে ৩০ ডিগ্রি তো বটেই, ৩১ ডিগ্রিতেও পৌঁছে যায় পারদ। মৌসম ভবনের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলছেন, ”বাংলায় মার্চ থেকে মে, সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকারই সম্ভাবনা। এর অর্থ, তিন মাসের বেশির ভাগ দিনই রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের উপরে থাকবে।” গ্রীষ্মে রাত কতটা গুমোট হতে পারে, তার খানিকটা ইঙ্গিত দিয়েই রেখেছে ফেব্রুয়ারি। দেশের নিরিখে, এবারের ফেব্রুয়ারি ১২৪ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় উষ্ণতম। দিনের নয়, রাতের তাপমাত্রার নিরিখে।
গত মরসুমে গরমের দাপট বাড়ার অন্যতম কারণ ছিল প্রশান্ত মহাসাগরের এল নিনো। ভাল খবর, প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বাংশের জল আবার ঠান্ডা হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। অর্থাৎ, এল নিনোর পাট চুকিয়ে লা নিনা দশা শুরু হবে। যদিও তার আত্মপ্রকাশ হতে হতে জুন-জুলাই লেগে যাবে বলেই মনে করছে মৌসম ভবন। তাতে বর্ষার হাত শক্ত হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু যেহেতু মে পর্যন্ত এল নিনো থাকবে, তাই গ্রীষ্মে ছাড় পাওয়ার আশা প্রায় নেই বললেই চলে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours