কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা একটি ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ‘মনোজ যে কত বড় প্লেয়ার সবাই জানে। দলীপ ট্রফির একটা কথা। সৌরভ ছিল ম্যাচে। ও বলল, লক্ষ্মী অধিনায়ক হবে। আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম। মনোজকে বললাম তুমি লিড করো। আমি দেখব। ব্যাটসম্যানদের একটা কথাই বলি, কলিজা হবে তো সৌরভের মতো। আর সেটা দেখিয়েছে মনোজ।’
পাশে মহারাজ, সিএবির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চোখে জল মনোজের!
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কেরিয়ারেও এই দিনটা এসেছিল। মন না চাইলেও নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। বিদায় জানাতে হয় প্রিয় বাইশগজকে। কাজটা কতটা শক্ত, সৌরভ তা ভালোই জানেন। বাংলা ক্রিকেট সংস্থার তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হল সদ্য প্রাক্তনের দলে নাম লেখানো মনোজ তিওয়ারিকে। সিএবি কর্তাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বাংলা তথা দেশের ক্রিকেট আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মনোজ এত বছর ধরে ব্যাট হাতে বাংলাকে অনেক সোনালি মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন। সিএবির তরফে মনোজকে দেওয়া হল সোনার ব্যাট। আবেগ আর শুধুই আবেগের মুহূর্ত। কী বলছেন সৌরভ! দাদার পাশে চোখে জল মনোজের! বিস্তারিত রইল এর এই প্রতিবেদনে।
মনোজের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘যে কোনও ক্রীড়াবিদেরই খেলোয়াড় জীবন খুব কাছের। অনেক ত্যাগ সহ্য করে ১০-১৫ বছর কাটায়। মনোজের দক্ষতায় খামতি নেই। আমি মনে করি, জীবনে সুযোগের দরকার। ঠিক জায়গায়, সঠিক সুযোগ দরকার। আমি ২০০৬ সালে রঞ্জি ফাইনালে মনোজের মধ্যে স্পার্ক দেখেছিলাম। অনেকে ভারতের হয়ে খেলতে পারত। কিন্তু সুযোগ পায়নি। বাংলার হয়ে ১০ হাজার রান। যতদিন বাংলার ক্রিকেট থাকবে, ছবি লাগবে, ততদিন মনোজের ছবি লাগবে।’ প্রিয় মনোজকে দাদার বার্তা, ‘আমার তরফ থেকে শুভেচ্ছা। খেলোয়াড় জীবন শেষ। বাকি জীবন পরে থাকবে। তুমি এখন মন্ত্রী। কিন্তু তোমার ক্রিকেটীয় জীবন থেকে যাবে। আমি মনে করি তোমাকে বাংলা দলের সঙ্গে যুক্ত রাখবে সিএবি। যেমন লক্ষ্মী আছে।’
এই দিনটা আসবে, তিনিও জানতেন। কিন্তু মেনে নেওয়া যে সহজ নয়! মনোজও আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। চোখে জল। বলেন, ‘আজ এত বছর পর বাবাকে খুব মিস করছি। ২০১৭ সালে আইপিএল খেলার সময় খবর পাই। আমার জন্য বাবা মায়ের যে ত্যাগ আছে, তাদের কোনও ভাবেই মেটানো যায় না। সেই আবেগটা থেকে যাবে। সকাল থেকে চোখের জলটা আটকে রেখেছিলাম। কিন্তু আর পারলাম না। স্ত্রী পাশে ছিল সব সময়। অনেক বছর রিলেশনে ছিলাম। পরে বিয়ে হয়। যখন থেকে ও আমার জীবনে এসেছে আমার জীবন আরও ভালো হয়েছে। মাঝে মাঝে খারাপ খেললে বলতো, তুই পারবি না রে। সবার থেকে শোনা, আর পরিবারের থেকে শোনা আলাদা। একসঙ্গে ক্রিকেট আর রাজনীতি। ওর কনস্ট্যান্ট সাপোর্ট না থাকলে আমি কোনও কাজ করতে পারতাম না।’
সিএবির প্রাক্তন সভাপতি তথা আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য অভিষেক ডালমিয়া বলেন, ‘মনোজ আমার প্রাণের বন্ধু। যখনই আমাদের মনের, আবেগের কথা বলার থাকত, আমরা শেয়ার করতাম। রাত এগারোটাতেও। আমরা এত কাছ থেকে মনোজের সুন্দর ইনিংস দেখেছি। যখন জানতে চাইতাম তোমার স্বপ্ন কী? ও বলত, আমি অনেক কষ্টে টিম তৈরি করেছি। আজ যারা বাংলা থেকে জাতীয় দলে খেলছে তাদের পিছনেও মনোজের অবদান আছে। ক্রিকেটের সঙ্গে এরপরেও কোনও ভাবে যুক্ত থাকা যেতে পারে। কোচ আছে, প্রশাসন আছে। একটা ইনিংস হয়তো শেষ হল। অনেক রাস্তা খোলা থাকছে।’
মনোজ তিওয়ারির প্রাক্তন সতীর্থ তথা বাংলা দলের কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা মনোজের উত্থান দেখেছেন। তেমনই বিদায়ি ম্যাচও। আবেগঘন মুহূর্তে লক্ষ্মী বলছেন, ‘মনোজের সঙ্গে বহু বছর খেলেছি। ওকে বড় হতে দেখেছি। আমরা চাই, ক্রিকেট যুক্ত থাক ক্রিকেটারের সঙ্গে। অ্যাসোসিয়েশনের সমস্ত আলো থাকবে ক্রিকেটারের সঙ্গেই। মনোজ যে কত বড় প্লেয়ার সবাই জানে। দলীপ ট্রফির একটা কথা। সৌরভ ছিল ম্যাচে। ও বলল, লক্ষ্মী অধিনায়ক হবে। আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম। মনোজকে বললাম তুমি লিড করো। আমি দেখব। ব্যাটসম্যানদের একটা কথাই বলি, কলিজা হবে তো সৌরভের মতো। আর সেটা দেখিয়েছে মনোজ। শেষ দু’বছর ধরে ওর পা ভালো ছিল না। কিন্তু ওর মন ঠিক ছিল। টেকনিক জরুরি নয়, মন ঠিক রাখা জরুরি।’
Post A Comment:
0 comments so far,add yours