কেরলের বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচ চলাকালীন ফিল্ডিং করার সময় হঠাৎ ড্রেসিংরুম থেকে এবং সতীর্থদের থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পেতে থাকেন আকাশ দীপ। কোনও কিছু বুঝে উঠতেই পারছিলেন না বিহারের ছেলে। এরপর তিনি জানতে পারেন প্রথম বার দেশের হয়ে টেস্ট স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন।
৬ মাসের মধ্যে বাবা-দাদাকে হারিয়েছিলেন, ক্রিকেট আঁকড়েই আকাশ দীপ পেয়েছেন নতুন জীবন
৬ মাসের মধ্যে বাবা-দাদাকে হারিয়েছিলেন, ক্রিকেট আঁকড়েই আকাশ দীপ পেয়েছেন নতুন জীবন
কলকাতা: রঞ্জি ম্যাচ খেলতে আপাতত কেরলে গিয়েছেন বাংলার পেসার আকাশ দীপ (Akash Deep)। ম্যাচ চলাকালীন ফিল্ডিং করার সময় হঠাৎ ড্রেসিংরুম থেকে এবং সতীর্থদের থেকে শুভেচ্ছা বার্তা পেতে থাকেন আকাশ দীপ। কোনও কিছু বুঝে উঠতেই পারছিলেন না বিহারের ছেলে। এরপর তিনি জানতে পারেন প্রথম বার দেশের হয়ে টেস্ট স্কোয়াডে ডাক পেয়েছেন। কঠোর পরিশ্রম করে বাংলার এই পেসার ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের পরিচিতি তৈরি করেছে। ইন্ডিয়া এ টিমের হয়েও ভালো পারফর্ম করেছেন তিনি। এ বার যেন তারই ফল পেলেন। কঠিন পরিস্থিতিতে বিহারের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় এসেছিলেন। ৬ মাসের মধ্যে বাবা-দাদাকে হারিয়েছিলেন। তারপরও ক্রিকেট আঁকড়ে পেয়েছেন নতুন জীবন।
কেরল থেকে সংবাদসংস্থা পিটিআইকে আকাশ দীপ প্রথম বার দেশের হয়ে টেস্ট টিমে ডাক পাওয়ার অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘আমি আশাবাদী ছিলাম যে এইভাবে ভালো পারফর্ম করতে পারলে টেস্ট টিমে হয়তো সুযোগ পেতে পারি। কিন্তু সেটা যে দেশের মাটিতে চলতি টেস্ট সিরিজের তৃতীয় টেস্টেই হবে, তা ভাবিনি।’
২৭ বছর বয়সী আকাশ দীপের ক্রিকেটে হাতে খড়ি হয় টেনিস বল দিয়ে। দুর্গাপুর থেকে কলকাতায় আসেব প্রথম ডিভিশনের হয়ে খেলতে। আকাশ দীপের বাবা রামজি সিং ছিলেন শিক্ষক। তিনি কখনও চাইতেন না আকাশ দীপ ক্রিকেটার হোক। বরং তিনি আকাশ দীপকে সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিতে উৎসাহিত করতেন। আকাশ দীপ জানিয়েছেন, তিনি যখন ক্রিকেট খেলতেন, সেই সময় আসলে বিহারে ক্রিকেট খেলার মতো পরিকাঠামো এবং পরিবেশ কোনওটাই ছিল না। যে কারণে, বিহারের অনেক বাচ্চার মা-বাবা বলতেন তাঁদের বাচ্চারা যেন আকাশ দীপের সঙ্গে না মেশে। তাঁদের ভয় ছিল আকাশ দীপের সঙ্গে মিশলে তাঁদের সন্তানরা খারাপ হয়ে যাবে। আকাশ অবশ্য তার জন্য বিহারের কারও দোষ দেখেন না। কারণ সেই সময় ক্রিকেট যে কারও পেশা হতে পারে সেই ধারনাটাই ছিল না বিহারের বাসিন্দাদের।
আকাশ দীপের ক্রিকেট প্রেম কোনও বাধা মানেনি। কঠিন সময় পেরিয়ে সাফল্যের স্বাদ পেয়েছেন আকাশদীপ। তিনি বলেন, ‘ছয় মাসের মধ্যে বাবা ও দাদা মারা গিয়েছিল। আমার কাছে আর হারানোর কিছু ছিল না। একটাই জিনিস আত্মবিশ্বাস বাড়াত যে পরিবারের দায়িত্ব এ বার আমার কাঁধে।’
দুর্গাপুরে থাকার সময় জেলায় টেনিস বল ম্যাচ খেলে প্রতিদিন ৬০০০ টাকা পেতেন আকাশ দীপ। মাসে ২০ হাজার টাকা পেতেন তিনি। যা দিয়ে তাঁর সংসার চলত। বাংলার হয়ে অনূর্ধ্ব ২৩ দলে সুযোগ পাওয়ার আগে অবধি নিজে থেকেই ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতেন আকাশ দীপ। তিনি বলেন, ‘আমার কখনও নির্দিষ্ট কোনও কোচ ছিল না। সৌরাশিষ লাহিড়ী (বর্তমানে বাংলার সহকারী কোচ), অরুণ লাল স্যার, রন স্যার (রনদেব বসু) আমাকে সময়ে অসময়ে খুব সাহায্য করেছেন। আমি যা শেখার সেটা শিখেছি।’
আকাশ দীপের বাংলা টিমের সতীর্থ রয়েছেন ভারত-ইংল্যান্ড স্কোয়াডে। তাঁর জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে। এ বার দেখার আকাশ দীপের শিঁকে ছেড়ে কিনা। বহু বছর পর ভারতীয় টেস্ট টিমে বাংলার দুই পেসার একসঙ্গে সুযোগ পেলেন। আকাশ দীপের কথায়, ‘এটা গর্বের বিষয় যে আমি ও মুকেশ ভাই ভারতের ড্রেসিংরুমে একসঙ্গে এক টেস্ট টিমে থাকব। বাংলা আমাদের রাজ্য এবং বাংলা আমাদের সবকিছু দিয়েছে। এই জাতীয় দলে ডাক পেয়ে আমি বাংলার প্রতি কৃতজ্ঞ।’ বাংলা রঞ্জি টিমের অধিনায়ক, ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি প্রথম বার টেস্ট টিমে আকাশ দীপ সুযোগ পাওয়ায় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours