বিচারপতির মতে, অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে আকস্মিকভাবে অনেক সময়ই অনেকে অপর কোনও ব্যক্তিকে পাগল বলে থাকেন। এমনকি নৈমিত্তিক কথোপকথনেও অনেকে অপরকে পাগল বলে। এই সব ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবে শান্তি ভঙ্গের কোনও অভিপ্পরায় থাকে না। তাই একে অপরাধ বলা যায় না।
জনসমক্ষে কাউকে 'পাগল' বলা অপরাধ নয়, বলল এলাহাবাদ হাইকোর্ট
এলাহাবাদ হাইকোর্ট (ফাইল ছবি)
প্রয়াগরাজ: জনসমক্ষে কাউকে ‘পাগল’ বলা অভদ্রতা হতে পারে, কিন্তু ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৪ ধারা, অর্থাৎ, শান্তি ভঙ্গের উদ্দেশ্যে অপমানের অধীনে একে অপরাধ বলা যাবে না। সাফ জানাল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এই ক্ষেত্রে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্টের এক পুরোনো মামলা রায়ের উল্লেখ করেছে। ওই মামলার রায়ে শীর্ষ আদালত বলেছিল, কোনও ব্যক্তির শান্তি নষ্ট করার অভিপ্রায়ে তাঁকে অপমান করা হলে তবেই ভারতীয় দণ্ডবিধির এই ধারায় ওই কাজকে অপরাধ বলে গন্য করা হবে। কিন্তু, বর্তমান মামলায় পাগল বলাটা ছিল অনিচ্ছাকৃত স্বতঃস্ফূর্ত মন্তব্য। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আবেদনকারী বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনেছিলেন, তার প্রেক্ষাপটেই তিনি ওই মন্তব্য করেছিলেন। এই ক্ষেত্রে, কোন ব্যক্তির শান্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্য ছিল, তা বলা যায় না।
বিচারপতি বলেন, “প্রায়শই, এই ধরনের মন্তব্যগুলি কোনও অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে আকস্মিকভাবে করা হয়। এমনকি এটা একটা নৈমিত্তিক কথোপকথনের অংশও হতে পার, যেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে শান্তি ভঙ্গের কোনও অপরাধ থাকে না। যে কোনও ব্যক্তি এই জাতীয় মন্তব্য করলে, তা অভদ্র এবং অনুপযুক্ত বলা যেতে পারে। তবে এটা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৪ ধারার অধীনে অপরাধ হবে না।”
এই মামলার সূচনা হয়েছিল বারাণসী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে। প্রতিবন্ধী এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা এক আইনজীবী, কিরণ সোসাইটি নামে এক সংস্থার বিরুদ্ধে তহবিল তছরুপের অভিযোগ করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণের নামে বিদেশ থেকে তহবিল নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। ওই সংস্থার পরিচালক এবং আরও দশজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তকারীরা দুই পক্ষকেই এক বৈঠকে ডেকেছিলেন। সেখানেই ওই আইনজীবীকে কীরণ সোসাইটির পরিচালক পাগল বলে অপমান করেন বলে দাবি।
এরপরই তাঁর শান্তি ভঙ্গের জন্য তাঁকে অপমান করা হয়েছে বলে কিরণ সোসাইটির পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন ওই আইনজীবী। ২০২১ সালে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আইনজীবীর দায়ের করা আবেদন মেনে কীরণ সোসাইটির পরিচালককে দোষী সাব্স্ত করেছিলেন। এলাহাবাদ হাইকোর্টে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন কিরণ সোসাইটির ডিরেক্টর। হাইকোর্টে তিনি বলেন, ওই আইনজীবী তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অসার মামলা করেছেন। তাঁকে যে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করা হয়েছে, এমন কোনও প্রমাণ নেই। হাইকোর্ট তাদের যুক্তি মেনে নিয়ে জানিয়েছে, নিছক কাউকে পাগল বলাটা ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুসারে অপরাধ নয়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours