জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল সাবির চৌধুরি নিউজ৯ প্লাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, "রবীন্দ্র মাহাত্রেকে খুনের নির্দেশ দিয়েছিলেন আমানুল্লাহ খান। উনি জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। খানের ভয় ছিল, পুলিশ যেকোনও মুহূর্তেই অপহরণকারীদের হদিস পেতে পারে।"

৪০ বছর আগে বিদেশের মাটিতে খুন হয়েছিল ভারতীয় কূটনীতিক, রহস্যভেদ নিউজ৯ প্লাসের

নয়া দিল্লি: বিদেশের মাটিতে খুন হয়েছিলেন ভারতের এক কূটনীতিক। ৪০ বছর পর সেই খুনের রহস্য উদঘাটন হল। নিউজ৯ প্লাস সম্প্রতিই একটি তদন্তমূলক ডকুমেন্টারি প্রকাশ করে, যা ভারতের কূটনীতিক রবীন্দ্র মাহাত্রের খুনের রহস্যকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। কীভাবে ব্রিটেনের মাটিতে খুন হয়েছিলেন ওই কূটনীতিক এবং তাঁর খুনের পিছনে কার হাত ছিল, গোটা ঘটনারই রহস্য ফাঁস করেছে নিউজ৯ প্লাস।

‘মার্ডার অব অ্য়ান ইন্ডিয়ান ডিপ্লোম্যাট’ নামক ওই তদন্তমূলক ডকুমেন্টারিতে দেখা হয়েছে, ইংল্যান্ডের বির্মিংহামে কীভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল ভারতীয় কূটনীতিককে। রবীন্দ্র মাহাত্রে ইংল্য়ান্ডের বিরমিংহ্যামে ভারতীয় দূতাবাসে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি চার জঙ্গি তাঁকে অফিস থেকে অপহরণ করে। পরেরদিন কাশ্মীর লিবারেশন আর্মি এই অপহরণের দায় স্বীকার করে নেয়।

ওই কূটনীতিককে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে অপহরণকারীরা তিহার জেলে বন্দি থাকা জঙ্গি মকবুল ভাট ও আরও ৯ জঙ্গিকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানায়। পাশাপাশি মুক্তিপণ বাবদ ১০ লক্ষ পাউন্ডও দাবি করে। তবে ভারত সরকারের কোনও পদক্ষেপ করার আগেই, ৫ ফেব্রুয়ারি মাহাত্রের নিথর দেহ উদ্ধার হয়। এক বাইক চালক প্রথম তাঁর দেহ দেখতে পান। পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে মাথায় পরপর দু’বার গুলি করে হত্যা করা হয় ভারতীয় কূটনীতিককে।

নিউজ৯ প্লাস তদন্ত করে ওই কূটনীতিকের হত্যাকারীকে খুঁজে বের করেছে। মালিক মাসারাত নামক পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কোটলির বাসিন্দা এক ব্যক্তিই ভারতীয় প্রতিনিধিকে খুন করেছিল, এমনটাই তদন্তে জানা গিয়েছে। ওই নৃশংস হত্য়াকাণ্ডের দুই সাক্ষীও পাওয়া গিয়েছে, যারা মাহাত্রের খুনিকে শনাক্ত করেছেন।

জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের প্রাক্তন সেক্রেটারি জেনারেল সাবির চৌধুরি নিউজ৯ প্লাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “রবীন্দ্র মাহাত্রেকে খুনের নির্দেশ দিয়েছিলেন আমানুল্লাহ খান। উনি জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। খানের ভয় ছিল, পুলিশ যেকোনও মুহূর্তেই অপহরণকারীদের হদিস পেতে পারে। এতে জেকেএলএফ-র সম্মানহানি হবে। সেই কারণেই অপহরণকারীদের জেকেএলএফের নতুন পরিচয় দেওয়া হয়।”

আমানুল্লাহ খানের ঘনিষ্ট সঙ্গী তথা ভারতের প্রথম হাইজ্যাকার হাসিম কুরেশি, যিনি ১৯৭১ সালে গঙ্গা এয়ারক্রাফ্ট হাইজ্যাক করেছিলেন, তিনি বলেন, “মাসরত ইকবাল এই অপহরণে যুক্ত ছিল। ওঁ আমানুল্লাহ খানের ভাড়াটে ছিল। অপহরণের পর ওঁ-ই আমানুল্লাহকে ফোন করে এবং জানায় যে পুলিশ যেকোনও মুহূর্তেই তাদের কাছে পৌঁছতে পারে। তারা কী করবে, এই প্রশ্ন করতেই আমানুল্লাহ আমার সামনেই বলে যে ওঁকে (রবীন্দ্র মাহাত্রে) গুলি করে মেরে দাও এবং দেহ লোপাট করে দাও। আমি আমানুল্লাহর বিরোধিতা করি। ওই নিরাপরাধ ব্যক্তিকে মেরে ফেলতে বারণ করি।”

কয়েক মাস ধরে নিউজ৯ প্লাসের তদন্তে আরও জানা গিয়েছে যে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকেও ব্রিটেনে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ১৯৮৫-৮৬ সালে ফ্রান্সে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকেও খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

যেখানে বিগত কয়েক মাস ধরে আমেরিকা ও কানাডায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূতরা ক্রমাগত খালিস্তানি জঙ্গিদের কাছ থেকে খুনের হুমকি পাচ্ছেন, সেখানেই নিউজ৯ প্লাসের এই তদন্তমূলক সাংবাদিকতা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ৪০ বছর পুরনো খুনের রহস্য উদঘাটন করে।

রবীন্দ্র মাহাত্রের কন্যা আশা ডি’সুজা জানান, তাঁর বাবার হত্যাকারীদের শাস্তি চান তিনি। আশা বলেন, “আমি কারোর মৃত্যুকামনা করছি না, কিন্তু বিচার হোক, অপরাধীকে গ্রেফতার করা হোক, যাতে সাধারণ মানুষ জানতে পারে ওঁরা কী অপরাধ করেছিল।”

প্রসঙ্গত, নিউজ৯ প্লাস হল বিশ্বের প্রথম সংবাদমাধ্যমের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours