২০১৭ সালের ২ মে। বারাসতের হৃদয়পুরে নিজের বাড়িতেই খুন হন অনুপম সিংহ। সেই ঘটনায় পুলিশের স্ক্যানারে আসে মনুয়া ও তাঁর প্রেমিক অজিত। যেদিন রাতে অনুপম মারা যান, মনুয়া ছিলেন বাপের বাড়িতে। ওদিকে অনুপমের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন অজিত। 

অনুপমকে যখন মারা হচ্ছে, সেই মুহূর্তে তাঁর প্রাণপণ চিৎকার মোবাইল ফোনে শুনছিলেন মনুয়া, তাড়িয়ে তাড়িয়ে তা উপভোগ করেছিলেন। এমন ঘটনা সামনে আসতেই শিউরে ওঠে বাংলা।


 স্বামীহন্তা সেই মনুয়া এখন রবীন্দ্রনাথের 'শ্যামা', জেলেই সম্পাদনা করেন সাময়িকী
বাঁদিকে অনুপম সিং, মাঝে মনুয়া, ডানদিকে অজিত।

পূর্ব বর্ধমান: ২০১৭ সালের ঘটনা। বিবাহ বহির্ভূত প্রেম এবং সেই প্রেমের অমোঘ টানে স্বামীকে খুনের অভিযোগ উঠেছিল উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের হৃদয়পুরের মনুয়া মজুমদারের বিরুদ্ধে। পরে নিজেই মনুয়া কবুল করেছিলেন, কীভাবে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে প্রেমিক অজিত রায়কে দিয়ে স্বামী অনুপম সিংহকে খুন করিয়েছিলেন। আদালতের বিচারে দোষী প্রমাণিতও হন। সেই মনুয়া এবার রবীন্দ্রনাথের ‘শ্যামা’।


২০১৭ সালের ২ মে। বারাসতের হৃদয়পুরে নিজের বাড়িতেই খুন হন অনুপম সিংহ। সেই ঘটনায় পুলিশের স্ক্যানারে আসে মনুয়া ও তাঁর প্রেমিক অজিত। যেদিন রাতে অনুপম মারা যান, মনুয়া ছিলেন বাপের বাড়িতে। ওদিকে অনুপমের বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন অজিত। অনুপমকে যখন মারা হচ্ছে, সেই মুহূর্তে তাঁর প্রাণপণ চিৎকার মোবাইল ফোনে শুনছিলেন মনুয়া, তাড়িয়ে তাড়িয়ে তা উপভোগ করেছিলেন। এমন ঘটনা সামনে আসতেই শিউরে ওঠে বাংলা।

স্বামীকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত মনুয়া এখন বর্ধমান সংশোধনাগারে বন্দি। ২০২১ সালে এখানে আসেন তিনি। খুনের অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত মনুয়া খুব ভাল নাচেন। গত ১ ডিসেম্বর বর্ধমানে এক খাদ্যমেলায় তিনি নৃত্য পরিবেশন করেন। দারুণ প্রশংসাও পেয়েছেন।

অনেকেই তাঁর অতীত জানেন না। আর পাঁচজন শিল্পীর আসনে বসিয়েই বিচার হয়েছে তাঁর গুণের। প্রশংসাও পেয়েছে। অতীত ভুলে নতুন ভাবে বাঁচার লক্ষ্যে মনুয়া। রবীন্দ্রনাথের শ্যামা যখন বলছে, ‘ক্ষমা করো নাথ, ক্ষমা করো। এ পাপের যে অভিসম্পাত, হোক বিধাতার হাতে নিদারুণতর’, দর্শকদের চোখে এ যেন মনুয়ারই স্বগতোক্তি। বেশ কিছুদিন রিহার্সাল করার পর শুক্রবার বর্ধমানের উৎসব ময়দানে মনুয়ার নৃত্য নজর কেড়েছে দর্শকদের। কখনও ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’ আবার কখনও ‘আলোকের ঝরনা ধারায়’, নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মোহিত করে রাখেন মনুয়া।

কারা দফতরের এক আধিকারিক জানান, মনুয়া মধ্যে নানা প্রতিভাই রয়েছে। সংশোধানাগারে বন্দিদের নানাভাবে কর্মব্যস্ত, সংস্কৃতিমুখর রাখার চেষ্টা করে সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। তারই অঙ্গ হিসাবে শেখানো হয় নাচ। সেই ক্লাসেই মনুয়াও ছাত্রী। ওই আধিকারিকের কথায়, শুধু নাচ নয়, মনুয়া সম্পাদনারও কাজ করেন। পুজোর সময় জেল থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তমনে’ সাময়িকীর সম্পাদক ছিলেন তিনিই।

সংশোধনাগারের আবাসিকদের যিনি নাচ শেখান, সেই গুরু বলেন, মনুয়ার মধ্যে প্রতিভার প্রকাশ আগে থেকেই ছিল। তাঁদের কাছে সব ছাত্রীই সমান। তবে মনুয়া সব দিকে থেকে এগিয়ে থাকা এক ছাত্রী। তাঁর মধ্যে এক কুশলী এক নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠার সব সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সূত্রে খবর, অষ্টমীর দিন একটি সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে। যার নাম ‘মুক্তমনে’। সংশোধনাগারের আবাসিকরা নিজেদের কথা সেখানে লিখেছেন মুক্ত মনে। তারই সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন মনুয়া। এমনও জানা গিয়েছে, দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে থাকাকালীন দফতরের উদ্যোগে শুরু হওয়া ‘দমদম রেডিয়ো’তে রেডিয়ো জকির ভূমিকায় ছিলেন তিনি। মহিলাদের ক্রিকেটে স্কোরারের ভূমিকায়ও ছিলেন। পুজোয় এই বর্ধমান সংশোধনাগারে নাচে-গানে ‘মহিষাসুর বধ’ হয়। সেখানেও মনুয়া ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours