প্রতীকী ছবিকেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি-র ২০২২-এর রিপোর্ট বলছে, এই বছরে রাজ্যে রাজনৈতিক কারণে একটিও হত্যা হয়নি! স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক হিংসার ভুড়িভুড়ি অভিযোগের মধ্যে, এনসিআরবি-র এই তথ্য নিয়ে বিস্ময় জেগেছে রাজনৈতিক মহলে। ফের উঠতে শুরু করেছে একটি পুরোনো প্রশ্ন, রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে তথ্য কি চেপে যাচ্ছে রাজ্য সরকার?
কলকাতা: বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের শেষ নেই। বিশেষ করে বিজেপি-র পক্ষ থেকে মাঝেমাঝেই, তাদের নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক কারণে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। অথচ, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি-র ২০২২-এর রিপোর্ট বলছে, এই বছরে রাজ্যে রাজনৈতিক কারণে একটিও হত্যা হয়নি! স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক হিংসার ভূরি-ভূরি অভিযোগের মধ্যে, এনসিআরবি-র এই তথ্য নিয়ে বিস্ময় জেগেছে রাজনৈতিক মহলে। ফের উঠতে শুরু করেছে একটি পুরোনো প্রশ্ন, রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে কি তথ্য চেপে যাচ্ছে রাজ্য সরকার?
এনসিআরবি-র রিপোর্ট বলছে, ২০২২ সালে পশ্চিমবঙ্গে মোট ১৬৯৬টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সাল (১৯৪৮টি হত্যা) এবং ২০২১ সালের (১৮৮৪টি হত্যা) তুলনায় অনেকটাই কমেছে হত্যার সংখ্যা। হত্যার মোটিভ অর্থাৎ, কারণ হিসেবে সবার আগে আছে পণের দাবি। ২০২২-এ পণের দাবি সংক্রান্ত বিবাদের কারণে, বাংলায় মোট ৩২২টি হত্যা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনসিআরবি-র তথ্য। এছাড়া, অন্যান্য কারণে হত্যা হয়েছে ১১২৮টি। এর পাশাপাশি, আর্থিক লাভ (৫৫), ব্যক্তিগত শত্রুতা (৭০), প্রেম ঘটিত বিবাদ (২৮), অবৈধ সম্পর্ক (১২), ডাকাতি (৫), বিভিন্ন বিবাদ (১৫০) উঠে এসেছে হত্যার কারণ হিসেবে। তবে, রাজনৈতিক কারণে বাংলায় একটিও হত্যা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে এই রিপোর্টে। রাজনৈতিক হত্যার পাশাপাশি, কালো জাদু, বলি, সাম্প্রদায়িক কারণ, জাতিবাদ, শ্রেণি বিদ্বেষ, পারিবারিক সম্মান রক্ষা, নাশকতা, গ্যাংয়ের মধ্যে বিবাদ, সিরিয়াল কিলার, অজ্ঞ পাচারের মতো কারণেও বাংলায় একটিও হত্যা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে।
তবে, এই পরিসংখ্যান এক পুরোনো বিতর্ককে উসকে দিয়েছে। বস্তুত চলতি বছরের জুলাইয়েই রাজনৈতিক হিংসা ও মৃত্যুর তথ্য চেপে যাওয়া বা গোপন করার অভিযোগ উঠেছিল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। বাংলায় রাজনৈতিক হিংসা ও মৃত্যুর বিষয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট বিশ্বনাথ গোস্বামী। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বিভিন্ন সরকারি নথিতেই রাজনৈতিক হিংসা ও মৃত্যুর সংখ্যায় গরমিল রয়েছে। সেই অভিযোগ ছিল ২০২১ সালের তথ্য নিয়ে।
বিভিন্ন জেলায় আরটিআই করে বিশ্বনাথ গোস্বামী জেনেছিলেন, ২০২১ সালে ১,০১৭টি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে আর মৃত্যু হয়েছে ৬০টিরও বেশি। সব পুলিশ জেলা ও পুলিশ কমিশনারেট থেকে অবশ্য তথ্য দেওয়া হয়নি। কাজেই সংখ্যাটা আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। অথচ, ২০২১ সালে কলকাতা হাইকোর্টে হিংসা নিয়ে মামলা চলাকালীন রাজ্য পুলিশের ডিজি জানিয়েছিলেন, ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হত্যার সংখ্যা ছিল ২৯। একই বছরে এনসিআরবি-কে পাঠানো রিপোর্টে রাজ্য জানিয়েছিল, রাজনৈতিক হিংসার সংখ্যা ৩৪ এবং মৃত্যু ৭। এই বছরও কি একইভাবে তথ্য গোপনের ঘটনা ঘটেছে? বিরোধীরা অন্তত তাই দাবি করছেন।
NCRB-র রিপোর্ট নিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “এসব কথা শুনলে রাস্তার ইট, কাঠ, পাথরও হেসে উঠবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে রক্তাক্ত করল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ সালের ২ মের পর ২৭ দিনে বিজেপির ৫৬ জন কর্মী খুন হল। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, দু-চারজন এদিক ওদিকে মারা গিয়েছে। ওই দু-চারজনের তথ্য যদি এনসিআরবি-র কাছে পৌঁছয়, তাহলে তো নিরাপদতম শহর হবেই। প্রকৃত তথ্য রাজ্য সরকার জমা দেয়নি। এনসিআরবি-র যে তালিকা বেরোল, সেটা অসম্পূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গের কোনও প্রকৃত হিসেবের প্রতিফলন সম্ভব নয়। তাই দেখা যাবে, এরা সব বিষয়ে স্বর্ণ পদক পেয়ে গিয়েছে।”
Post A Comment:
0 comments so far,add yours