সঙ্গে অর্জুন সিং এটাও বুঝিয়ে দিলেন, বর্তমানে অনেক নেতাদের ওপরেই মানুষ বিতশ্রদ্ধ। সেক্ষেত্রে প্রতি এলাকায় যে সমস্ত নেতাদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ, তাঁদেরকেই সামনে এনে সংগঠন গড়ার পাঠ দিলেন অর্জুন

 ‘জ্ঞান দিলে মাস্টারমশাইয়ের কলার ধরলে হবে না’, তৃণমূল কর্মীদের ‘গাণ্ডীব শিক্ষা’ অর্জুনের
শ্যামনগরে বারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং

উত্তর ২৪ পরগনা: বারাকপুর শিল্পাঞ্চলে ‘দাবাং’ নেতা বলে পরিচিত সাংসদ তথা তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং। পদ্মফুল থেকে ঘুরে আসা সেই তৃণমূল নেতার মুখে কখনও শোনা গেল অভিমানের সুর, কখনও আক্ষেপ, আবার কখনও দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে পরামর্শ দিতে দেখা গেল অর্জুন সিংকে। দলের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে চলছে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত। এই পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে বার্তা দিলেন বারাকপুরের সাংসদ তথা তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং। শুক্রবার শ্যামনগরে সুব্রত পল্লির দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন অর্জুন সিং। সেখানেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত নিয়ে দলীয় কর্মীদের সতর্ক করেন অর্জুন সিং। তিনি বলেন, “এজেন্সির সাথে লড়তে গেলে নিজেদেরও ঠিক থাকতে হবে।” অর্জুনের কথায়, “আমরা এখন ঘরে বসে রাজনীতি করতে শুরু করেছি। পানের দোকান, চায়ের দোকানে বসতেই ভুলে গিয়েছি। ৯০ শতাংশ দলীয় কার্যালয় আমাদের এই অঞ্চলে খোলেই না।”


আবার এই অনুষ্ঠান থেকেই পুরনো দলীয় কর্মীদের প্রয়োজনীতাও বোঝালেন অর্জুন সিং। পাশাপাশি দলের অন্দরেই যে ক্ষমতা দখলের লড়াই রয়েছে, সে সম্পর্কেও সচেতন করলেন। তিনি বলেন, “পুরনো কর্মীদের সামনে আনতে হবে। দলীয় কর্মীরা দলীয় কর্মীদের হাতেই মার খাচ্ছেন। এটা কখনই ঠিক না।”

সঙ্গে অর্জুন সিং এটাও বুঝিয়ে দিলেন, বর্তমানে অনেক নেতাদের ওপরেই মানুষ বিতশ্রদ্ধ। সেক্ষেত্রে প্রতি এলাকায় যে সমস্ত নেতাদের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ, তাঁদেরকেই সামনে এনে সংগঠন গড়ার পাঠ দিলেন অর্জুন। তিনি বলেন, “গাল কাটা, নাক কাটা দের বুথে বসালে, মানুষ কিন্তু মুখ ঘুরিয়ে নেবে মানুষ।” অর্জুন বলেন, “দলের নাম করে যদি কিছু মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য এলাকাবাসীকে ভয় দেখিয়েছেন, তাঁদের ওপর অত্যাচার করেছেন, ওই পাড়ার মানুষ যখন বুথে গিয়ে সেই লোককে দেখবেন, তখন তাঁরাই অন্য লোককে ভোট দিয়ে দেবেন। কোনও নাক কাটা, কান কাটাদের বুথে বসতে দেওয়া যাবে না।” মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করলেই দলের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ থাকবে বলে বার্তা দেন।


কীভাবে এলাকায় নেতাদের জনসংযোগ বাড়ানো যায়, তারও বার্তা দেন অর্জুন সিং। তিনি বলেন, “এখন আমরা চায়ের দোকান, পানের দোকানে বসছি না। সেখানে বসে আড্ডা মারছি না। সেখানে বসাই ছেড়ে দিয়েছি। ক্লাবে আড্ডা মারছি না। আমরা ভেবে নিয়েছি, সবাই আমাদের কথা শোনে, ভোট দিয়ে দেবে। মানুষের সঙ্গে মিশতে শেখ। আমাদের এলাকার ৯০ শতাংশ কার্যালয়ই খোলে না। টাইম দিন।” ওয়াকিবহালের মতে, তৃণমূলের সংগঠন নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন অর্জুন। মানুষের সঙ্গে তৃণমূলের জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে বলেও প্রকান্তরে বুঝিয়ে দিলেন তিনি।

তিনি এটাও বলেন, রাজনীতিটা শিখতে গেলে, বিভিন্ন দল থেকেই শিখতে হবে। তাঁর কথায়, “আমি কংগ্রেস থেকেও শিখে এসেছি। রাজনীতিতে সবসময়ে শেখার ব্যাপার রয়েছে। আমি ভোট করতে শিখেছি। ভোটে রাজনীতি করতে গেলে আমাকে বিজেপি থেকেও অনেকটা শিখতে হয়েছে। শেখার জন্য দল নয়। শক্রর কাছেও শিখতে হয়। জ্ঞান নিতে গেলে কিন্তু মাস্টারমশাইয়ের কলার ধরলে চলবে না। নমনীয় হতে হবে।” ঠিকভাবেই দলীয় কর্মীদের রাজনীতির পাঠ পড়ালেন অর্জুন।


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours