কিন্তু, ধ্বংসস্তূপ ভেঙে যখন তাঁরা প্রথম পৌছেছিলেন শ্রমিকদের কাছে, সেই সময়টা কেমন ছিল?

শেষ পাথরটা সরাতেই...', কেমন ছিল আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনোর সেই মুহূর্ত?
খনি শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই মুক্তি পেলেন আটকে থাকা ৪১ শ্রমিক

দেরাদুন: গত সতেরো দিনে বারবার ব্যর্থ হয়েছে যন্ত্র। এমনকি, আমেরিকায় তৈরি অগার মেশিনও গিয়েছিল ভেঙে। উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে শেষ। ভরসা ছিলেন তাঁরাই। গাঁইতির মতো সরঞ্জাম দিয়ে হাতে হাতে ইঁদুরের মতে গর্ত খুঁড়ে, শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁরাই পৌঁছে গিয়েছেন আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে। তাদের উদ্যোগেই এক এক করে ৪১ জন শ্রমিককেই নিরাপদে বের করে আনা গিয়েছে ধসে যাওয়া সুড়ঙ্গটির বাইরে। আর তাই ব়্যাট-হোল-মাইনিংয়ের শ্রমিকরা এখন নায়ক। গত ২৪ ঘণ্টা ধরে একটানা কাজ করেছেন তাঁরা। সুড়ঙ্গের কালো অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। এমনকি শ্বাস নেওয়াও ছিল চ্যালেঞ্জের। কিন্তু, এত পরিশ্রমের পরও আজ তাঁদের মুখের যুদ্ধ জয়ের হাসি। আসলে, তাঁদের সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিয়েছেন আটকে থাকা শ্রমিকরাই। ব়্যাট-হোল-মাইনিংয়ের শ্রমিকরা জানিয়েছেন, যে সম্মান আটকে থাকা শ্রমিকরা তাঁদের দিয়েছেন, তা তাঁরা সারা জীবনেও ভুলতে পারবেন না। কিন্তু, ধ্বংসস্তূপ ভেঙে যখন তাঁরা প্রথম পৌছেছিলেন শ্রমিকদের কাছে, সেই সময়টা কেমন ছিল?


দিল্লি থেকে আসা ব়্যাট-হোল-মাইনিংয়ে দক্ষ শ্রমিক ফিরোজ কুরেশি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঠিক ৭টা বেজে ৫ মিনিটে তাঁরা ধ্বংসস্তূপ ভেঙে পৌঁছে গিয়েছিলেন আটকে থাকা ৪১ শ্রমিকের কাছে। যে পাইপ দিয়ে চাকা লাগানো স্ট্রেচারে করে শ্রমিকদের বার করা হয়েছে, শেষ পর্যায়ে সেই পাইপে জমে থাকা ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করেছেন ফিরোজ। সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসে তাঁর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি তিনি। কাঁদতেই কাঁদতেই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের তিনি বলেছেন, “আমি আটকে পড়া কর্মীকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমার চোখ দিয়ে শুধু জল বের হচ্ছিল।”

ধ্বংসস্তূপ ভেঙে সিল্কিয়ারা টানেলে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে প্রথম পৌঁছেছিলেন আরেক ব়্যাট-হোল-মাইনিং শ্রমিক, মুন্না কুরেশি। তিনি বলেছেন, “শেষ পাথরটা সরানোর সঙ্গে সঙ্গে আমি ওদের (আটকে পড়া ৪১ শ্রমিক) দেখতে পাচ্ছিলাম। তারপরে আমি আর থাকতে পারিনি। ওই ফাটল দিয়ে তাদের কাছে চলে গিয়েছিলাম। ওরা আমাদের জড়িয়ে ধরেছিল। আমাদের কোলে তুলে নিয়েছিল। ওদের উদ্ধার করতে এসেছি বলে আমাদের বারবার ধন্যবাদ জানাচ্ছিল। আমরা গত ২৪ ঘন্টা একটানা কাজ করেছি। আমি খুশি, কিন্তু এতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করার কিছু নেই। এটা আমি আমার দেশের জন্য করেছি। আমার এটাই কাজ। আটকে পড়া শ্রমিকরা আমাদের যে সম্মান দিয়েছে, আমি সারা জীবনে ভুলতে পারব না।”


দেবেন্দ্র নামে আরেক ব়্যাট-হোল-মাইনিং শ্রমিক বলেছেন, “আমরা ১৫ মিটার খনন করেছি। আমরা যখন সেখানে পৌঁছেছিলাম এবং তাদের উপস্থিতির আভাস পেয়েছিলাম, তখন আমাদের মনে খুবই আনন্দ হয়েছিল। আটকে থাকা শ্রমিকরাও আমাদের দেখে খুব খুশি হয়েছিল। ওরা আমাদেরকে জড়িয়ে ধরে বাদাম উপহার দিয়েছিল।”

গত বৃহস্পতিবার রাতে, আমেরিকা থেকে আমদানি করা উচ্চ প্রযুক্তির অগার মেশিনটি অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়ে ভেঙে গিয়েছিল। এরপরই, উদ্ধারকারীরা ব়্যাট-হোল-মাইনিংয়ের মতো নিষিদ্ধ পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। খনি শ্রমিকরা হাতে হাতে পাথর কেটে আটকে পড়া শ্রমিকদের বের করার পথ খনন করা শুরু করেছিলেন। এদিন উদ্ধার অভিযান সফল হওয়ার পর, ব়্যাট-হোল-মাইনিং শ্রমিকদের দলের নেতা বলেছেন, “ওরা প্রত্যেকে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমরা জানতাম আটকে পড়া শ্রমিকদের আমাদেরই উদ্ধার করতে হবে। আমরা আমাদের জীবনে একবারই এই সুযোগ পাব। ওদের বের করে আনতে আমাদের শ্রমিকরা ২৪ ঘন্টা অবিরাম কাজ করেছে।”

সমস্ত শ্রমিকদের বের করে আনার পর, সাংবাদিক সম্মেলন করে এই ব়্যাট-হোল-মাইনিং-এর শ্রমিকদেরও ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। তিনি বলেন, “মেশিনগুলো বারবার ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু আমি ম্যানুয়াল খনি শ্রমিকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গেও আমি দেখা করেছি। তাঁরা বলেছেন, সুড়ঙ্গের ভিতরে তাদের কোনও সমস্যা হয়নি।” শ্রমিকদের নিরাপত্তাগত ঝুঁকি এবং পরিবেশগত সমস্যার কারণে, ২০১৪ সালেই ব়্যাট-হোল-মাইনিং পদ্ধতি নিষিদ্ধ করেছিল জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনাল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, উত্তরাখণ্ডে সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকদের প্রাণ রক্ষা করল এই ম্যানুয়াল ড্রিলিং কৌশলই।


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours