শেষ জনগণনা অনুযায়ী, ডায়মন্ড হারবারে সংখ্যালঘু মানুষের সংখ্যা ৫৩ শতাংশের বেশি। সেখানে নওশাদদের দৌড়ের ইচ্ছা, শুভেন্দুর কৌশলের ইঙ্গিতের পর অনেকেরই মনে পড়ছে সাগরদিঘি উপনির্বাচনের কথাও। বায়রন বিশ্বাস ৪৭.৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে হারিয়ে দেন তৃণমূল প্রার্থীকে। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৪.৯৪ শতাংশ। বিজেপি পায় মাত্র ১৩.৯৪ শতাংশ।
'ডায়মন্ড' হারাবার সম্ভাবনা কতটা তৃণমূলের? নওশাদ-শুভেন্দুরা পারবেন?
পাখির চোখ ডায়মন্ড হারবার।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা: লোকসভা নির্বাচনে এখনও কয়েক মাস বাকি। পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে চর্চার কেন্দ্রবিন্দু কোন কেন্দ্র হতে চলেছে, তার আঁচ ভালই টের পাওয়া যাচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রেই চব্বিশের লোকসভা ভোটে বাংলার ভরকেন্দ্র হতে চলেছে। এখানকার দু’বারের নির্বাচিত সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
এবার এই ডায়মন্ড হারবারে নজর বিরোধীদের। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ক্রমাগত হুঙ্কার ছাড়ছেন, অভিষেককে হারাবেনই। প্রয়োজনে অন্য কাউকে দাঁড় করাবেন সেখানে। কোন কৌশল বিরোধী দলনেতার মাথায় চলছে, তা নিয়ে একদিকে যেমন চর্চা। একইসঙ্গে আইএসএফ বিধায়ক (ভাঙড়) নওশাদ সিদ্দিকীও বলেছেন, দল বললে তিনি এই কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়তে চান, হারাতে চান অভিষেককে।
এদিকে পুজোর মুখে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে জনসংযোগে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটারদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন, গতবার ৩ লক্ষ ২০ হাজারের কিছু বেশি ভোটে জিতেছিলেন। এবার সেই ব্যবধান বাড়িয়ে ৪ লক্ষ করতে হবে। বোঝাই যাচ্ছে, লোকসভা ভোট ইস্তক ‘ডায়মন্ড’-এ নজর থাকবে সকলেরই।
মার্চ, এপ্রিল না মে, লোকসভা ভোট কবে তা নিয়ে একদিকে যেমন আলোচনা তুঙ্গে। তেমনই ভোটের দিন ঠিক না হলেও বঙ্গ রাজনীতিতে ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে শোনা গিয়েছে, “ডায়মন্ড হারবারে হারাব। অন্য লোককে দাঁড় করিয়ে হারাব। বিজেপিকে জেতাব। ডায়মন্ড হারবারে ভাইপোকে হারাব, হারাব, হারাব।”
রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা, শুভেন্দুর এই ‘অন্য’জন কে? অন্য দলের কেউ? মালদহে নওশাদ সিদ্দিকী বলেছেন, “শুভেন্দু অধিকারীরা কাকে কোথায় প্রার্থী করবেন তাঁদের দলের ব্যাপার। তবে আইএসএফের তরফে ডায়মন্ড হারবারে আমি নির্বাচনে লড়াই করতে চাই। দল অনুমোদন দিলে লড়াই করে ডায়মন্ড হারবারের এমপিকে প্রাক্তন এমপি বানাব।” যদিও এসব কথায় হাসছে তৃণমূল। হাসতে হাসতে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় পেয়ে যাচ্ছে। ভাল।”
তবে এই চ্যালেঞ্জ ও পাল্টা খোঁচার রাজনীতি বুঝিয়ে দিচ্ছে ডায়মন্ড হারবারের ভোটযুদ্ধ শুরু, বলছেন রাজনীতির কারবারিরা। ২০১৯ সালে অভিষেক এই কেন্দ্র থেকে ৭,৯১,১২৭ ভোট পান। শতাংশের বিচারে যা ৫৬.১৩। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪,৭০,৫৩৩। ৩৩.৩৯ শতাংশ। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে বিধানসভা ৭টি। ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, বিষ্ণুপুর, সাতগাছিয়া, বজবজ, মহেশতলা, মেটিয়াব্রুজ। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে সাতটি আসনেই জিতেছে তৃণমূল।
শেষ জনগণনা অনুযায়ী, ডায়মন্ড হারবারে সংখ্যালঘু মানুষের সংখ্যা ৫৩ শতাংশের বেশি। সেখানে নওশাদদের দৌড়ের ইচ্ছা, শুভেন্দুর কৌশলের ইঙ্গিতের পর অনেকেরই মনে পড়ছে সাগরদিঘি উপনির্বাচনের কথাও। বায়রন বিশ্বাস ৪৭.৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে হারিয়ে দেন তৃণমূল প্রার্থীকে। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৪.৯৪ শতাংশ। বিজেপি পায় মাত্র ১৩.৯৪ শতাংশ। প্রায় ৬৬.২৮ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সাগরদিঘিতে তৃণমূলের ভোট কেটে বিজেপি কংগ্রেসকে সুবিধা করে দেয় বলে তুঙ্গে ওঠে রাজনৈতিক তরজা। যদিও ভোটে জিতে বায়রন বিশ্বাস তৃণমূলে যোগ দেন। সত্যিই কি ডায়মন্ড হারবার লোকসভা ভোটের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠবে, সব মহলের নজর এখন সেদিকেই।
ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা দেবাশিস চৌধুরী। তাঁর কথায়, “আমাদের একটাই দাবি, ভয়মুক্ত আবহে ভোট করাতে হবে। আর বিরোধী শক্তিরা যদি ঐক্য়বদ্ধ হয়ে সর্বসম্মতভাবে একজন গণতান্ত্রিক প্রার্থীকে সামনে আনতে পারে, মানুষ সেই ব্যক্তির সমর্থনে ভোট দিতে পারলে বর্তমান সাংসদকে হারানো সম্ভব।”
মণিরুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দার কথায়, “ডায়মন্ড হারবার দীর্ঘদিনের বামপন্থীদের জমি। পরে তৃণমূল আসে। এখন রাজনীতির একটা ধর্মীয় মেরুকরণে ভাগও দেখা যাচ্ছে। তবে যেই দাঁড়াক না কেন ভোট গণতান্ত্রিকভাবে করাতে হবে। এখানে উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই। তবে গণতান্ত্রিক পরিবেশটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” এখানকার ভোটার রিয়াজুল হক জমাদার বলছেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে অনেক কাজ করেছেন। তাই ধর্মীয় মেরুকরণকে সামনে রেখে এখানে রাজনীতি করা সম্ভব নয়।”
Post A Comment:
0 comments so far,add yours