মিঠুন দাসের দাবি, তিনি কাউকে কোনও হুঁশিয়ারি দেননি। তিনি বলেন, "আমি শুধু বললাম, সব কথা বলার পরও আপনি এভাবে কেন শোকজ করলেন? আমিও তো শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি। আমারও প্রেস্টিজ আছে।" এ বিষয়ে ফরাক্কা সার্কেলের স্কুল ইন্সপেক্টর দীপান্বিতা কুণ্ডু বলেন, "ওনার বিরুদ্ধে কোনওরকম ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেওয়া হবে কি হবে না সেই বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবে। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।"


'ভুলে যাচ্ছেন আমি শাসকদলের সভাপতি', মহিলা এসআইকে হুঁশিয়ারি শিক্ষক-নেতার
মেসেজের স্ক্রিনশট বাঁদিকে। ডানদিকে শিক্ষক নেতা।

মুর্শিদাবাদ: সঠিক সময়ে স্কুলে আসেননি শিক্ষক। তিনি আবার ফরাক্কা সার্কেলের তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সভাপতিও। এদিকে স্কুলে এসেছিলেন স্কুল ইন্সপেক্টর (SI)। দেরিতে আসার কারণে শোকজ করেন ওই শিক্ষককে। অভিযোগ, এরপরই হোয়াটসঅ্যাপে এসআইকে শিক্ষক নেতা লেখেন, ‘আপনি পাওয়ার দেখাচ্ছেন? ভুলে যাচ্ছেন আমি রুলিং পার্টির সভাপতি।’ শিক্ষক নেতার এহেন বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বেধেছে। শিক্ষক নেতা হলেও আসলে তিনি একজন শিক্ষক। শুধুমাত্র রাজনীতির গণ্ডীতে থাকেন বলে, এভাবে তিনি কি কথা বলতে পারেন, তাঁকে কি এমন স্বরে কথা মানায়, উঠছে প্রশ্ন। বিরোধীরা অবশ্য বলছে, এ রাজ্যে শিক্ষার যা হাল, তাতে শাসকদল ঘেঁষা শিক্ষক এমন কথা যে বলবেন, তাতে আর আশ্চর্য হওয়ার কী আছে?


ফরাক্কার ৩৫ নম্বর শঙ্করপুর প্রাইমারি স্কুল। সেখানকারই চারজন শিক্ষককে শোকজ করেন ফরাক্কা সার্কেলের স্কুল ইন্সপেক্টর দীপান্বিতা কুণ্ডু। সকলের বিরুদ্ধে সময়ে স্কুলে না আসার অভিযোগ। একইসঙ্গে স্কুলে শিক্ষার উন্নতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এসআই। এই চিঠি পেয়েই তৃণমূলের শিক্ষক নেতা ফুঁসে ওঠেন বলে অভিযোগ। যদিও অভিযুক্ত শিক্ষক তা মানতে চাননি।

অভিযুক্ত শিক্ষক মিঠুন দাসের বক্তব্য, ১ নভেম্বর থেকে স্কুল ড্রেস দেওয়ার কথা ছিল পড়ুয়াদের। সেদিন স্কুলে গিয়ে দেখেন এসআই সেখানে এসেছেন। মিঠুন দাসের দাবি, সেদিনই তাঁর স্কুলে ঢুকতে দেরি হয়। তবে তিনি নিয়মিত সময়ে স্কুলেন আসেন বলেও দাবি করেন। মিঠুন দাসের কথায়, “আমি রোজ ১১টার আগেই আসি। আমি যেহেতু সভাপতি, তাই রাস্তায় অনেক শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে কথাও বলতে হয়। সচরাচর স্কুলে আসার সময় আমি কথা বলি না। সেদিনই একজন গুরুতর কথা আছে বললেন, তাই শুনলাম। তাতেই ১০ মিনিট দেরি হয়। আমি ১১টা ২৫-এ স্কুলে ঢুকে সেই সময়েই কিন্তু সই করি। এরপর ক্লাসেও গেলাম। ম্যাডামের সঙ্গে কথাও হয়। পরে দেখলাম ম্যাডাম শোকজ করেছেন।”


মিঠুন দাসের দাবি, তিনি কাউকে কোনও হুঁশিয়ারি দেননি। তিনি বলেন, “আমি শুধু বললাম, সব কথা বলার পরও আপনি এভাবে কেন শোকজ করলেন? আমিও তো শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি। আমারও প্রেস্টিজ আছে।” এ বিষয়ে ফরাক্কা সার্কেলের স্কুল ইন্সপেক্টর দীপান্বিতা কুণ্ডু বলেন, “ওনার বিরুদ্ধে কোনওরকম ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেওয়া হবে কি হবে না সেই বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখবে। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।”

মুর্শিদাবাদের এবিপিটিএ-এর জেলা কমিটির সদস্য শ্যামল মিশ্র, এবি”এর আগেও শঙ্করপুর স্কুল নিয়ে এসআই অফিসে নানা অভিযোগ এসেছে। অনেক এসআই উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এই এসআই আমাদের দেখা সেরা এসআই। উনি দক্ষ, যোগ্য। স্কুলগুলিতে যাতে ঠিকমতো পড়াশোনা হয় সে বিষয়ে উনি আন্তরিক।” অন্যদিকে ফরাক্কা তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি অরুণময় দাস বলেন, “স্কুল পরিদর্শন করা ওনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। উনি সেই দায়িত্ব পালন করেছেন। শিক্ষকদের দায়িত্ব সময়মতো স্কুলে যাওয়া। জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষা। তার কারিগর শিক্ষক। শিক্ষকরা নিয়ম মেনে চলবেন, এটা সকলেই আশা করে। আমাদের শিক্ষক সেলের সভাপতি যেভাবে ওনাকে সরকার পক্ষের সভাপতি বলে কার্যত হুমকি দিয়েছেন দল সেটা কোনওভাবেই সমর্থন করে না। কেউ যেন এমন শব্দ ব্যবহার না করে যাতে দল কালিমালিপ্ত হয়। একজন শিক্ষককে নিয়ম মেনেই স্কুলে যেতে হবে। পরিদর্শকও যেন নিয়মিত এই পরিদর্শন চালিয়ে যান। সমস্ত স্কুলেই যেন তা চলে। তাতে ভালই হবে।”

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours