তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, রাইসমিলের মালিক বাকিবুর রহমান তাঁর দুর্নীতির ডালপালা বিছোতে শুরু করেছিলেন ২০২০ সাল থেকে। রেশন বন্টনে দুর্নীতির সূত্রপাত কার্যত সে সময় থেকেই

ED Raid in Jyotipriya Mallick’s House: কেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতেই ED? জোরাল হচ্ছে এই সব কারণগুলি

কলকাতা: রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলার তদন্তে এবার তেড়েফুঁড়ে ইডি। বৃহস্পতিবার সাতসকালেই ইডি তদন্তকারীরা পৌঁছে যান প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে। বাড়ির ঠিকানা BC ২৪৫। কালো রঙা বিশাল গেট। সজ্জিত বাড়ি। সামনের ফটকে ওই ঠিকানায় পরপর দুটি নামাঙ্কিত বাড়ি রয়েছে। একটি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের, আরেকটি তাঁর দাদার নামে। আর পাঁচটি দিনের থেকে বৃহস্পতিবারের মল্লিক পরিবারের শুরুটাই হল আলাদা। সকালেই দুয়ারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা। বাইরে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। কার্যত ঘুম থেকে উঠেই তদন্তকারীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হল মন্ত্রীকে। সঙ্গে চলছে তল্লাশিও। কিন্তু হঠাৎ কেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে তল্লাশি?


প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ED-র হানার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে জানা যাচ্ছে। রাইসমিলের মালিক বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারির পর মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। যদিও মন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাকিবুরকে তিনি চেনেন না। তা সত্ত্বেও ED কেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের দুয়ারে কড়া নাড়ল?

সূত্রের খবর:


১) ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরায় বাকিবুরের কাছ থেকে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। বাকিবুর রহমানের NPG রাইসমিলের দেগঙ্গার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে তদন্তকারীরা ১০৯টি সরকারি স্ট্যাম্প ও সিল উদ্ধার করেন। যে স্ট্যাম্পগুলি খাদ্য দফতরের বিভিন্ন আধিকারিকদের ব্যবহৃত করা সরকারি স্ট্যাম্প। যে স্ট্যাম্প সরকারি দফতরে থাকার কথা, তা কীভাবে বাকিবুরের অফিসে? ইডির আধিকারিকরা মনে করছেন, যে সময়ের কিছু নথি উদ্ধার হয়েছে, তা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন। স্ট্যাম্পগুলি কীভাবে এল? ব্যবহারের অনুমতি কে দিল? খাদ্য দফতরের ভূমিকাই বা কী?

২) তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, রাইসমিলের মালিক বাকিবুর রহমান তাঁর দুর্নীতির ডালপালা বিছোতে শুরু করেছিলেন ২০২০ সাল থেকে। রেশন বন্টনে দুর্নীতির সূত্রপাত কার্যত সে সময় থেকেই। কাকতালীয়ভাবে সে সময়ে খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। দুর্নীতির এত বড় জাল বিছোল রাজ্যে, আর মন্ত্রী কিছুই কি টের পেলেন না? তারও উত্তর জানতে চান তদন্তকারীরা।

৩) সে সময়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক উত্তর ২৪ পরগনা জেলার তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন। আর বাকিবুরও কার্যত ওই এলাকারই। তাঁর ফুলেফেঁপে ওঠা ওই জেলা থেকেই। একশো কোটির বেশি সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। বরাবরই বাকিবুরের নেপথ্যে প্রভাবশালীর যোগের তত্ত্ব খাঁড়া করেছেন ইডি আধিকারিকরা। কে এই প্রভাবশালী?

৪) বাকিবুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নিম্ন মানের আটা সরবরাহ করতেন খাদ্য দফতরকে। সরকারি সিলমোহর নিজেই ব্যবহার করে, সরকারকেই নিম্ন মানের আটা সরবরাহ করতেন বাকিবুর। এমন কিছু তথ্য ED-র হাতে এসেছে। আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রীই দিতে পারেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

৫) বৃহস্পতিবার কেবল জ্যোতিপ্রিয় বাড়ি নয়, তাঁর আপ্ত সহায়ক অমিত দের ফ্ল্যাট, দাদার বাড়ি-সহ ১০ জায়গায় এক সঙ্গে তল্লাশি চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। উল্লেখ্য, এর আগে বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বাড়িতেই ED হানা দিয়েছে। আরও একাধিক জায়গায় হানা দেওয়ার পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি হাতে এসেছে আধিকারিকদের কাছে। মনে করা হচ্ছে, জ্যোতিপ্রিয়র বাড়িতে আধিকারিকরা গিয়েছেন অনেকটা আঁটঘাঁট বেঁধেই।

এদিনের তল্লাশি প্রসঙ্গে নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, “পুজোর আগেও যখন একশো দিনের কাজের টাকার দাবিতে আন্দোলন চলছিল, তখনও আমাদের নেতা মন্ত্রীদের বাড়িয়ে পৌঁছে যায় ইডি। একটাই লক্ষ্য, কালিমালিপ্ত করো, বদনাম করো। কোনও অজুহাতের জায়গা নেই। ইডি-সিবিআই তাদের হাতের পুতুল। এতে তারা মনে করছে, নির্বাচনী কিছু ফলাফল তাদের পক্ষে যেতে পারে।”
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours