একাংশ। শুরুতে ইজরায়েলের পাশে থাকার ঘোষণা করেও প্যালেস্তাইনের অধিকার নিয়ে আলোচনা করা নিশ্চিত ভাবেই বিদেশনীতির গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু কেন এমন অবস্থান নিল ভারত? তার পিছনেও কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

Isarael Palestine Conflict: ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন বিতর্কেও কৌশলী অবস্থান নিল ভারত, কেন জানেন?
ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের দ্বন্দ্বে ব্যালেন্সের নীতি ভারতের

নয়াদিল্লি: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভূরাজনৈতিক সমস্যা বা যুদ্ধের ঘটনায় ভারতের অবস্থান বরাবরই নজর কাড়ে। কোন জোটের মধ্যে সরাসরি অংশ না নিয়ে যে ভাবে ভারত বিবাদমান দেশগুলির মধ্যে সম্পর্কের ব্যালেন্স করে তাও প্রণিধানযোগ্য। রাশিয়া এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও ভারতের বিদেশনীতিতে সেই কৌশলের প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল। ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইনের দ্বন্দ্বেও তার দেখা মিলল।


শনিবার গাজা স্ট্রিপ থেকে ইজরায়েলের উপর লাগাতার রকেট হামলা চালায় হামাস গোষ্ঠী। সীমান্তে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ইজরায়েলের মাটিতে ঢুকে নৃশংস অত্যাচারও চালিয়েছে হামাস জঙ্গিরা। এই ঘটনা সামনে আসতেই ইজরায়েলের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত কয়েক বছরে ভারতের সঙ্গে ইজরায়েলের সম্পর্ক অতীতের তুলনায় অনেকটাই মজবুতি পেয়েছে। বিশ্বমঞ্চে নেতানিয়াহু মোদীর বন্ধু হিসাবে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে সখ্যতাও ধরা পড়েছে সাম্প্রতিক অতীতে। তাই হামাস ইজরায়েলে হামলা চালাতেই ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ানো অনেক ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক ঠেকেছে। এমনকি টুইট করার পরের দিন ফোনে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথাও বলেছেন মোদী।

হামাসের হামলার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে গাজা স্ট্রিপে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে ইজরায়েল। আকাশ পথে হামলার পাশাপাশি স্থলপথে ঢুকেও হামাস জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে ইজরায়েলের সেনা। তাদের এই হামলায় হামাস সদস্যদের পাশাপাশি প্রচুর নিরীহ গাজাবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। কঠিন যন্ত্রণার মধ্যে দিয়েই দিন কাটছে সাধারণ গাজাবাসীর। গাজাতে বিদ্যুৎ, খাদ্য সরবরাহও বন্ধ রেখেছে ইজরায়েল। এর জেরে সেখানে মানবাধিকারের বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে। ইরান বাদে আরব দুনিয়ার দেশগুলি প্রথমে ততটা উচ্চবাচ্য না করলেও গাজা অর্থাৎ প্যালেস্তাইনের উপর হামলায় তাদের অসন্তোষ ধীরে ধীরে সামনে আসছে। সৌদি আরবও ইজরায়েলের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরতে পারে বলে রিপোর্ট জানান দিচ্ছে।


এই আবহে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। অরিন্দম বলেছেন, “স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের জন্য আলোচনা এবং নেগোসিয়েশনের জন্য ভারত দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে।” প্যালেস্তাইনের বিষয়ে ভারতের অবস্থান ‘দীর্ঘস্থায়ী এবং ধারাবাহিক’ বলেও উল্লেখ করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। এর পাশাপাশি ‘সীমানা নির্ধারণ করে ইজরায়েলের সঙ্গে প্যালেস্তাইনের শান্তি বজায় রাখার’ বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে নয়াদিল্লির তরফে।

প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি মোদীর টুইটের পর বিদেশ মন্ত্রকের এই বক্তব্যে ভারতের ব্যালেন্সের অবস্থান দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। শুরুতে ইজরায়েলের পাশে থাকার ঘোষণা করেও প্যালেস্তাইনের অধিকার নিয়ে আলোচনা করা নিশ্চিত ভাবেই বিদেশনীতির গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু কেন এমন অবস্থান নিল ভারত? তার পিছনেও কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ইজরায়েল যেমন ভারতকে বিভিন্ন রকমের যুদ্ধাস্ত্র এবং প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করে। তেমনই আরব দেশগুলি ভারতের অন্যতম বাণিজ্যসঙ্গী। সম্প্রতি আরবদুনিয়ার সঙ্গেও ভারতের সখ্যতা অন্য মাত্রা পেয়েছে। তাও বজায় রাখার দায় ভারতের রয়েছে। তাই আমেরিকা, ইউরোপের দেশগুলি যে ভাবে সরাসরি ইজরায়েলের পক্ষে গলা চড়াচ্ছে, পাশে থাকলেও তা করা ভারতের পক্ষে অস্বস্তির। ইউক্রেন ইস্যুর মতো এ ক্ষেত্রেও ভারত নিজের কৌশলী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চলেছে। বিদেশনীতির বিষয়ে ভারতের স্বকীয় অবস্থানও একটি কারণ। সম্প্রতি আমেরিকার মদতে আরবের বিভিন্ন দেশগুলি ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপের মধ্যে করিডর গড়তে আগ্রহী হচ্ছে। এই করিডর চিনের রোড অ্যান্ড বেল্ট উদ্যোগের পাল্টা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এই প্রকল্প রূপায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্পের মধ্যে যেমন আরব দুনিয়ার দেশ রয়েছে। তেমনই ইজরায়েল রয়েছে। তাই মধ্য প্রাচ্যে স্থিতাবস্থা থাকলে তাতে ভারতের লাভ। কিন্তু সেখানেই যখন যুদ্ধের ঘনঘটা তখন কৌশলে নিজের আখের গোছানোই ভারতের উচিত বলে মত বিশ্লেষকদের।


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours