দিন কয়েক আগে 'ইন্ডাস্ট্রি' প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, এবার পুজোর মরসুমে চার-চারটে বাংলা ছবি কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা করবে। টেক্কা দেবে বলিউড-দক্ষিণী ছবিকেও। কিন্তু শিয়রে সমন! টলিউডের ব্যবসায় বাঘের 'উপদ্রব', যা জানতে পেরে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বাংলার 'বাঘা বাঘা' পরিচালক-প্রযোজকেরা। ঠিক কী ঘটেছে? এই পুজোয় অরিন্দম শীলের 'মিতিন মাসি', সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের 'দশম অবতার' ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের 'রক্তবীজ' মুক্তি পাওয়ার কথা।

Salman Khan: বাংলায় বলিউডি আগ্রাসন! সলমনকে রুখে দিতে এবার একজোট টলিউড? 
বাংলায় বাদ বাংলা ছবি!

দিন কয়েক আগে ‘ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, এবার পুজোর মরসুমে চার-চারটে বাংলা ছবি কোটি-কোটি টাকার ব্যবসা করবে। টেক্কা দেবে বলিউড-দক্ষিণী ছবিকেও। কিন্তু শিয়রে সমন! টলিউডের ব্যবসায় বাঘের ‘উপদ্রব’, যা জানতে পেরে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বাংলার ‘বাঘা বাঘা’ পরিচালক-প্রযোজকেরা। ঠিক কী ঘটেছে? এই পুজোয় অরিন্দম শীলের ‘মিতিন মাসি’, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘দশম অবতার’ ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ‘রক্তবীজ’ মুক্তি পাওয়ার কথা। ছবিগুলির মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়, কোয়েল মল্লিক, জয়া আহসান, মিমি চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্যের মতো তারকারা। এ দিকে, দিওয়ালিতে গোটা দেশ এমনকি বিশ্ব জুড়ে মুক্তি পাবে যশ রাজ ফিল্মসের ‘স্পাই ইউনিভার্স’-এর পরবর্তী ছবি সলমন খানের ‘টাইগার থ্রি’। ‘জওয়ান’-এর মতো সেই ছবির ক্ষেত্রেও নাকি লাগু হতে চলেছে ‘ওয়ান শো পলিসি’—টলিউড সূত্রে আপাতত পাওয়া খবর এমনটাই। অর্থাৎ কোনও সিনেমা হলে যদি ‘টাইগার থ্রি’ চালানো হয় তবে শুধুমাত্র ওই ছবিই চালানো যাবে। অন্য কোনও ছবি চলবে না। আর এতেই কার্যত মাথায় হাত টলিউডের পুজো রিলিজ়ের লিস্টে থাকা ছবির অভিনেতা-কলাকুশলী এবং প্রযোজক-পরিচালকদের। যদিও দুর্গাপুজোর প্রায় দুই সপ্তাহ পর দীপাবলি, তবু ‘টাইগার’ হলে এলে কি সরিয়ে দেওয়া হবে একের পর এক সব বাংলা ছবি, যেমনটা মাঝেমধ্যেই হতে দেখা যায় বিগ ব্যানার হিন্দি ছবি রিলিজ় করলে? এই প্রশ্নেই এখন বিদ্ধ তাঁরা। শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই ওই ছবিগুলির পরিচালক ও প্রযোজক জোটবদ্ধ হয়ে ‘টাইগার ৩’-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হতে চলেছেন। ‘বাংলা ছবির পাশে দাঁড়িয়ে’ আঞ্চলিকতার ঝাণ্ডা তুলে বলিউডি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেই হতে চলেছে এই প্রতিবাদ।


সূত্র জানাচ্ছে, খোদ ‘ইন্ডাস্ট্রি’ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও এই বিষয়টি নিয়েও যথেষ্ঠ রুষ্ট। খুব শীঘ্রই দুই প্রযোজনা সংস্থা—‘এসভিএফ’ ও ‘উইন্ডোজ’ (দুই সংস্থারই রয়েছে পুজো রিলিজ়)—যৌথভাবে এই নিয়ে এক বিবৃতিও প্রকাশ করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিতে কাল পাতলে এই মুহূর্তে। এ তো গেল প্রযোজক-পরিচালকদের সিদ্ধান্তের কথা। কিন্তু বাংলার হল-মালিকেরা? বাংলা ছবি সরিয়ে তাঁরাও কি নিয়ে আসতে চলেছেন সলমনের ছবিকেই?

দক্ষিণ কলকাতার নামজাদা হল ‘নবীনা’। সেই সিনেমা হলের মালিক নবীন চৌখানি শনিবার (৬ অক্টোবর) বলেছেন, “হ্যাঁ, আমাদের এমনটাই বলা হয়েছে। কিন্তু যদি দুর্গাপুজোর সময় রিলিজ় হওয়া বাংলা ছবিগুলি দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ভাল চলে, তবে তা আমার হল থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। প্রীতমজি (জালান)-ও বলেছেন, সবটা দেখে নিয়ে তবেই সিদ্ধান্ত নিতে। আমাদের কাছে বাংলা ছবির গুরুত্ব সব সময়েই এগিয়ে থাকবে।” নবীনের বক্তব্যে যে প্রীতম জালানের উল্লখে, তিনি পূর্ব ভারতে ‘টাইগার থ্রি’ ছবির ডিস্ট্রিবিউটার। TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় প্রীতমের সঙ্গেও। তাঁর দাবি, ছবিটির ডিস্ট্রিবিউশান পলিসি নিয়ে টলিউডে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে, সে ব্যাপারে তিনি ওয়াকিবহাল নন তিনি। তিনি বলেন, “আমরা কোনও পলিটিক্সে নেই, কোনও ডিবেটে নেই। এটা পরিবার। আমরা এক্সিবিউটারের সঙ্গে কথা বলব। যদি হল মালিকেরা দেখেন বাংলা ছবিগুলি ভাল চলছে, তাঁরা সেগুলোকেই চালাতে চান, তবে আমরা তো সেক্ষেত্রে কাউকে জোর দিতে পারি না। সম্প্রতি একটি ছবির মুক্তির সময়েও অভিনেতা-প্রযোজকের তরফে আমায় বলা হয়েছিল, ওঁর ছবিটিকে যেন একটি শো দেওয়া হয়। আমি সঙ্গে সঙ্গে দাদুলকে (অরিজিৎ দত্ত, প্রিয়া এন্টারটেনমেন্টের কর্ণধার)-কে ফোন করি। সবটা মিটে যায়। এ ক্ষেত্রেও হয়তো তাই-ই হবে।”


এখানেই না থেমে প্রীতমের পাল্টা প্রশ্ন, “রুগীর অসুখ হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি না করেই কেন চিকিৎসা শুরু হয়ে যাবে? আগে সব ছবি মুক্তি পাক। দেখা যাক কেমন ব্যবসা করছে, তার পর যদি আমার কাছে হল মালিকেরা, এক্সবিটাররা কিছু বলতে আসেন, তখন সেই বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আমার কোনও ব্যক্তিগত এজেন্ডা নেই। একা হাতে ছেলেকে নিয়ে সবটা সামলাচ্ছি। আমার কারও প্রতি কোনও খারাপ লাগাও নেই। আগে থেকেই এটি নিয়ে কেন হইচই হচ্ছে, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না।” তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, বাংলার প্রথম সারির প্রযোজনা সংস্থা এসভিফ ‘পাঠান’ ও ‘গদর’ ছবির ডিস্ট্রিবিউটার ছিল। সে ক্ষেত্রেও ওই ‘ওয়ান শো পলিসি’ নিয়েছিল সংশ্লিষ্ট প্রযোজনা সংস্থা। আর সে কারণে প্রিয়া সিনেমা হলের মালিক অরিজিৎ দত্তের সঙ্গে এসভিএফের বয়ে চলা চোরাস্রোতের ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছিল। জালান আশ্বাস দিলেও টলিউডের অন্দরে এখন ফিসফাস। ‘টাইগার’ বনাম চার পুজো রিলিজ়ের লিস্টে থাকা ছবির মধ্যে শেষ হাসি হাসবে কারা? সেই উত্তরই খুঁজে চলেছেন সিনেপ্রেমীরা।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours