জুলাই মাসেই কলকাতায় এসেছিলেন শীলা চট্টোপাধ্যায়। সেই সময়েও তাঁর তৃণমূলে যোগদান ঘিরে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। ঝালদার পুরপ্রধান নিজেও কলকাতায় যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন, তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলেও দাবি করেছিলেন তিনি।


ঝালদা: ঝালদা পুরসভা হাতছাড়া হল কংগ্রেসের। ঝালদা পুরসভার পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায় এবং আরও চার কংগ্রেস কাউন্সিলর বুধবার যোগ দিলেন তৃণমূলে। ফলে আবার সমীকরণ বদলাচ্ছে ঝালদা পুরসভায়। এবার পুরপ্রধান ও চার কংগ্রেস কাউন্সিলর ঘাসফুলে শিবিরে যোগ দেওয়ায় ঝালদা পুরসভা তৃণমূলের দখলে চলে এল। নির্দল কাউন্সিলর তথা ঝালদার পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও কংগ্রেস কাউন্সিলর বিজয় কান্দু, মিঠুন কান্দু (নিহত তপন কান্দুর ভাইপো), পিন্টু চন্দ্র ও সোমনাথ কর্মকার বুধবার তৃণমূলে যোগে দেন।


উল্লেখ্য, ঝালদা পুরসভায় মোট ১২টি আসন রয়েছে। পুরভোটের সময়ে প্রথমে পাঁচটি করে আসন জিতেছিল তৃণমূল ও কংগ্রেস। বাকি দুটি আসন জিতেছিলেন নির্দল প্রার্থীরা। শীলা চট্টোপাধ্যায় ও সোমনাথ কর্মকার। বোর্ড গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগারের প্রয়োজন ছিল সাত। প্রথমে দুই নির্দল কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে বোর্ড গঠন করে ফেলেছিল তৃণমূল। কিন্তু পরবর্তীতে শীলা চট্টোপাধ্যায় ও সোমনাথ কর্মকার শাসক শিবিরের থেকে সমর্থন তুলে নেন এবং সোমনাথ যোগ দেন কংগ্রেস শিবিরে। যদিও শীলা চট্টোপাধ্যায় নির্দল হয়েই থেকে গিয়েছিলেন শুরু থেকেই। এদিকে বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রেও আবার শীলার সঙ্গে সমঝোতা হয় কংগ্রেসের। কংগ্রেসের তরফে শীলাকে পুরপ্রধান করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং পাল্টা শীলাও কংগ্রেসকে বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে সমর্থন করেছিল।

এবার সেই পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্য়ায় ও চার কংগ্রেস কাউন্সিলর যোগ দিলেন তৃণমূলে। জানা যাচ্ছে, বাঘমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতোর নেতৃত্বে এদিন বাঘমুন্ডি বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে তাঁরা ঘাসফুলে যোগ দিয়েছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঝালদার নয়া সমীকরণ হল, তৃণমূলের কাউন্সিলর-শক্তি ১০ জন (আগের ৫ জন কাউন্সিলর এবং আজ নির্দল পুরপ্রধান-সহ চার কংগ্রেস কাউন্সিলরের যোগদান)। অন্যদিকে কংগ্রেসের থাকল ২ জন কাউন্সিলর।


শীলা চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘উন্নয়নের স্বার্থেই তৃণমূলে যোগদান করলাম। জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছি। সেই জন্য মানুষ আমাকে ভোটে জিতিয়েছেন। সেই কাজ করার জন্যই আমি আজ তৃণমূলে যোগদান করলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করার জন্যই যোগ দিলাম।’

অন্যদিকে নিহত তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুন কান্দু বলছেন, ‘উন্নয়ন যাতে আরও ভাল করে হয়, সেই কারণেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়নি। পরিবার থেকে যা অভিযোগ জানানোর, তা জানানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত চলছে। তদন্ত তদন্তের মতো চলুক। যারা দোষী, তারা সাজা পাবে। কিন্তু আমাদের জন্য ঝালদার মানুষ যাতে কষ্টে না থাকে, তার জন্যই আমরা যোগদান করেছি।’

প্রসঙ্গত, গত জুলাই মাসেই কলকাতায় এসেছিলেন শীলা চট্টোপাধ্যায়। সেই সময়েও তাঁর তৃণমূলে যোগদান ঘিরে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। ঝালদার পুরপ্রধান নিজেও কলকাতায় যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন, তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। তৃণমূলে যোগদানের গুঞ্জন সেই সময় পুরোপুরি উড়িয়ে পুরপ্রধানের দাবি ছিল, তিনি পারিবারিক কাজেই কলকাতায় গিয়েছেন।

এদিকে ঝালদার ঘটনার পর ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচি। বলছেন, ‘তৃণমূলের সঙ্গে থাকার পরিণাম কী হতে পারে, তা আজ আবার প্রমাণিত হল। ওদিকে দিল্লিতে সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ছবি তোলা হবে, আর এখানে কংগ্রেসকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা হবে। একমাত্র পুরসভা যেটি কংগ্রেস চালাচ্ছিল, সেই জায়গাটিও আর তৃণমূল রাখল না। তৃণমূলের সঙ্গে ঘর করা আর বিষধর সাপের সঙ্গে ঘর করা এক বিষয়।’
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours