তৃণমূল বিধায়ক বলছেন, 'এই যোগদানের ফলে তৃণমূল ঝালদা পুরসভায় ক্ষমতায় ফিরে এল। আগামী দিনে আমরা আরও ভালভাবে মানুষের চাহিদা পূরণ করার সুযোগ পাব। আগামী দিনে তৃণমূলের নেতৃত্বেই এই পুরসভা চলবে।'


ঝালদা: কংগ্রেস পরিচালিত ঝালদা পুরসভায় ভাঙন ধরাল তৃণমূল। নিহত তপন কান্দুর ভাইপো মিঠুন কান্দু, নির্দল পুরপ্রধান শীলা চট্টোপাধ্যায়-সহ মোট পাঁচ জন কাউন্সিলর যোগ দিয়েছেন ঘাসফুল শিবিরে। বাঘমুন্ডির তৃণমূল বিধায়ক সুশান্ত মাহাতর হাত ধরে ঘাসফুলের পতাকা তুলে নেন তাঁরা। বুধবার সন্ধের এই দলবদলের পর সব সমীকরণ বদলে গেল ঝালদায়। পুরসভা হাতছাড়া হল কংগ্রেসের। বুধবারের এই যোগদানের বিষয়ে তৃণমূল বিধায়ক বলছেন, ‘এই যোগদানের ফলে তৃণমূল ঝালদা পুরসভায় ক্ষমতায় ফিরে এল। আগামী দিনে আমরা আরও ভালভাবে মানুষের চাহিদা পূরণ করার সুযোগ পাব। আগামী দিনে তৃণমূলের নেতৃত্বেই এই পুরসভা চলবে।’


ঝালদায় কাউন্সিলরদের এই দলবদলকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলেই মনে করছেন কংগ্রেসের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি নেপাল মাহাত। এর নেপথ্যে ‘ব্ল্যাকমেলিং’-এর তত্ত্বও উসকে দিচ্ছেন তিনি। বলছেন, ‘কিছুক্ষেত্রে ব্ল্যাকমেলিং করা হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে ব্যবসায় সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেওয়া হয়েছে। এসব করেই ওরা (তৃণমূল) কাউন্সিলরদের নিয়ে গিয়েছে।’ একইসঙ্গে মিঠুন কান্দুর দলবদল নিয়েও ভীষণ অসন্তুষ্ট নেপাল মাহাত। নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দুর আসনেই পুনর্নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন মিঠুন। সেই জায়গায় মিঠুনের দলবদল একেবারেই অনভিপ্রেত বলে মনে করছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীও তোপ দেগেছেন শাসক দলের বিরুদ্ধে। বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী এটাকে তাঁর সম্মানের প্রশ্ন বলে মনে করছিলেন। ১২ সদস্যের ঝালদা পুরসভা, সেটাও তাঁকে দখল করতে হবে… এমনই তাঁর পেটের ক্ষুধা। ক্ষমতার ক্ষুধায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ণ। তাই একটা ঝালদা পুরসভাও তাঁর দলের বাইরে কেউ পরিচালিত করবে, তা তিনি সহ্য করতে পারছেন না। তাই দখল করতে হবে।’


একইসঙ্গে অধীর এও মনে করছেন, যাঁরা আজ তৃণমূলে গিয়েছেন, তাঁরা কেউ মন থেকে যাননি। আফশোস মিশ্রিত কণ্ঠে বলছেন, ‘ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে ঝালদা পুরসভা পরিচালনা করাটাই ছিল একটা কঠিন কাজ। এর মধ্যেও যে তাঁরা এই কটা মাস ঝালদা পুরসভা পরিচালনা করতে সফল হয়েছেন, তার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই।’ তিনি নিশ্চিত, ‘এরা কেউ মন থেকে যাননি। শুধু দেহটা গিয়েছে, মন যেখানে থাকার সেখানেই রয়েছে।’

উল্লেখ্য, কংগ্রেস আর তৃণমূল এখন জাতীয় রাজনীতিতে ইন্ডিয়া-জোটের মধ্যে রয়েছে। লোকসভা ভোটের সমীকরণে উভয়েই বন্ধু দল। সেখানে প্রাদেশিক রাজনীতিতে এমন টানাটানি স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচি যেমন কোনও রাখঢাক না রেখেই খোঁচা দিয়েছেন তৃণমূলের সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটে কংগ্রেসের বন্ধুত্ব নিয়ে। বলছেন, তৃণমূলের সঙ্গে ঘর করা আর বিষধর সাপের সঙ্গে ঘর করা একই বিষয়। দলীয় নেতৃত্ব যদি এরপরও বিষয়টি না বোঝে, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের জন্য এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।’

ঝালদা পুরসভার নতুন সমীকরণ নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। বলছেন, ‘তৃণমূল থাকবে আর বিরোধীশূন্য রাজনীতির জন্য দাপট চলবে না, তা কখনও হয়! যে মানুষ, যে দলই করুক… যে দলের হয়েই জিতুক, সবাইকে তৃণমূলে আসতে হবে। সবরকমভাবে চেষ্টা করার পরও যখন পারেনি, তখন আবার কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে আনা হচ্ছে।’ এর থেকেই যে তৃণমূলের বিরোধীশূন্য রাজনীতির প্রতি ঝোঁক প্রকট হচ্ছে, সে কথাও মনে করছেন সুজনবাবু।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours