শিবসেনা এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস - মহা বিকাশ আগাড়ির দুই প্রধান অংশীদারই এখন অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত।এরপরও কি আসত পারে পওয়ারের কোনও 'মাস্টারস্ট্রোক'? রাজনৈতিক মহলের চোখ থাকবে সেদিক

এবার মহারাষ্ট্রে পওয়ার বনাম পওয়ার


মুম্বই: পরপর দুই বছরে বিজেপির দুই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’, আর তাতেই ভেঙে চুরমার মহারাষ্ট্রে মহা বিকাশ আগাড়ি জোট। ২০২১ সালে ৪০ জন শিবসেনা বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে শিবির বদল করেছিলেন একনাথ শিন্ডে। তারপর থেকে গত এক বছর ধরে সেনা বনাম সেনা দ্বন্দ্বের সাক্ষী হয়েছে মহারাষ্ট্র। এখনও সুপ্রিম কোর্টে এবং কোর্টের বাইরে সেই লড়াই জারি রয়েছে। বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করেছিলেন শিন্ডে। ৩০ জুন সেই সরকার এক বথছর পূর্ণ করেছে। এর ঠিক দুদিন পরই অন্তত ৪০ জন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে শিন্দে-ফড়ণবীস সরকারে যোগ দিলেন অজিত পওয়ার। শরদ পওয়ার সাফ জানিয়েছেন, ভাইপোর এই পদক্ষেপে সায় নেই তাঁর। কাজেই সেনা বনাম সেনার পর, এবার এনসিপি বনাম এনসিপি দ্বন্দ্বের পরিবেশ তৈরি হল। ফলে, শিবসেনা এবং জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস – মহা বিকাশ আগাড়ির দুই প্রধান অংশীদারই এখন অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত।

অবশ্য, এখনও অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করছেন, পোড় খাওয়া রাজনীতিক শরদ পওয়ার শেষ মুহূর্তে কোনও ‘মাস্টারস্ট্রোক’ দিয়ে দলের ভাঙন আটকে দিতে পারেন। তবে, রবিবার কার্যত তাঁকে কোনও সময়ই দেননি অজিত পওয়ার। নিজ বাসভবনে বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের পরই রাজভবনে গিয়ে প্রথমে বিরোধী দলনেতা হিসেবে ইস্তফা দেন, আর তার কিছুক্ষণের মধ্য়েই তৃতীয়বারের জন্য মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন অজিত। তাঁর সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আরও ৯ এনসিপি বিধায়ক। তবে, প্রাথমিকভাবে অনেকেই মনে করেছিলেন, অজিত পওয়ারের পদক্ষেপে দলের সমর্থন রয়েছে। এর অন্যতম কারণ, শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রফুল্ল প্যাটেলের উপস্থিতি। দিন গত মাসেই সুপ্রিয়া সুলের সঙ্গে তাঁকেই কার্যনির্বাহী সভাপতি হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন শরদ পওয়ার। পরে অবশ্য শরদ পওয়ার স্পষ্ট জানান, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না। অজিতের সিদ্ধান্ত তাঁর ব্যক্তিগত, এটা দলের সিদ্ধান্ত নয়।

অজিত পওয়ার দাবি করেছেন, প্রায় ৪০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, এনসিপি দল হিসেবেই তাঁরা মহারাষ্ট্রের শিন্ডে সরকারকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী নির্বাচনগুলিতেও তাঁরা এনসিপির প্রতীকেই লড়বেন। এদিকে শরদ পওয়ার জানিয়েছেন, অজিত পওয়ারের সঙ্গে থাকা বিধায়কদের অনেকেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের একপ্রকার জোর করেই সমর্থনের নথিতে স্বাক্ষর করানো হয়েছে। আগামী এক-দুই দিনের মধ্যেই কারা সত্য়ি সত্যি অজিত পওয়ারের সঙ্গে আছে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। কাজেই এনসিপি বনাম এনসিপি লড়াইয়ের মাঠ প্রস্তুত।

এবার আসা যাক আইনি পরিসরে। রাজ্য বিধানসভায় এনসিপির মোট ৫৩ জন বিধায়ক আছে। দলত্যাগ বিরোধী আইনের বিধান অনুযায়ী, অজিতের পক্ষে যদি ৩৬ জনের কম বিধায়ক থাকেন, তাহলে তাদের প্রত্যেককে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে। অজিত যদি তাঁর দাবি মতো ৪০ জন বিধায়কের সমর্থন আদায় করতে পারেন, তাহলে আইনি ক্ষেত্রে লড়াইটা তিনিই জিতবেন। তবে, ভাইপোর বিরুদ্ধে আইন আদালতে যাওয়ার পথ হাঁটবেন না বলে জানিয়েছেন পওয়ার। তবে, অজিতকে তিনি জনতার দরবারে হাজির করবেন। তিনি জানিয়েছেন, সোমবার ওয়াইবি চবন মেমোরিয়াল সেন্টারে তিনি এক জনসভা করবেন। তারপরই, মহারাষ্ট্রের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত চষে ফেলবেন ৮১ বছরের শরদ। ইতিমধ্যেই কিন্তু অজিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় এনসিপি সমর্থকরা অজিত পওয়ার এবং শিন্ডে সরকারে যোগ দেওয়া অন্যান্য এনসিপি নেতাদের পোস্টার-ব্যানারে কালি দিতে শুরু করেছেন। এক বছর আগের সেনা শিবিরের সঙ্গে এনসিপি শিবিরের বর্তমান ছবিটা একেবারে এক। এরপরও কি আসত পারে পওয়ারের কোনও ‘মাস্টারস্ট্রোক’? রাজনৈতিক মহলের চোখ থাকবে সেদিকেই।

Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours