বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায় হাসপতালের মর্গে দেহ রাখার জায়গা হচ্ছে না। বিভিন্ন স্থানীয় স্কুলে দেহ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরকমই এক স্কুলের কক্ষে পড়ে থাকা দেহগুলি হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যেতে গিয়ে আঁতকে উঠেছিলেন এক উদ্ধারকর্মী। সার দিয়ে পড়ে থাকা লাশের স্তূপের মধ্যে, আচমকা কে তাঁর পা চেপে ধরল?

Odisha train accident: 'বেঁচে আছি, একটু জল দিন', মৃতদেহের স্তূপ থেকে উদ্ধারকর্মীর পা জড়িয়ে ধরল একটি হাতএই রকমই এক কক্ষে রখা হয়েছিল রবিন নাইয়াকেও
মুম্বই: বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৭৮ জনের। হাসপতালের মর্গে দেহ রাখার জায়গা হচ্ছে না। এই অবস্থায় বিভিন্ন স্থানীয় স্কুলে দেহ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এরকমই এক স্কুলের কক্ষে পড়ে থাকা দেহগুলি হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যেতে গিয়ে আঁতকে উঠেছিলেন এক উদ্ধারকর্মী। সার দিয়ে পড়ে থাকা লাশের স্তূপের মধ্যে, আচমকা কে তাঁর পা চেপে ধরল? তাকিয়ে দেখেন একটি হাত। আর একটা ক্ষীণ কন্ঠ, ‘আমি বেঁচে আছি, একটু জল দিন।’ এভাবেই মৃতদের মধ্য থেকে ‘বেঁচে উঠেছিলেন’ ৩৫ বছরের রবিন নাইয়া। উত্তর ২৪ পরগণার চরনেখালি গ্রামের বাসিন্দা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতের দুর্ঘটনার পর একটি ট্র্যাকের উপর সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। উদ্ধারকারীরা তাঁকে মৃত বলেই মনে করেছিলেন। আর তাই বালেশ্বরের ওই স্কুলের কক্ষে কয়েকশ মৃতদেহের সঙ্গে রাখা হয়েছিল তাঁকে।

তাঁকে যিনি উদ্ধার করা ওই কর্মী জানিয়েছেন, প্রথমে তিনি বিশ্বাসই করতে পরেননি, অতজন মৃতের মধ্যে জীবিত কেউ থাকতে পারেন। কয়েক মুহুর্ত থমকে গিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে, কে তাঁর পা চেপে ধরেছে, তা দেখার সাহসই পাননি। একটু পরে, তিনি রবিনকে দেখতে পান। ওই কর্মী জানিয়েছিলেন, রবিনের সামান্য নড়াচড়া করতেও কষ্ট হচ্ছিল। এরপরই ওই কর্মী বাকি উদ্ধারকারীদের ডেকে আনেন। রবিনকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসার পর, রবিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছন ঠিকই, কিন্তু এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তিনি দুই পা-ই হারিয়েছেন। জানা গিয়েছে, গ্রামের আরও সাত ব্যক্তির সঙ্গে কাজের সন্ধানে রবিন অন্ধ্রপ্রদেশে যাচ্ছিলেন। বাকি ছয়জনের এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। গুরুতর আহত রবিনকে রাজ্যে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে, মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে তাঁর।

রবিনের মামা মানবেন্দ্র সর্দার বলেছেন, “রবিন, আমার ভাগ্নে। পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে অন্ধ্রে যাচ্ছিল। ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়ে জ্ঞান হারিয়েছিল ও। পরে দেখে ওকে লাশের স্তূপের সঙ্গে রেখে দেওয়া হয়েছে। এক উদ্ধারকারীর পা চেপে ধরে জল খেতে চেয়েছিল। ওর জীবন বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করেছিল। উদ্ধারকারীরা এরপর ওকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়।” মজার বিষয় হল, নাইয়া পরিবারে এর আগেও বড় মাপের ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু এড়ানোর ইতিহাস রয়েছে। ২০১০ সালে পশ্চিম মেদিনীপুরে নাশকতার মুখে পড়েছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। সেই ঘটনায় ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ওই ট্রেনে ছিলেন তাঁদের পরিবারের আরেক সদস্য। তিনিও সেই যাত্রা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours