কথা হচ্ছে লিওনেল মেসি এবং আন্তোনেলা রোকুজ্জোকে নিয়ে। লিওনেল মেসির জন্মদিনে তাঁর ভালোবাসার সফরটা জানলে কেমন হয়?

'কাগজে' নাম লিখেছিলেন, আন্তোনেলাকে নিয়েই পূর্ণ হল মেসির পরিবার

একটা ছোট্ট ছেলে স্বপ্ন দেখছে ফুটবলার হওয়ার। হয়েছেনও। কাতার বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন। ছোট থেকে সফর দেখলে মনে হবে, কোনও সাজানো চিত্রনাট্য মতো। ফুটবল কেরিয়ার নিয়ে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ফুটবলের পাশাপাশি আর একটা ভালোবাসার স্বপ্ন ছোট থেকেই সাজিয়ে রেখেছিলেন। আন্তোনেলা। কথা হচ্ছে লিওনেল মেসি এবং আন্তোনেলা রোকুজ্জোকে নিয়ে। লিওনেল মেসির জন্মদিনে তাঁর ভালোবাসার সফরটা জানলে কেমন হয়? বিস্তারিত রইল -এর প্রতিবেদনে।


লিও মেসি তখন খুবই ছোট। ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন বুঁনছে। তার মধ্যে আরও একটা স্বপ্ন। যা ছিল কাগজের পাতায়। কাগজ কলম নিয়ে লিখতে শুরু করে, ‘আন্তোনেলা’। এখানেই শেষ নয়। একটা ছোট্ট চিঠি। যাতে অনেক কিছুর সঙ্গে লেখা একটি লাইন, ‘কোনও একদিন আমাদের বাগদান হবে।’

আর্জেন্টিনার রোজারিওতে আজকের দিনেই জন্ম লিওর। সালটা ১৯৮৭। আর আন্তোনেলা এক বছরের বড়। মেসির প্রেম পর্ব শুরু বন্ধু লুকাস স্কাগিলার বাড়িতে। লুকাসের সঙ্গে গেম খেলছিলেন মেসি। আন্তোনেলা দু-জনকেই জিজ্ঞেস করে, কিছু প্রয়োজন আছে কীনা। কিন্তু লাজুক মেসি কিছুই বলেনি। মেসির তখন ১০ বছরের মতো বয়স। লুকাসকে জিজ্ঞেস করেছিল, ও কে? লুকাসের তুতো বোন আন্তোনেলা। মেসিকে সেটাই জানায়।


লুকাসের বাড়িতে কাটানো সেই অল্প সময়ের মধ্যেই দু-জন ছোট্ট ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আর সেই ‘বচপনা’র রেশ থেকে যায়। এরপর থেকে লুকাসের বাড়ি যাওয়ার বাহানা খুঁজত মেসি। সেখানে গেলে যে আন্তোনেলাকে দেখা যাবে!

একদিন এক মজার ঘটনা হয়েছিল। স্থানীয় ফুটবল কোচ এনরিকে ডমিননগেজ দেখেন, মেসি দাঁড়িয়ে রয়েছে। বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেসও করেন। মেসির থেকে কোনও জবাব আসেনি। লুকাসের বাবা মেসির হয়ে জবাব দেন। তাঁরা সেখান থেকে সরলে মেসি ঢুকতে পারবে! এতে এনরিকে আরও অবাক হন। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার কী আছে! প্রায়শই যেখানে যায়, সেখানে মেসি যাবে, তাতে হঠাৎ কুন্ঠা কেন? লুকাসের বাবা আন্তোনেলার বিষয়টি বলেন এনরিকেকে।

আন্তোনেলাকে ক্রমশ দেবীর আসনে বসাতে থাকে মেসি, বয়স বাড়লেও পছন্দের মানুষ বদলায়নি। আন্তোনেলাকে সেই বয়সেই জানিয়েছিল, কোনও একদিন সে তার প্রেমিকা হবে। বন্ধুরা এবং আন্তোনেলাই মেসির এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হয়ে ওঠে। কিন্তু সব কি আর সিলেবাস মেনে হয়? ওদেরও ছাড়াছাড়ি হল। লিওর বাবা জর্জ ঠিক করলেন, পরিবার সহ বার্সেলোনায় যাবেন। সালটা ২০০০। মেসিরা বার্সেলোনায়, আন্তোনেলার সঙ্গে যোগাযোগের দূরত্ব বাড়লেও মানসিক দূরত্ব একবিন্দুও কমেনি।

বার্সেলোনায় নতুন জীবন শুরু হয় মেসির। ফুটবল শেখা, ধীরে ধীরে বার্সেলোনা ক্লাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার হয়ে ওঠা। আন্তোনেলার সঙ্গে যোগাযোগ সে ভাবে হয়ে উঠছিল না। ২০০৫ সালে আন্তোনোলার এক বন্ধু গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। এই মৃত্যু অনেক বড় ধাক্কা দেয় কিশোরী আন্তোনেলার মনে। স্কুল যাওয়াই বন্ধ করে দেয় আন্তোনেলা। মেসি খবর পেয়েই আর্জেন্টিনায় ফিরে এসেছিল। মেসির সঙ্গ, আন্তোনেলা ভরসা পায়। সম্পর্কটা সেখান থেকেই মজবুত হয়। যদিও সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আনেনি মেসি-আন্তোনেলা।

আন্তোনেলা ইউনিভার্সিটি যোগ দেন। দাঁতের চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করেন। আন্তোনেলার এক বন্ধুর কথায়, ২১ বছরে মেসি-আন্তোনেলার ভালোবাসার সম্পর্ক ক্রমশ চাওড় হতে থাকে। তার দু-বছর পর মেসি-আন্তোনেলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ২০০৯ সালে একটি সাক্ষাৎকারে আন্তোনেলার বিষয়টি জানিয়েছিলেন মেসি। সে সময় অবশ্য নাম বলেননি। তবে আর্জেন্টিনার একজনকে ভালোবাসেন এটুকু বলেছিলেন।

বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার তাঁর সঙ্গী। মাঠেও দেখা যায় আন্তোনেলাকে। কিন্তু ফুটবল তাঁর পছন্দই নয়! লিও মেসি একাধিক সাক্ষাৎকারে আন্তোনেলা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘ও ফুটবল নিয়ে একেবারেই আগ্রহী নয়। আমি ফিরে অনেক সময়ই বলতাম, দু-গোল করেছি কিংবা হ্যাটট্রিক, তাতে আন্তোনেলা কোনও আগ্রহ পেত না। ওর কাছে ফুটবলটা একঘেয়ে।’ রোজারিওতে মেসি-আন্তোনেলার বিয়ে হয়। বার্সেলোনার সে সময়কার সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ, নেইমার, পিকের পাশাপাশি শাকিরাও ছিলেন বিয়েতে।

আন্তোনেলা এবং লিও মেসি সুখেই সংসার করছেন। ছোট্ট বয়সের প্রেম, এত সুন্দর পরিণতি, সকলের জন্য জীবনে হয় না। তাঁরা হয়তো এর জন্য নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতেই পারেন।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours