মামুলি কালবৈশাখী নয়। যেন তাণ্ডবের সাক্ষী বাংলা। মোখা আসেনি, তবু গাছ পড়ে, তার ছিঁড়ে মহাদুর্যোগ! একাধিক প্রাণও কেড়েছে ঝড়-বৃষ্টি।

Kalbaishakhi Updates: জন্ম রাঁচিতে! ১৪ কিমি উঁচু বজ্রগর্ভ ‘মেঘমালা’তেই রুদ্ররূপ কালবৈশাখীরপ্রতীকী ছবি
কলকাতা : দুপুরেও বেশ অস্বস্তিকর গরম ছিল কলকাতায়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে যায় ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বিকেল-সন্ধের ঝড়-বৃষ্টিতে গরম উধাও। রাত সাড়ে আটটায় তাপমাত্রা নামে ২৪.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই সাড়ে ১২ ডিগ্রি পারাপতন। শুধু কলকাতা নয়, দক্ষিণবঙ্গ জুড়েই স্বস্তি। সৌজন্যে বৈশাখ-শেষের কালবৈশাখী।


মামুলি কালবৈশাখী নয়। যেন তাণ্ডবের সাক্ষী বাংলা। মোখা আসেনি, তবু গাছ পড়ে, তার ছিঁড়ে মহাদুর্যোগ! একাধিক প্রাণও কেড়েছে ঝড়-বৃষ্টি। আলিপুরে কালবৈশাখীর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৪ কিলোমিটার। আবহবিজ্ঞানের শর্ত অনুযায়ী, ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে হয়। এবং সেই গতিবেগে অন্তত এক মিনিট স্থায়ী হতে হয় ঝড়। তবেই কালবৈশাখীর তকমা দেন আবহবিদরা। না-হলে নয়। যেমন, ২৭ এপ্রিল কলকাতায় ঝড়ের গতিবেগ রেকর্ড হয়েছিল ৭৯ কিমি/ঘণ্টা। কিন্তু এক মিনিটের শর্তপূরণ হয়নি। সোমবার শুধু শর্তপূরণই হয়নি, তিন মিনিট ধরে ঘণ্টায় ৮৪ কিলোমিটার বেগে দাপিয়েছে কালবৈশাখী। এমন স্থায়িত্বকেই এত বেশি গাছ পড়ার কারণ হিসেবে দেখছেন আবহবিদরা। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘একে ঘণ্টায় ৮৪ কিমি বেগে কালবৈশাখী, তার উপর তিন মিনিটের স্থায়িত্ব! যে গাছের গোড়া দুর্বল, সেগুলো এতটা সময় ধরে ঝড়ের এই তীব্রতা সহ্য করতে পারেনি।’’

দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে কালবৈশাখীর এমন রুদ্ররূপই বা কেন?
‘মেঘমালা’র হাত দেখছেন আবহবিদরা। সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘সোমবার দুপুরে রাঁচির পূর্ব দিকে প্রথমে মেঘপুঞ্জ সৃষ্টি শুরু হয়। তার পর পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমানের উপর মেঘ জমে। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামেও ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এর পরই সব মেঘপুঞ্জ পর পর জুড়ে আকাশে মালার মতো কাঠামো তৈরি হয়। যাকে আমরা বলি, স্কোয়াল লাইন। এমন স্কোয়াল লাইন তৈরি হওয়াতেই দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলায় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ের তীব্রতাও এত বেশি ছিল।’’ আবহাওয়া দফতরের পর্যবেক্ষণ, কিউমুলোনিম্বাস অর্থাত্‍ উল্লম্ব বজ্রগর্ভ মেঘের উচ্চতা ছিল অন্তত ১৪ কিলোমিটার। যত উঁচু মেঘ, তত তার দাপট। তাণ্ডবও সেই কারণেই।


তবে সোমবারের কালবৈশাখী সবচেয়ে শক্তিশালী, এমন নয়। ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল ঘণ্টায় ১১৬ কিমি বেগে কালবৈশাখী আছড়ে পড়ে কলকাতায়। ২০২০ সালে আমপান আছড়ে পড়ার ঠিক সাত দিন পর ৯৬ কিমি/ঘণ্টা গতিবেগ নিয়ে কালবৈশাখী হাজির হয় আলিপুরে। ২০১৮ সালের ১৭ এপ্রিল আবার এক সন্ধেতেই জোড়া কালবৈশাখী। প্রথমটি ৮৪ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিবেগে, দ্বিতীয়টি ৯৮ কিলোমিটার/ঘণ্টা গতিবেগে।

তবে, সোমবার যে এমন তাণ্ডব হবে, একদিন আগেও তার আঁচ মেলেনি। রবিবার আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েছিল, বুধবার থেকে দক্ষিণবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হবে। কিন্তু সোমবার সকালেই পূর্বাভাসে বদল আনা হয়। দেখা যায়, বিহার থেকে ওড়িশা পর্যন্ত শক্তিশালী নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হয়েছে। তার প্রভাবে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্প বঙ্গোপসাগর থেকে ঢুকছে। সেই জলীয় বাষ্প পৌঁছেও যাচ্ছে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে। অর্থাত্‍, যেমন দরকার, ঠিক তেমন অনুকূল পরিস্থিতি।

আসলে নিম্নচাপ অক্ষরেখা মই-এর কাজ করে। সাগর থেকে আগত জলীয় বাষ্পকে নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। যেখানে জলীয় বাষ্প নির্দিষ্ট আয়তনের তরলে পরিণত হয়। তার পর মাধ্যাকর্ষণের টানে নেমে আসে মাটিতে। সঞ্জীববাবুর কথায়, ‘‘কিছু মেঘপুঞ্জ বৃষ্টি দিয়ে ঝরে গিয়েছে, আবার নতুন মেঘপুঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে স্কোয়াল লাইন বা মেঘমালা বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত অটুট ছিল। কোনও জেলাই নিরাশ হয়নি।’’ কিউমুলোনিম্বাসের সঙ্গে ছিল স্ট্র্যাটো কিউমুলাস মেঘও। ফলে অনেক জায়গায় সন্ধে পেরিয়ে রাতেও বৃষ্টি ধরেনি।

আরও বৃষ্টির আশা। শনিবার পর্যন্ত গোটা রাজ্যেই ঝড়-বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি থাকবে, আশার খবর শুনিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার রাজ্যের ৬ জেলায় বিক্ষিপ্ত ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। জ্যৈষ্ঠের জ্বলুনি থেকে যত দিন নিস্তার পাওয়া যায় আর কী!
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours