বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার বাংলায় ২০০৫ সালের জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের ২৭ নম্বর ধারা প্রয়োগ করেছে। তার জন্যই আটকে গিয়েছে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ। কী এই জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের ২৭ নম্বর ধারা?

Rural Employment Guarantee Act: ধারা ২৭-এই আটকে গিয়েছে কেন্দ্রের বরাদ্দ, কোন বিধানে 'বঞ্চিত' বাংলা?প্রতীকী ছবি
নয়া দিল্লি: দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পাওয়া টাকা দেওয়া হচ্ছে না বলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই প্রাপ্য পাওনার দাবিতে বুধবারই দুদিনের ধরনায় বসেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরই মধ্যে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, বিভিন্ন প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতির জন্যই বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেছেন, “বাংলায়, কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৫ সালের জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের ২৭ নম্বর ধারা প্রয়োগ করেছে।” ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে আবাস যোজনা, শৌচাগার নির্মাণ, সড়ক যোজনার কোনও প্রকল্পেরই টাকা পাবে না রাজ্য সরকার। কী এই জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের ২৭ নম্বর ধারা? এই ধারা প্রয়োগ করে সত্যিই কি রাজ্যের প্রাপ্য টাকা আটকে দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার? আসুন জেনে নেওয়া যাক –


কী এই ধারা ২৭?

২০০৫ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে জারি করা হয়েছিল জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন বা মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন। এই আইনের লক্ষ্য, দেশের গ্রামীণ এলাকায় জীবিকার নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং তার মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের এক আর্থিক বছরে অন্তত একশো দিনের মজুরি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে এই আইনের ২৭ নম্বর ধারায় কেন্দ্রীয় সরকারকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ধারার দুটি ভাগ রয়েছে। প্রথম উপধারায় বলা হয়েছে, “কেন্দ্রীয় সরকার মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের বিধানগুলির কার্যকর প্রয়োগের জন্য রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারে।


দ্বিতীয় উপধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে কোনও প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রদত্ত তহবিলের অনুপযুক্ত ব্যবহার সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পেলে কেন্দ্রের মনোনীত কোনও সংস্থাকে দিয়ে সেই অভিযোগের তদন্ত করতে হবে। তদন্তে যদি দেখা যায় অভিযোগটি সঠিক, সেই ক্ষেত্রে প্রয়োজনে কিছু সময়ের জন্য ওই প্রকল্পের তহবিল দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশ দিতে পারবে কেন্দ্র এবং প্রকল্পটির যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এমন অভিযোগ এলে খতিয়ে দেখবো না?

এর আগে কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার সময়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেছিলেন, “পশ্চিমবঙ্গে আবাস যোজনার টাকা যারা পেয়েছে, তাদের প্রাসাদের মতো বাড়ি। এমন অভিযোগ এলে সেগুলি খতিয়ে দেখবো না?” নির্মলা সীতারামন আরও জানান, অনিয়মের পাশাপাশি, বাংলায় আবাস যোজনার নাম, লোগো – সবই বদলে দেওয়া হয়েছে। ব্র্যান্ডিং পাল্টে দেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের কাছ থেকে বাংলার বকেয়া অর্থ না পাওয়ার দায়, রাজ্য সরকারের কোর্টেই ঠেলেছিলেন তিনি। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ দলের রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে মনরেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এই প্রকল্পে কত অর্থ খরচ করা যায়নি, কত অর্থ পাওনা আছে, সেই সব বিষয়ে বারবার রিপোর্ট তলব করেছে কেন্দ্র। দীর্ঘদিন ধরে সেই রিপোর্ট পাঠায়নি রাজ্য। ২০২২ সালের নভেম্বরের শেষে এই হিসেব পাঠিয়েছে বাংলার সরকার। সেই হিসেব অনুযায়ী মনরেগা প্রকল্পে ৫,৪৭৩ কোটি টাকা বকেয়া আছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, শীঘ্রই সেই হিসেব খতিয়ে দেখে বকেয়া অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হবে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours