President Draupadi Murmu: সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধনা জানানো হবে। তাঁকে সংবর্ধিত করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকবেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
President Draupadi Murmu: রাষ্ট্রপতির সফরকালে রাজভবনে নৈশভোজ, এলাহি আয়োজনে হাজির মমতা-বিমানরানেতাজি ইনডোরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা: দু’দিনের সফরে কলকাতায় এসেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। মঙ্গলবারও তাঁর একাধিক কর্মসূচি রয়েছে। বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রপতিকে সংবর্ধনা জানানো হয়। তাঁকে সংবর্ধিত করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও।
KEY HIGHLIGHTS
এদিন সন্ধেয় এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল রাজভবনে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু… অনেক বিশিষ্টজনই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সন্ধে ৭.৪৭ মিনিটে রাজভবনে পৌঁছান মমতা। বেশ কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে রাত ৯ টা ৪১ মিনিটে রাজভবন থেকে বেরোন মুখ্যমন্ত্রী।
দ্রৌপদী মুর্মু বললেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে আদিবাসী মহিলাদের সঙ্গে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েছেন, যেভাবে তাঁদের সঙ্গে নেচেছেন, তা দেখে আমি খুব খুশি। প্রত্যেককে সমান সম্মান দেওয়া, প্রত্যেক সংস্কৃতিকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রয়েছে। সে জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বললেন, ‘সত্যজিৎ রায় ও উত্তম কুমারকে কে ভুলতে পারে? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ক্রিড়া প্রেমীদের মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছেন। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায় দেশের আধুনিক রাজনীতিতে অনস্বীকার্য অবদান রেখেছেন। সফলতার শিখরে পৌঁছে যাওয়ার পরও বঙ্গবাসী নিজেদের শিকড়কে কখনও ভোলেন না। এর জন্য বাংলাকে আমি সম্মান করি।’
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা ‘ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’র একটি পংক্তি ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি, সকল দেশের রানি সে যে আমার জন্মভূমি…’, এমনই মনে করেন দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতি বললেন, ‘বাংলা ভাষা আমার খুব মিষ্টি লাগে। এটি একটি মিষ্টি ভাষা। এই মিষ্টতা যখন আমার কানে আসে, আমার মনে হয় আমি নিজের গ্রামের আশপাশেই রয়েছি। এই ভাষার মিষ্টতা আমাকে আকর্ষিত করে।’
বাংলায় নিজের বক্তব্য শুরু করলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। বললেন, ‘বাংলার ভাইবোনদের জানাই আমার শুভেচ্ছা, নমস্কার, জোহার।’ এরপর হিন্দিতে বললেন, ‘আগামিকাল আমি বেলুড় মঠে যাব।’ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বন্দেমাতরম’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন-গণ-মণ’, নেতাজির ‘জয় হিন্দ’-এর কথা উঠে এল রাষ্ট্রপতির কথায়। বললেন, ‘দেশের গৌরব ও দেশের সম্মানের জন্য প্রাণ দেওয়ার ঘটনা বাংলার পরিচয়। মাত্র ১৮ বছর বয়সে দেশের জন্য ফাঁসিকাঠে উঠেছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি, হাসি হাসি পড়বে ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী… গানটির সঙ্গে প্রত্যেকটি বাচ্চা পরিচিত।’ রাষ্ট্রপতির ভাষণে উঠে এল মাতঙ্গিনী হাজরা, কল্পনা দত্তর মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামও।
মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘বাংলা মানে বাংলার মাটি, বাংলা মানে মা, বাংলা মানে মনুষ্যত্ব। আমি মহিলা মুখ্যমন্ত্রী নই, আমি একজন মানুষ। কারণ, মনুষ্যত্বই আমার প্রথম ও শেষ কাজ।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলা এখন একটা মডেল। বাংলাদেশ থেকে প্রতিনিধি দল এসেছে। ইউনেসকোর সম্মান পেয়েছে। কন্যাশ্রীতে রাষ্ট্রসংঘের থেকে সম্মানিত হয়েছে বাংলা।’ রাষ্ট্রপতির কাছে মমতার অনুরোধ, ‘ম্যাডাম, প্লিজ প্রত্যেক ভারতীয়র সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করুন।’
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ‘গোল্ডেন লেডি’ বলে সম্বোধন করে নিজের বক্তব্য শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতিকে প্রণাম ও নমস্কার জানিয়ে বললেন, ‘কেমন আছুন্তি?’
পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পীদের একটি মুখোশ স্মারক হিসেবে রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দেন শুভশ্রী।
বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও রাষ্ট্রপতিকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন।
রাষ্ট্রপতির হাতে মা দূর্গার একটি মূর্তি এবং বিশ্ব বাংলার প্রতিকৃতি সহ মেমেন্টো তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে নাগরিক সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলাদের সঙ্গে মঞ্চে নাচতেও দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে।
রাষ্ট্রপতি জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে এসে রবীন্দ্রনাথের জন্ম কক্ষ, প্রয়াণ কক্ষ ঘুরে দেখেন। তারপর বিচিত্রা ভবনে গিয়ে সেখানে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহার করা জিনিসগুলি খুঁটিয়ে দেখেন। সেগুলি কী করে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তা জানতে চান। রবীন্দ্রনাথের জিনিস দেখে তিনি মুগ্ধ বলেও জানান।ভিজিটার্স খাতায় লিখেছেন , তিনি খুবই খুশি হয়েছেন।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে তিনটি গ্যালারি পরিদর্শন করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, বীরবাহা হাঁসদা, শশী পাঁজা।
সকাল বারোটা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন রাষ্ট্রপতি। তাঁকে সেখানে অভ্যর্থনা জানান মেয়র তথা পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। সঙ্গে ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। ফিরহাদ বলেন, ” আমি ওঁকে বললাম, আমরা খুব আনন্দিত এবং উৎসাহিত। গোটা রাজ্য অপেক্ষা করছে আপনাকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য।”
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে সোজা রেসকোর্সের উদ্দেশে রওনা দেন রাষ্ট্রপতি। রেসকোর্সে তাঁকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে হলুদ ফুল দিয়ে বন্ধুত্বের বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে নেতাজি ভবনে যান তিনি। তারপর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িও যাবেন তিনি। সন্ধ্যায় নেতাজি ইন্ডোরে অনুষ্ঠানে যোগ। মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা থাকবেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে নেতাজি ইন্ডোরে ।
সোম ও মঙ্গলবার একাধিক কর্মসূচি রয়েছে রাষ্ট্রপতির। এই ২ দিন শহরের একাধিক রুটে যান নিয়ন্ত্রণ।
সোমবার দুপুর ১২ টা থেকে খিদিরপুর রোড, এজেসি বোস রোড, হসপিটাল রোড এবং এটিএম রোডে যান নিয়ন্ত্রণ। দুপুর ১ টা থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে গিরিশ পার্ক এবং এসপ্ল্যানেড মোড়, রবীন্দ্র সরণি থেকে সিআর অ্যাভিনিউ পর্যন্ত বিবেকানন্দ রোড, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে যান নিয়ন্ত্রণ।
মঙ্গলেও একাধিক রুটে যান নিয়ন্ত্রণ চরম যানজটের আশঙ্কা থাকছে। মঙ্গলবার সকালে প্রথমে বেলুর মঠে যাবেন রাষ্ট্রপতি। পরে যোগ দেবেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের ৮০ বছর পূর্ণ হওয়ায় উদযাপন অনুষ্ঠানে। সেখান থেকেই বিশ্বভারতীর উদ্দেশে রওনা দেবেন।
বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। শান্তিনিকেতনের বিনয় ভবন সংলগ্ন কুমিরডাঙা মাঠে হেলিপ্যাডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours