গত বছরের ২৭ জুলাই বেঙ্গালুরুর ভারথুর থানার পুলিশ কায়েন খাঁর ডেরায় হানা দেয়। সেখানে যাঁরা যাঁরা বাংলাভাষী ছিল তারা সবাই নাকি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, এমন সন্দেহে ভারথুর থানার পুলিশ পলাশের পরিবার-সহ আরও পাঁচ জনকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যায়।
Purba Bardhaman: বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি ছেলে-বউমা-নাতি, বাংলায় ফিরল বৃদ্ধের নিথর দেহ
জামালপুর : শ্রমিকের কাজ করতে বেঙ্গালুরু গিয়ে পড়েছিলেন বিপাকে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী (Bangladeshi Infiltrators) সন্দেহে ছেলে,বৌমা ও নাতিকে জেলে বন্দি করেছিল সে রাজ্যের পুলিশ। জেল থেকে তাঁদের মুক্ত করে করে বাংলার বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য আট মাস ধরে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন বাবা পঙ্কজ অধিকারী। আইনি লড়াই চালাতে গিয়ে হয়েছিলেন নিঃস্ব। শেষ পর্যন্ত আর নিতে পারেননি মানসিক চাপ। বেঙ্গালুরুতে গুরুতর অসুস্থও হয়ে পড়েন। ছেলে,বৌমা ও প্রিয় নাতিকে বেঙ্গালুরুর জেলে ফেলে রেখেই পঙ্কজ বাবু মঙ্গলবার বাংলায় নিজের বাড়িতে ফিরলেন ঠিকই। কিন্তু, জীবিত নয়, ফিরল তাঁর নিথর দেহ।
এখনও বেঙ্গালুরুর জেলে বন্দি রয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের পলাশ অধিকারী ও শুক্লা অধিকারী। জেলার জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তেলে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা তাঁরা।সেখানে রয়েছে তাঁদের টিনের চালার দু’কুঠুরি ভাঙাচোরা বাড়ি। কাজের খোঁজেই পলাশ স্ত্রী ও শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে গত বছরের জুন মাসে গিয়েছিলেন বেঙ্গালুরু। সঙ্গে যান বাবা পঙ্কজ অধিকারী এবং মা সবিতাদেবীও। দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা মজুরির বিনিময়ে বেঙ্গালুরুর কায়েন খানের অধীনে কাজ করা শুরু করেন তাঁরা। হোটেল, সিনেমা হল সহ বিভিন্ন জয়গা থেকে বোতল, প্লাস্টিক সরঞ্জাম এইসব বাছাই করাই ছিল তাঁদের প্রধান কাজ। এভাবেই কাটছিল দিন। কিন্তু, কিছুদিন সেখানে তাঁদের পরিণতি হয় ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে তাঁদের জেলবন্দি করে পুলিশ।
গত বছরের ২৭ জুলাই বেঙ্গালুরুর ভারথুর থানার পুলিশ কায়েন খাঁর ডেরায় হানা দেয়। সেখানে যাঁরা যাঁরা বাংলাভাষী ছিল তারা সবাই নাকি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, এমন সন্দেহে ভারথুর থানার পুলিশ পলাশের পরিবার-সহ আরও পাঁচ জনকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে যায়। ছেলে, বউমা ও নাতিকে ছাড়তে ছুটে যান বাবা পঙ্কজ অধিকারী। সঙ্গে যান তাঁর স্ত্রী সবিতাদেবীও। ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেন। জানান তাঁদের আসল পরিচয়। চলতে থাকে আইনি লড়াই।
Weather Update : নিম্নচাপের প্রভাবে চলতি সপ্তাহের শেষে শীতের আকাশে ঘনাবে মেঘ, বৃষ্টি কি হবে?
এরপর কিছুদিন আগে ভারথুর থানার পুলিশের তিন জন আধিকারিক জামালপুরে আসে। পলাশ অধিকারী ও তাঁর স্ত্রী প্রকৃতই ভারতীয় নাগরিক কিনা এবং তাদের ভোটার ও আধার কার্ডটি সঠিক কিনা সেইসব বিষয়ে বেঙ্গালুরু পুলিশ জামালপুরের বিডিওর কাছে জানতেও চান। এছাড়াও পলাশদের পারিবারিক পরিচিতি, কতদিন তাঁরা তেলে গ্রামে বসবাস করছেন সহ নানা বিষয়ে খোঁজখবর নেন।
দম্পতির ভারতীয় নাগরিকত্ত্ব সংক্রান্ত সব তথ্য ভারথুর থানার মেইল আইডিতেও চলে যায়। তবে ভারথুর থানার তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকরা শুধু জামালপুরের বিডিও অফিস ও থানায় তথ্য যাচাই করে ফিরে যান, এমনটা নয়। বেশ কয়েকদিন ধরে ওই পুলিশ আধিকারিকদের দল জামালপুরের দলিল রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি দফতরের অফিস, জৌগ্রাম পঞ্চায়েত এমনকি বর্ধমান দক্ষিন মহকুমা শাসকের অফিসে গিয়েও ওই দম্পতির নাগরিকত্ত্ব সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য যাচাই করে নিয়ে যান। পলাশ অধিকারীর আত্মীয় পিন্টু হাওলাদারের দাবি, এত সব কিছু মধ্যেও ছাড়া হয়নি পলাশদের। তাতেই আর মানসিক চাপ নিতে পারেননি বৃদ্ধ পঙ্কজ অধিকারী। অসুস্থ হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত হল এই পরিণতি।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours