বাগান কোচ জানেন, আইএসএল ট্রফিটা দিতে পারলে সবুজ-মেরুন জনতার নয়নের মণি হয়ে উঠবেন। কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পর জনজোয়ার দেখতে পাবেন। সমস্ত বিতর্ক, ক্ষোভ, বিক্ষোভ ভুলে আনন্দে সামিল হবে বাগান জনতা।

অনেকের অনেক রকম স্বপ্ন থাকে। কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেন বড় ফুটবলার হওয়ার। বিশেষত বার্সেলোনার মতো শহরে জন্মানো শিশুদের রক্তে মিশে থাকে ফুটবল। সেটাকে পাথেয় করেই কেউ কেউ এগিয়ে যায় অনেকটা দূর। আবার কেউ কেউ ধরে অন্য রুট। এটিকে মোহনবাগান কোচ হুয়ান ফেরান্দোর রক্তেও মিশে আছে ফুটবল। তবে বড় ফুটবলার নয়, কোচ হওয়ার ইচ্ছে-স্বপ্নতে পাড়ি দিয়েছিলেন ফেরান্দো। ছেলেবেলাতেই একের পর এক চোট-আঘাতে ফুটবল কেরিয়ারে ইতি টানতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে ফুটবল যাঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে আছে, সে কি এত সহজে ফুটবল ছাড়তে পারে? ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে তাই কোচিংকে বেছে নেন ফেরান্দো। খুব অল্প বয়সেই পরিণত বোধ দেখান। আর নিজের ইচ্ছেশক্তিকে কাজে লাগিয়েই মেলে সাফল্য। ২৮ বছর বয়সেই কাতালুনিয়ার একটি ক্লাবের যুব দলের কোচিংয়ে আসেন ফেরান্দো। বিভিন্ন দেশ ঘুরে ২০২০ সালে আসেন ভারতে। এফসি গোয়াতে কোচিং করাতে করাতেই এটিকে মোহনবাগানে চলে আসেন স্প্যানিশ কোচ। বিস্তারিত।


৪২ বছরের ফেরান্দো বেশ ঠাণ্ডা মাথার। সাংবাদিক সম্মেলনে চোখা চোখা প্রশ্নতেও কখনও মেজাজ হারান না। নিজের কোচিং আদর্শে বরাবর বিশ্বাসী। সদাহাস্যময় ফেরান্দো তাই পরিস্থিতি বেগতিক দেখলে সেটাকে শক্ত হাতেই ট্যাকেল করেন। মাঠে হোক বা মাঠের বাইরে, যে কোনও ক্ষেত্রেই নিজের ব্যক্তিত্বকে ধরে রাখেন। ঠাণ্ডা মাথাতেই লুকিয়ে থাকে বিপক্ষকে হারানোর রণকৌশল। মরসুমের শুরুতেই টিভি নাইন বাংলার প্রতিনিধির সামনে খোলামেলা আড্ডায় ফেরান্দোর একটা মন্তব্য তোলপাড় করে দিয়েছিল। বাগান কোচের সেই মন্তব্যে তল খুঁজে পেয়েছিলেন রিমুভ এটিকে দাবিতে আন্দোলনরত সমর্থকরা। ফেরান্দো বলেছিলেন, ‘আমি বার্সেলোনার সমর্থক। আমার ক্লাবের সঙ্গে কখনও এ রকম হলে আমিও হয়তো মেনে নিতে পারতাম না।’ স্প্যানিশ কোচের এই সহজ সরল মন্তব্যের পর তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল ময়দান। যদিও এই ইস্যুতে পরে আর কোনও মুখ খোলেননি ফেরান্দো। বুঝতে পেরেছিলেন বিষয়টা ভীষণ ভাবে স্পর্শকাতর।

এই ফেরান্দোকেই মরসুমের শুরু থেকে একের পর এক প্রশ্নে ফালাফালা হতে হয়েছে। এটিকে মোহনবাগান একের পর এক ম্যাচে গোল না পেলেই তাঁর কাছে রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামসদের ছেড়ে দেওয়ার কারণ বারবার জানতে চাওয়া হয়েছে। ডুরান্ড কাপে ব্যর্থ হওয়ার পর সমালোচনায় জর্জরিত হয়েছেন ফেরান্দো। এএফসি কাপের আন্তঃ আঞ্চলিক সেমিফাইনালে ঘরের মাঠে হারের পর তো প্রায় হলুদ কার্ড দেখে ফেলেছিলেন স্প্যানিশ কোচ। মরসুম শুরুতে বলেছিলেন আইএসএল শিল্ড জেতাই তাঁর পাখির চোখ। মাঝে টানা ব্যর্থতার পর ফেরান্দোর উপর আস্থা হারাতে থাকে ম্যানেজমেন্টও। আইএসএলের প্লে অফ ঘিরেও সবুজ-মেরুনের সংশয় তৈরি হয়। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফাইনালের মতো জায়গা। বাগান কোচ জানেন, ট্রফি না জিতলে আবারও তাঁর স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কাটাছেঁড়া হবে।


মেগা ফাইনালের আগে ফেরান্দো সাফ বলছেন, ‘৯০ মিনিটেই ম্যাচ শেষ করতে চাই আমরা। ফিরতি সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে খেলা গড়ালেও ফাইনালে নির্ধারিত সময়েই আমরা জিততে চাই।’ মুখে বলছেন, ‘বিপক্ষের কোনও এক ফুটবলার নয়, এগারো জনকেই আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’ বাগান কোচ জানেন, আইএসএল ট্রফিটা দিতে পারলে সবুজ-মেরুন জনতার নয়নের মণি হয়ে উঠবেন তিনি। কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পর জনজোয়ার দেখতে পাবেন। সমস্ত বিতর্ক, ক্ষোভ, বিক্ষোভ ভুলে আনন্দে সামিল হবে বাগান জনতা। বার্সেলোনায় যা পারেননি, সবুজ-মেরুনে সেই লাল-নীল রং ছড়িয়ে দিতে চান হুয়ান ফেরান্দো।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours