ছবি মুক্তি পেতেই দেখা গেল অন্য চিত্র। 'মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে' দেখতে হলে এলেন নামমাত্র দর্শক। এক মায়ের করুণ অধ্যায় অনেকের কাছেই যেন থেকে গেল অজানা।
ছবিটি নিয়ে দর্শকমহলে উন্মাদনা ছিল বেশ ভালই। সত্য ঘটনা অবলম্বনে ছবি, এক মায়ের সন্তানকে ফিরে পাওয়ার কাতর আর্তি… সব মিলিয়ে ট্রেলার দেখে দর্শকের তরফেও মিলেছিল ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া। তবে ছবি মুক্তি পেতেই দেখা গেল অন্য চিত্র। ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ দেখতে হলে এলেন নামমাত্র দর্শক। এক মায়ের করুণ অধ্যায় অনেকের কাছেই যেন থেকে গেল অজানা। ছবিটি মুক্তি পেয়েছে গতকাল অর্থাৎ শুক্রবার। কত আয় হয়েছে ওই ছবির প্রথম দিনে? রিপোর্ট জানাচ্ছে ওই ছবির আয় ১ কোটি ২৭ লক্ষ। আজকের বক্সঅফিসের বাজারে যা নিতান্তই সামান্য। এই ছবিতে মিসেস চ্যাটার্জির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রানি মুখোপাধ্যায়। আর মিস্টার চ্যাটার্জি হয়েছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য। প্রচারে রানিই ছিলেন মুখ। অনির্বাণকে দেখা যায়নি খুব একটা। কেন এই ছবি দেখতে হল ভরালেন না দর্শক? বলিউডের বাজার খারাপ এ তত্ত্ব অন্তত ‘পাঠান’-এর পর খাঁড়া করা যায় না। সমালোচকদের একাংশের মতে কাজের শেষ কষ্ট দেখতে এখন নাকি আর হলমুখো হন না দর্শক। তাই অ্যাকশন ছবিতেই মানুষের আগ্রহ বেশি। রয়েছে দ্বিতীয় এক কারণও। অনেকেই দাবি করেছেন, এই ছবি সত্য ঘটনা বলে দাবি করলেও সিনেমায় নাকি রয়েছে তথ্যগত অনেক ভুল। মায়ের মেলোড্রামাকে হাইলাইট করতে গিয়েই নাকি পরিচালক বহুক্ষেত্রে করেছেন অতিরঞ্জন। যদিও শনি-রবি ছুটির দিন। তাই এই দু’দিনে খানিক হলেও ব্যবসা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ট্রেড অ্যানালিস্টরা।
কোন সত্য ঘটনা অবলম্বনে এই ছবি?
২০১১, স্বামী ও দুই ছেলে মেয়ের সঙ্গে নরওয়েতে গিয়ে সংসার বেঁধেছিলেন বাংলার মেয়ে সাগরিকা ভট্টাচার্য। কিন্তু নরওইয়ের শিশুসুরক্ষা কমিশন যাকে বার্নেভার্নেও বলা হয়ে থাকে হঠাৎই একদিন ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাঁদের কোলের দুই শিশুকে। তখন তাঁদের ছেলে অভিজ্ঞানের বয়স মাত্র ৩। আর মেয়ে ঐশ্বর্যা তখন এক বছরের, দুধ খাওয়াও ছাড়েনি সে। কী অভিযোগ ছিল কর্তৃপক্ষের? ছবির ট্রেলারে যা দেখানো হয়েছে ঠিক তাই। বাচ্চাকে হাত দিয়ে খাইয়ে দিতেন মা সাগরিকা… ওদিকে নরওয়ে কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছিল, সন্তানকে হাত দিয়ে খাওয়ানো মানে তাকে জোর করে খাওয়ানো, একজন সুস্থ বাবা-মা নাকি এমনটা করতেই পারেন না। এখানেই শেষ নয়, তিন বছরের পুত্র সন্তান কেন তার বাবার সঙ্গে শোবে? কেন নেই তার আলাদা বিছানা– এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। অভিযোগ ছিল, বাচ্চাদের জন্য নাকি ঘরে খেলার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এমনকি মা-বাবা খেলার জন্য তাদের যে খেলনা কিনে দিয়েছে তাও নাকি ঠিক নয়। সাগরিকার থেকে সন্তান কেড়ে নিয়ে রাখা হয়েছিল সরকারি হেফাজতে। বিদেশ মুলুকে একা লড়াই করেছিলেন তিনি। অনেক টানাপড়েনের পর ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে ভারত সরকারও। তাও মন গলেনি নরওয়ে সরকারের। বাচ্চার বাবার ভাইয়ের অর্থাৎ কাকার কাছে দায়িত্ব ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। যদিও সেখানেও দেখা দেয় সমস্যা।
একে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা, অন্যদিকে স্বামী-স্ত্রীর নিত্য ঝগড়ায় ততদিনে অনুরূপ ও সাগরিকাও আলাদা হয়ে গিয়েছেন। নিজের সন্তানদের দায়িত্ব ফিরে পেতে মা’কে আইনি পদক্ষেপ করতে হয়। এরপর আদালত, আদালতের চৌহদ্দি, চোখের জল আর দীর্ঘ লড়াই শেষে অবশেষে জিৎ হয় সাগরিকার। ২০১৩ সালে প্রায় দুই বছর লড়াইয়ের পর কলকাতা হাইকোর্ট মা’কে তাঁর দুই সন্তানের দায়িত্ব দেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সাগরিকা। রাষ্ট্রের কাছে জয়ী হয় মায়ের মমতা, জয়ী হয় ভালবাসা, ভরসা, বিশ্বাস।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours