গোলাপ ছাড়া 'আমি তোমাকে ভালবাসি' বলা নিষিদ্ধ। এক সপ্তাহ ধরে চকোলেট, টেডি বিক্রি না হলেও রমরমিয়ে লাল গোলাপের ব্যবসা চলে।

সদ্য কেটেছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে। প্রেমের সপ্তাহও শেষ। তবু রেশটা রয়ে গিয়েছে। যতই হোক দিনক্ষণ দেখে তো আর প্রেম আসে না। তবে, প্রেমের দিনে অফিস থেকে ফেরার পথে একতোড়া গোলাপ নিয়ে গেলে মন ভাল হয়ে যায় স্ত্রী। টিউশনে সবার চোখ এড়িয়ে নোটসের ভাঁজে এক গোলাপ দিয়ে দিলে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে’তে সে-ই রাজা। প্রেমের দিনে টুকরো টুকরো ভালবাসার ছবি উঠে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আর রাস্তায় বেরোলে দেখা যায়, যুগলদের হাতে লাল গোলাপ। প্রেমের সপ্তাহে যে পরিমাণ গোলাপের কদর বাড়ে, তা বছরের অন্য কোনও সময়ে দেখা যায় না। তা-ই তো এ বছর কোটি টাকার ব্যবসা করল গোলাপচাষিরা।

প্রেমের মরশুমে চাহিদা বাড়ে ব্যাঙ্গালোর রোজ়ের। এক একটা গোলাপ বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। কর্ণাটকের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই গোলাপ আমদানি করা হয়। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, সর্বত্র লাল, হলুদ, গোলাপি রঙের ব্যাঙ্গালোর রোজ় বিক্রি হয়। সঙ্গীর মন জয় করতে কাঁটাবিহীন লম্বা ডাঁটার গোলাপই কিনতে হবে। কিন্তু পকেটে টান পড়লে তখন ভরসা দেশি গোলাপ। এ বছর এই দেশি গোলাপই বিক্রি করে ফুলচাষিদের লাভ হল এক কোটি টাকা।

বাংলায় সবচেয়ে বেশি দেশি গোলাপ চাষ হয়। মূলত দু’ধরনের গোলাপের দেখা মেলে এ রাজ্যের বাজারে। একটা ইটালিয়ান প্রজাতি এবং অন্যটি মিনিপল। বিয়ের মরশুমে এই ধরনের গোলাপের দাম বাড়ে। তবে, এমনি দিনে এই মিনিপল গোলাপ ৪-৫ টাকা পিসে বিক্রি হয়। কিন্তু প্রেমের সপ্তাহ শুরু হলেই চাহিদা বাড়ে এবং দাম ওঠে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত। এ বছরও তার ব্যতিক্রম দেখা গেল না। বরং, সাতদিনে রাজ্যের ফুলচাষিরা ১ কোটি টাকার লাল গোলাপ বিক্রি করেছেন।


রোজ় ডে দিয়ে প্রেমের সপ্তাহের শুরু। সুতরাং, গোলাপ ছাড়া ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বলা নিষিদ্ধ। এক সপ্তাহ ধরে চকোলেট, টেডি বিক্রি না হলেও রমরমিয়ে লাল গোলাপের ব্যবসা চলে। আর ভ্যালেন্টাইন্স ডে এলে লাল গোলাপের চাহিদা আরও বেড়ে যায়। চাহিদা পূরণ করতে আগে থেকেই চাষিরা হিমঘরে ফুল মজুত করে রাখেন। ৭ ফেব্রুয়ারি এলেই খোলা বাজারে বিকোতে থাকে লাল গোলাপ।

কলকাতা, হাওড়ায় একটা মিনিপল গোলাপের দাম কমপক্ষে ১৫ টাকা। পকেটে যতই টান থাকুক একতোড়া গোলাপ নিয়ে যেতেই হবে। জিপসি ফুলের সঙ্গে গোলাপের তোড়া বানাতে কমপক্ষে ১৫-২০ পিস গোলাপ প্রয়োজন। এখানে ৩০০ টাকা হয়ে যায় গোলাপের দাম। আর তোড়া সাজাতে আরও ১০-২০ টাকা নেন ফুলবিক্রেতারা। আবার শিলিগুড়ি, নিউ জলপাইগুড়ি এলাকায় এই মিনি গোলাপই বিক্রি হয়েছে ৩০টাকায়। তবে, ক্রাশকে তো সরাসরি লাল গোলাপ দেওয়া যায় না। বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে হলুদ কিংবা গোলাপি রঙের গোলাপই ভরসা। তবে এই গোলাপের দাম যে কম, তা নয়। বরং এ বছর নীল, সবুজ রঙের গোলাপও বিক্রি হয়েছে চড়া দামেই।

দেশি গোলাপের পাশাপাশি ব্যাঙ্গালোর রোজ়ও বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। যে প্রেমিকের পকেটের জোর বেশি তাঁরা ব্যাঙ্গালোর রোজ়ই কিনেছেন কাছের মানুষের জন্য। এ বছর ব্যাঙ্গালোর রোজ় বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকা দামে। ব্যাঙ্গালোরের ডাচ রোজ়ের চাহিদা পূরণ করতে এই ফুল কর্ণাটকের গোলাপ বাগান থেকে বিমানপথে নিয়ে আসা হয়েছে। সুতরাং, এর দাম তো বেশি হবেই। তাছাড়া এই গোলাপে কাঁটা নেই, মোটা ডাঁটা, জলে রাখলে দীর্ঘদিন তাজা থাকে। তবে, সুবাসের দিক দিয়ে দেশি গোলাপকে ডাচ রোজ় টেক্কা দিতে পারবে না। তাই বাংলার গোলাপ মুম্বই, দিল্লি, ওড়িশা, রাউরকেলা এমনকী বাংলাদেশেও রপ্তানি করা হয়েছে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours