বড় মনের মেয়ে ছিলেন ঐন্দ্রিলা। মুখ জুড়ে লেগে থাকত এক গাল হাসি। মানুষের যে কোনও বিপদে ঐন্দ্রিলাকে সবসময় পাশে পেতেন সকলে।

দশ দিন হয়ে গিয়েছে ঐন্দ্রিলা নেই। তাঁর স্মৃতি আঁকড়েই বাঁচার চেষ্টা করছেন তাঁর পরিবারের প্রিয়জনেরা। এবার ঐন্দ্রিলাকে শ্রদ্ধা জানাতে বিশেষ উদ্যোগ নিলেন বহরমপুরের মানুষেরা। আয়োজন করলেন তাঁর স্মৃতিতে এক রক্তদান শিবির। ঐন্দ্রিলাকে ভালবাসেন যারা, একজোট হয়ে তাঁরা রক্তদান করলেন। গোটা বিষয়টিতে অবশ্যই সম্মতি ছিল ঐন্দ্রিলার পরিবারের। শুধু যে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল এমনটা নয়, বহরমপুরের গান্ধী কলোনি এলাকার কিছু বাচ্চাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ফল, ডিম সেদ্ধ, মিষ্টি কেক, ইত্যাদিও। বহরমপুরেই ঐন্দ্রিলার বড় হয়ে ওঠা। সেখানেই কেটেছে তাঁর স্কুলজীবন। স্কুলে দিদি ঐশ্বর্য ছিলেন চিরকালের শান্ত, লেখাপড়ায় মনোযোগী। ঐন্দ্রিলা ছিলেন স্কুলের জান। দুষ্টুমিও করতেন তিনি। টিভিনাইন বাংলার কাছে এমনটাই জানিয়েছেন অভিনেত্রীর মা শিখা দেবী। তাঁর কথায়, “আমার বড় মেয়েটা পড়ুয়া। ছোটটা ছিল দস্যি। প্রায়দিনই স্কুল থেকে গার্ডিয়ান কল হত ঐন্দ্রিলার জন্য। মারামারিও করেছে। কিন্তু ওকে ছাড়া কিছুই সম্পূর্ণ হতে না স্কুলে। এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটিতে আমার ছোটটা ছিল চ্যাম্পিয়ন… নাচে, গানে, আবৃত্তিতে প্রথম… আজ সবই অতীত…”।

এখানেই কি শেষ? বড় মনের মেয়ে ছিলেন ঐন্দ্রিলা। মুখ জুড়ে লেগে থাকত এক গাল হাসি। মানুষের যে কোনও বিপদে ঐন্দ্রিলাকে সবসময় পাশে পেতেন সকলে। কারও বিপদ শুনলে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়তেন। শিখাদেবীর কথায়, “এমন একটা মেয়েকে ধরে রাখতে পারলাম না নিজের কাছে… একবার শীতকালে জানতে পারল কার-কার গায়ের শাল নেই। আমার প্রিয় শালটা নিয়ে গিয়ে একজনের গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিল। আমি একটু রাগ করে বলেছিলাম, ‘কী রে, আর শাল পেলি না, ওটাই তোকে দিয়ে দিতে হল?’ ওর বাবা বলেছিল, ‘কী হয়েছে তাতে… আর একটা কিনে নাও’, আসলে আমরাও ওকে বাধা দিতাম না কোনও কিছুতে।”

গত ২০ অক্টোবর প্রয়াত হন ঐন্দ্রিলা শর্মা। দু’বার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে জয়ী হয়ে ফিরলেও তৃতীয়বার আর পারেননি। ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে হয়েছিল বারংবার হৃদরোগও। ঐন্দ্রিলার স্মৃতিতে আজও ভারাক্রান্ত জনতার মন, এ ক্ষত যে ঠিক হওয়ার নয়।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours