টাকা মাটি, মাটি টাকা। আর সেই টাকা যদি নিয়োগ দুর্নীতির কাল টাকা হয়, তাহলে তো তার অবশ্যম্ভাবী গন্তব্য মাটিই।
রং মিস্ত্রি হিসেবে জীবন শুরু। আর এখন… সেই রং মিস্ত্রির পকেটেই কোটি কোটি টাকার জমি। তিনি প্রসন্ন রায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত। আপাতত সিবিআই হেফাজতে। তাঁর সম্পত্তির বহর দেখে চোখ কপালে উঠেছে গোয়েন্দাদেরও। কারণ পাঁচ বছরে ১ হাজার ৩৪ কাঠা জমিতে ২০০ কোটির বিনিয়োগ।

টাকা মাটি, মাটি টাকা। আর সেই টাকা যদি নিয়োগ দুর্নীতির কাল টাকা হয়, তাহলে তো তার অবশ্যম্ভাবী গন্তব্য মাটিই। মাটি, অর্থাত্‍ জমি। সূত্র বলছে, রাজারহাট-নিউটাউন সংলগ্ন এলাকায় কার্যত একচেটিয়া ‘জমি’দার এই পার্থ ঘনিষ্ঠ প্রসন্ন রায়। অন্য কারও সঙ্গে নয়, বছরের পর বছর জমি কেনায় যেন নিজের সঙ্গে নিজেই পাল্লা দিয়েছেন প্রসন্ন।

২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মোট ১৩৮টি জমি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন পেশায় রং মিস্ত্রি। কিন্তু তারপর থেকে জমি কেনা শুরু করেন। ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তৃণমূলের সঙ্গে। তৃণমূল নেতার ২০১৭ সালে তো জমি কেনায় সেঞ্চুরিই করে ফেলেন প্রসন্ন। রাজস্ব বিভাগে প্রসন্ন রায়ের নামে নথিভুক্ত হওয়া ১০৯টি ডিডের মধ্যে ১০৩টি শুধু জমিরই ডিড!

কোথায় কত জমি? ২০১৩: হিডকোর অ্যাকশন এরিয়া টু’তে ৮৩২.৮ বর্গফুটের ১টি ফ্ল্যাট

২০১৪: ধারসা মোক্তারপুর মৌজায় ১৯.৫ শতক জমি

২০১৫: কোচপুকুর মৌজায় ৬ কাঠা জমির মালিকানা

২০১৬: প্রসন্ন ওরফে রাকেশ রায়ের নামে রাজারহাটের বিভিন্ন অঞ্চলে ১ ডজন জমির রেজিস্ট্রেশন

২০১৭: হিডকো এলাকায় ৬টি ফ্ল্যাট, চকপাঁচুরিয়া মৌজায় ১৬ বিঘা জমি

২০১৭-র মধ্যে নিজেকে বড়সড় জমির কারবারি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন প্রসন্ন। এমনকি, চকপাঁচুরিয়া মৌজায় ১৬ বিঘা জমি কিনতে ৬৭ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ করতে দ্বিধা করেননি পার্থ ঘনিষ্ঠ প্রসন্ন।

শুধু চকপাঁচুরিয়া নয়, বামনঘাটা, পাথরঘাটা, গড়গড়ি, ধারসা, মহম্মদপুর মৌজাতেও হদিশ মিলেছে প্রসন্ন রায়ের নামে রেজিস্ট্রি হওয়া জমির। এক সময়ের চাষজমি, যাতে এখন শুধু গরু চড়ে!

শুধু জমির কারবারই নয়, ২০১৩ থেকে ২০১৮-র মধ্যে ১ ডজন ফ্ল্যাটও নিজের নামে রেজিস্ট্রি করিয়েছেন প্রসন্ন! এডিএসআর রাজারহাট, ভাঙর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন রেজিস্ট্রি অফিসে অন্তত ১০৩৪ কাঠা জমির মালিকানায় প্রসন্নর নাম।

নিউটাউন এলাকায় যে জমি কিনতে খরচ আনুমানিক ২০০ কোটি টাকা। এই তথ্য জানাচ্ছেন খোদ ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকরা। ২০১৮-য় ৪টি ফ্ল্যাট সহ ৩৭ জমির প্লটের রেজিস্ট্রি হয়েছে প্রসন্ন রায়ের নামে। এতদিনে অবশ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কার্যালয়ে প্রসন্ন রায় বেশ পরিচিত এক নাম।


Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours