রামায়ণে গল্পে দেবীর অকাল বোধনের কথা রয়েছে। সেই গল্প ছোটবেলায় ঠাকুরমার কাছে শুনেছিল নদিয়ার কলাইঘাটার ছোট্ট দেবায়ন। সেই থেকেই মনের মধ্যে ইচ্ছা জেগেছিল। বাড়িতে দুর্গাপুজো করার ইচ্ছা। সেই সুপ্ত ইচ্ছা মনের মধ্যে নিয়েই ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে দেবায়ন। মনের গোপনেই সেই ইচ্ছা সযত্নে লালিত পালিত হতে থাকে। যখন একটু বড় হয় দেবায়ন, তখন সেই ইচ্ছা আরও বাড়ে। কিন্তু পুজোর আয়োজন করব বললেই তো আর করা যায় না। সে তো অনেক খরচ! দেবায়নের মা তাঁতের কাজ করেন। আর বাবা সাগরে মাছ ধরতে যান। দারিদ্রের ছোঁয়া পরিবারে সর্বত্র। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর জোগাড়। কীভাবে হবে দুর্গা পুজোর আয়োজন? দুর্গা প্রতিমা কেনার টাকাও জোগাড় করতে পারেনি দেবায়নের পরিবার।
তাই বলে কি ছোট্টবেলা থেকে লালিত-পালিত করা সেই ইচ্ছা দমে যাবে? না, তেমন হতে দেয়নি দেবায়ন। নিজেই বাড়িতে দুর্গাপ্রতিমা বানাতে শুরু করে। যখন প্রথম প্রতিমা বানানো শুরু করে দেবায়ন, তখন সে পঞ্চম শ্রেণিতে। তখন থেকেই দুর্গা প্রতিমা বানানো শুরু। এখন আরও দুই বছর পেরিয়ে গিয়েছে। দেবায়ন এখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। এই বছরও দেবায়ন শুরু করেছে দুর্গা প্রতিমা বানানোর কাজ। দেবায়নের এই উদ্যোগে খুশি পরিবারের লোকেরাও। খুশি আশপাশের প্রতিবেশীরীও।
ছোটবেলা থেকেই মামার বাড়িতে মানুষ দেবায়ন। দারিদ্রের সংসার। কিন্তু ছোটবেলা থেকে দেবায়ন যে দুর্গাপুজো করার স্বপ্ন দেখা আসছে, তাতে সে অনঢ়। দেবায়নের ইচ্ছা, বাড়িতে দুর্গোৎসব হবে। ধুনুচি নাচ হবে। ঢাকের বাজনা বাজবে। সেই স্বপ্ন নিয়েই পঞ্চম শ্রেণি থেকে আজ সপ্তম শ্রেণিতে দেবায়ন। প্রায় তিন বছর ধরেই দারিদ্রকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেছে পুজো। দেবায়নের তৈরি সেই ঠাকুর দেখতে ভিড় জমান অনেক দর্শনার্থীও। আর তাতেই বেশ খুশি দেবায়ন। দেবায়নের এই প্রতিমা বানানোয় উৎসাহ দিতে কোনও খামতি রাখেন না পরিবারের লোকেরা। দেবায়নের এই কাজে খুশি প্রতিবেশীরাও। পুজোর ক’টা দিন বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের নিয়ে আনন্দে মেতে থাকে দেবায়ন বিশ্বাস।
দেবায়ন জানিয়েছে, এই পুজো করার জন্য তার খরচ হয় চার – পাঁচ হাজার টাকা। বাড়ির লোকেরাই এই টাকা দেয় দেবায়নকে। এছাড়া যাঁরা দেখতে আসেন, তাঁরাও খুশি হয়ে টাকা দেন। সেই দিয়েই হয় দেবায়নের পুজো।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours