চার বছর বয়সে পোলিও আক্রান্ত, বাবার মৃত্যু; সুধীরের ঐতিহাসিক সোনা জয় আটকাতে পারেনি কোনও বাধা

বৃহস্পতিবার মাঝরাতে আপনারা যখন ঘুমের দেশে তখন প্রায় নিঃশব্দে ইতিহাস গড়ে ফেললেন দেশের প্যারা পাওয়ারলিফটার সুধীর। এই ইভেন্টে দেশকে প্রথম কমনওয়েলথ গেমসে পদক এনে দিলেন হরিয়ানার ছেলে।

চমকের পর চমক। চলতি কমনওয়েলথ গেমসে দেশের অ্যাথলিটরা চমকে দিচ্ছেন। এই তালিকার সাম্প্রতিক সংযোজন সুধীর। হরিয়ানার সোনিপতের ছেলে সুধীর বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে প্যারা পাওয়ারলিফটিংয়ে গেমসে রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছেন। কমনওয়েলথে বৃহস্পতিবার দিনটা সুধীরের সোনালি ইতিহাস দিয়েই শেষ হয়েছে। দশটি পদক নিয়ে এবারের কমনওয়েলথ গেমস শেষ করেছেন দেশের ভারোত্তোলন দল। তার মধ্যে তিনটি সোনার পদক। এবার প্যারা পাওয়ারলিফটিংয়েও স্বর্ণপদক এল। এই ইভেন্টে দেশকে ঐতিহাসিক প্রথম পদক এনে দিলেন সুধীর। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তোয়াক্কা না করে তাঁর এই সাফল্যে কুর্নিশ জানাচ্ছে গোটা দেশ।

প্যারা পাওয়ারলিফটিংয়ে পয়েন্টের হিসেবে জেতা-হারা নির্ধারিত হয়। মোট তিনবার সুযোগ মেলে। ভার তোলা, শরীরের ওজন এবং টেকনিক অনুসারে পয়েন্ট দেওয়া হয়। শরীরের ওজনের থেকে ভার বেশি হলে সেক্ষেত্রে পয়েন্ট বেশি পাওয়া যায়। ৮৭.৩০ কেজির সুধীর প্রথম প্রয়াসে ২০৮ কিলো ওজন তোলেন। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় তোলেন ২১২ কিলো। এরইসঙ্গে গেমসে নয়া রেকর্ড গড়েন তিনি। তবে তৃতীয় প্রচেষ্টায় ২১৭ কিলো ওজন তুলতে পারেননি তিনি। ১৩৪.৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থেকে সোনা জিতে নেন ২৭ বছরের সুধীর ।

প্যারা পাওয়ারলিফটার অর্থাৎ শারীরিক সমস্যাকে জয় করে সাফল্য। কৃষক পরিবারের ছেলে সুধীরের সংগ্রাম শুরু হয়েছিল সেই চার বছর বয়স থেকে। একদিন কেঁপে জ্বর এলো। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে জানা গেল, সুধীর পোলিও আক্রান্ত। হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। ছোট থেকেই খেলাধুলোর প্রতি ভালোবাসা। তাই প্রতিবন্ধকতাকে মাথায় উঠতে না দিয়ে সেই ভালোবাসকেই আঁকড়ে ধরেছিলেন। হাট্টাগোট্টা চেহারার সুধীরের ভারোত্তোলের দিকে ঝোঁক ছিল। এদিকেই মনোনিবেশ করবেন বলে ঠিক করে নেন। ২০১৩ সালে শুরু ভারোত্তোলনে সুধীরের কেরিয়ার। ২০১৬ সালে প্রথম জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় সোনা জেতেন। আন্তর্জাতিক স্তরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ আসে ২০১৮ সালে। জাকার্তা প্যারা এশিয়ান গেমসে অভিষেকেই ব্রোঞ্জ পদক জিতে নেন। কেরিয়ারের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনেই বাবাকে হারান সুধীর। যুগপৎ আনন্দ ও দুঃখ ছুঁয়ে যায় ছেলেটিকে। মনে হয়েছিল থমকে গিয়েছে সবকিছু। চোখের জল মুছে ফের উঠে পড়েন। তাঁর স্বপ্ন যে অনেক দূর বিস্তৃত।

‘স্ট্রং ম্যান অব ইন্ডিয়া’। অ্যাথলেটিক মহলে এই নামে ডাকা হয় সুধীরকে। ২০১৮ সালে ১৭তম সিনিয়র এবং ১২তম জুনিয়র জাতীয় প্যারা পাওয়ারলিফটিং চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর এই তকমা পান তিনি।

সুধীরের সাফল্য

২০১৮ সালের বিশ্বকাপ (দুবাই) : রুপোর পদক

২০২২ সালের বিশ্ব প্যারা পাওয়ারলিফটিং এশিয়া ওশিয়ানিয়া ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ : ব্রোঞ্জ পদক

২০১৮ এশিয়ান প্যারা গেমস (জাকার্তা) : ব্রোঞ্জ পদক

ছয়বারের ন্যাশনাল গোল্ড মেডেলিস্ট (২০১৬-২০২২)