কাতারের আটটা স্টেডিয়ামে গরমের জন্য এসির ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে গরমের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সমস্ত রকম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে, যা যা কোনও গরম দেশে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তা কী কী?


নভেম্বর-ডিসেম্বরে কাতারে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ফুটবল বিশ্বকাপ (FIFA World Cup 2022) । এর আগে যা কখনও হয়নি। জুন-জুলাইয়েই সাধারণত বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়। নভেম্বরে বিশ্বকাপ (Qatar World Cup) হওয়ার প্রধান কারণ হল, জুন-জুলাইয়ে কাতারের প্রচণ্ড গরম। কাতার যখন ২০২২-এর বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায়, এই গরমের সঙ্গে লড়াইয়ের করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার প্রতিজ্ঞা করেছিল। যদিও তাদের এই প্রতিজ্ঞা উপেক্ষা করে ফিফা (FIFA) বিশ্বকাপের সময় পিছিয়ে নভেম্বর-ডিসেম্বরে করে দেয়। এই সময় কাতারে গরম কম থাকলেও, দুপুরের খেলাগুলোতের সময় তাপমাত্রা থাকবে ২৫ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যে স্টেডিয়ামগুলোয় হবে বিশ্বকাপের খেলা, তা পরেও ব্যবহার করা হবে। তাই গরম প্রতিরোধী ব্যবস্থাও তৈরি করা হয়েছে এখানে।

কাতারের আটটা স্টেডিয়ামে গরমের জন্য এসির ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে গরমের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সমস্ত রকম পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে, যা যা কোনও গরম দেশে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তা কী কী?

প্রথমত, এই স্টেডিয়ামগুলো পূর্ব-পশ্চিম অক্ষরেখা বরাবর এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে মাঠে সর্বোচ্চ পরিমাণ ছায়া পাওয়া যায়। দ্বিতীয়ত, রঙের ব্যবহার। বাইরে থেকে বেদুইনদের তাঁবুর মতো দেখতে আল-বায়েত স্টেডিয়াম। প্রথমে বাইরের অংশে কালো রং করার কথা ছিল। কিন্তু কালো রং তাপ শোষক হয় বলে এই স্টেডিয়ামের বাইরের রং সাদা করে দেওয়া হয়েছে। ফলে, মাঠের তাপমাত্রা গড়ে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গিয়েছে। তৃতীয়ত, স্টেডিয়ামগুলো এমন ভাবে তৈরি হয়েছে যাতে গরম খুব সহজে ভিতরে ঢুকতে না পারে। স্টেডিয়ামগুলোর বাইরের অংশ এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে তাপপ্রবাহ প্রতিফলিত করতে পারে। ফলে গরম হওয়া যাতে কোনও ভাবে ভিতরে ঢুকতে পারবে না। চতুর্থত, কাতারের বেশিরভাগ নতুন স্টেডিয়ামে ‘ফোল্ডেবেল’ ছাদ রয়েছে। ফলে তা খোলা হলে স্টেডিয়ামে ঠান্ডা হওয়া প্রবেশের ক্ষমতা অনেকখানি বেড়ে যাবে। ফলে মাঠ ঠান্ডা রাখতে প্রয়োজনীয় জল ও বিদ্যুতের খরচ কমবে।

গরম কমিয়ে স্টেডিয়াম ঠান্ডা রাখার এই সব কাতারি পদ্ধতি খুব একটা সন্তোষজনক নয়। ফলে মাঠে থাকছে বিশেষ বাতানুকুল যন্ত্রের ব্যবস্থাও। কিন্তু এই সব যন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ আসবে কোথা থেকে? খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের কথাই ধরা যাক। সেখানে স্টেডিয়ামের ছাদে সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা স্টেডিয়াম ঠান্ডা করতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রগুলো বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। যদিও ঠান্ডা রাখার বেশির ভাগ ব্যবস্থা অত্যাধুনিক, অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ এক ধরনের যন্ত্রের মাধ্যমে। যাকে বলা হয় ‘অ্যাবজর্বসন চিলার’। অর্থাৎ, গরম হাওয়া শুষে নেওয়ার মারাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র। এই যন্ত্র অনেকটা কুলারের মতো কাজ করে। জল ও সূর্যের তাপের মাধ্যমে এই যন্ত্র জলকে ঠান্ডা করে। এই ঠান্ডা জল বাতাসকে ঠান্ডা করে। ওই ঠান্ডা বাতাস আবার বড় বড় পাখার মাধ্যমে মাঠকে ঠান্ডা রাখে। এরই মধ্যে কাতার ফ্লুইড ডায়নামিক্স নিয়েও কাজ করেছে। যাতে হওয়া চলাচলের মাধ্যমে মাঠ ও মাঠে থাকা দর্শকদের সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা রাখা যায়। দর্শকদের অস্বস্তি যাতে সবচেয়ে কম হয়। ফলে গোটা মাঠকে ঠান্ডা রাখার থেকে দর্শকাসনকে ঠান্ডা রাখার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। ঠান্ডা বাতাস ধরে রাখতে পারে এমন পদার্থ দিয়ে দর্শকাশন তৈরি করা হয়েছে।
Share To:

kakdwip.com

Post A Comment:

0 comments so far,add yours